আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলনে গিয়ে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে। আইএলও-তে গেলে স্বাধীন দেশের সিনিয়র নাগরিক হিসেবে লজ্জা লাগে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৪ জুন) গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড বা পরিবেশবান্ধব কারখানা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা আইএলও-তে গিয়ে অসম্মানিত হওয়ার কথা নিজেই তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
আইএলও’র সম্মেলনে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, কয়েক মাসে আমি আইএলও-তে গিয়ে দুবার জবাবদিহিতার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার নিজেকে অত্যন্ত ছোট মনে হয়েছে। গিয়ে আমাকে একটা জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আমাদের শ্রমিকদের কি হচ্ছে, এটা হয়নি, ওটা হয়নি। আমি ভাবতাম আমি কিছু একটা। এখন দেখছি আমি কিছুই নই। যেভাবে আমাকে জেরা ইত্যাদি ইত্যাদি করছে। স্বাধীন দেশ হিসেবে কেন আমরা একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় গিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে অনুরোধ করতে হচ্ছে- ভাই, আমাকে একটু সময় দিন আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এটার কারণ একটি। বিশেষ করে শিল্পপতিরা যারা বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য হন, তাদের সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া। তারা এমপি হন, এরপর মন্ত্রী হবেন। যদি কোনো শিল্পপতি মন্ত্রী হন, তিনি তখন তার শিল্পটা কীভাবে বাঁচানো যায়, সেটি দেখেন। এই কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টটা (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। এই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণে তারা তাদেরটা দেখেছেন, শ্রমিকদের বিষয়গুলো দেখেননি। না দেখার কারণে বাংলাদেশ আজ ইন্টারন্যাশনাল ডকে দাঁড়িয়ে। আবার আমাকে ডেকে ডেকে বলতে হয়, ভাই আমরা এটা করেছি ওটা করেছি। একটা স্বাধীন দেশের সিনিয়র নাগরিক হিসেবে এটা আমার কাছে লজ্জা লাগে।
Advertisement
সাখাওয়াত আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, শ্রম আইনটা যতটুকু সংশোধন করে সম্ভব আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার, সেজন্য সবার সহযোগিতা চাই।
‘কিছু শিল্প উদ্যোক্তা ফ্যাশন করতে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রি করার চেষ্টা করছেন’তিনি বলেন, আজ আমরা যে গ্রিন ফ্যাক্টরির কথা বলছি, এই গ্রিন ফ্যাক্টরি হতো না যদি না সবাই একসঙ্গে কাজ না করতো। যারা গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে পেরেছেন তারা মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছেন। অনেককে আমি আগে থেকেই চিনি যারা শ্রমিককে সন্তানতুল্যভাবে দেখেন। এটা কিন্তু হওয়া দরকার আমাদের দেশে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রি করি, ইন্ডাস্ট্রি করার পর আবার দেখি আমার আর কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি আমি প্রতিনিয়ত এটা ফেস করছি। আমাকে কঠোরভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়।
আমার ফিলোসফি হচ্ছে আমি কাজ করবো কিন্তু দিনশেষে আমার ঘামের মজুরিটা আপনি যেন আমাকে দেন। এটা আমাদের ধর্মেও বলা আছে, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই আপনি তার মজুরিটা দেবেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু কিছু শিল্প উদ্যোক্তা ফ্যাশন করতে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রি করার চেষ্টা করছেন। ডে কান্ট রান ইট প্রপারলি। আমরা দেখছি অনেকে হাওয়ার ওপরে ছিলেন বা আনুকূল্যে ছিলেন। এখন সেগুলো বসে পড়ছে। এটা আমাদের জন্য সুখকর নয়। এটা আমাদের জন্য ভালো নিদর্শন নয়। বিশেষ করে আমরা যখন শিল্পায়িত হতে যাচ্ছি।
Advertisement
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, এটা শুধু একটা সম্মাননা নয়, এটা আমাদের দেশের শিল্পনীতির গভীরে প্রোথিত পরিবেশ সচেতনতা ও টেকসই উন্নয়নের মজবুত শিকড়ের প্রতিফলন। বাংলাদেশ আজ একটি নতুন পরিচয়ে আবির্ভূত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লিড সার্টিফাইড গ্রিন ফ্যাক্টরি থাকার গৌরব আমাদের। আমাদের দেশে বর্তমানে ২৪৮টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর মধ্যে ১০৫টি প্লাটিনাম, ১২৯টি গোল্ড সার্টিফাইড। আনন্দের বিষয় হচ্ছে যে, বিশ্বসেরা ১০টি লিড গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে নয়টি বাংলাদেশে। এটি আমাদের সবুজ অগ্রযাত্রার এক অনন্য কৃতিত্ব।
তিনি আরও বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় পরিবেশবান্ধব নিরাপদ কারখানা স্থাপনের বিভিন্ন নীতিগত সহায়তা ও মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রযুক্তি স্থানান্তর ও দক্ষতা উন্নয়নে জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের উচিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এমন সংস্কৃতি গড়ে তোলা যেখানে উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে থাকবে স্বচ্ছতা নিরাপত্তা ও পরিবেশ সচেতনতা।
আরএমএম/এমআইএইচএস/এমএস