লিওনেল মেসি, ফুটবলের কিংবদন্তি। আজ ২৪ জুন, ২০২৫- তার ৩৮তম জন্মদিন। ৩৮তম জন্মদিনটা তিনি খেলতে নেমেছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে নিজের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির হয়ে। প্রতিপক্ষ ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাস। জন্মদিনটাকে গোল কিংবা জয় দিয়ে রাঙাতে পারেননি। আবার তার দল হারেওনি। পালমেইরাসের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে তার দল ইন্টার মিয়ামি।
Advertisement
মেসির ৩৮তম জন্মদিনে তার অসাধারণ ক্যারিয়ারের ৩৮টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো। যদিও মেসির ক্যারিয়ারে অসংখ্য মাইলফলক রয়েছে। শুধুমাত্র ‘৩৮’ সংখ্যার মধ্যে এসব মাইলফলককে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে এখানে তার ক্লাব, জাতীয় দল এবং ব্যক্তিগত অর্জনের মিশ্রণে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো।
১. জন্ম (১৯৮৭): ২৪ জুন, আর্জেন্টিনার রোজারিওতে লিওনেল আন্দ্রেস মেসির জন্ম।
২. নিউয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগদান (১৯৯৫): ৮ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব নিউয়েল’স ওল্ড বয়েজের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু।
Advertisement
৩. বার্সেলোনায় যোগদান (২০০০): ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনার যুব একাডেমি ‘লা মাসিয়া’তে ভর্তি।
৪. বার্সেলোনা ‘সি’তে অভিষেক (২০০৩): মাত্র ১৬ বছর বয়সে বার্সার তৃতীয় সারির দলের হয়ে খেলেন প্রথম ম্যাচ।
৫. বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক (২০০৪): ১৭ অক্টোবর, ২০০৪ সালে এস্পানিওলের বিপক্ষে লা লিগায় প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি।
৬. প্রথম গোল (২০০৫): ২০০৫ সালের ১ মে, ঠিক ২০ বছর আগে আলবাসেতের বিপক্ষে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোল করেন মেসি।
Advertisement
৭. আন্তর্জাতিক অভিষেক (২০০৫): ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট, হাঙ্গেরির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন মেসি।
৮. অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জয় (২০০৫): আর্জেন্টিনার হয়ে ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে গোল্ডেন বল ও সেরা গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট জয় করেন।
৯. প্রথম আন্তর্জাতিক গোল (২০০৬): অভিষেকের ৬ ম্যাচ পর, ২০০৬ সালের ১ মার্চ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম গোল করেন।
১০. বিশ্বকাপে অভিষেক (২০০৬): ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে সার্বিয়া-মন্টিনিগ্রোর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই গোল করেন তিনি। হয়ে যান বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ আর্জেন্টাইন গোলদাতা। ওটা ছিল তার ক্যারিয়ারে ২য় আন্তর্জাতিক গোল।
১১. প্রথম এল ক্লাসিকো হ্যাটট্রিক (২০০৭): মাত্র ১৯ বছর বয়সে, এল ক্ল্যাসিকোয় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন তিনি।
১২. কোপা আমেরিকায় রানার-আপ (২০০৭): ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের কাছে হেরে রানরআপ হয় আর্জেন্টিনা। তবে ওই আসরে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন মেসি।
১৩. অলিম্পিক স্বর্ণপদক (২০০৮): ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ফুটবলের ফাইনালে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে স্বর্ণ জয় করে আর্জেন্টিনা। মেসি ছিলেন সেই দলের নেতৃত্বে। ২টি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট করেন সেবার তিনি।
১৪. প্রথম ব্যালন ডি’অর (২০০৯): ২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জয় করেন মেসি। হারান রোনালদো এবিং জাভিকে।
১৫. প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় (২০০৬): ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জমজমাট ফাইনালে থিয়েরি অঁরির আর্সেনালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বার্সেলোনা। মেসির প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় সেটি।
১৬. দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় (২০০৯): ২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেন মেসি এবং বার্সেলোনা।
১৭. প্রথম গোল্ডেন শু (২০১০): ২০১০ সালে প্রথম ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন।
১৮. স্প্যানিশ সুপার কাপ হ্যাটট্রিক (২০১০): ২০১০ সালে স্প্যানিশ সুপার কাপে সেভিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন তিনি।
১৯. গোড়ালির চোট (২০১০): মেসি খুব কম ইনজুরিতে পড়তেন। তবে ২০১০ সালে এসে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে একটি ট্যাকলে লিগামেন্ট মচকে যায় মেসির।
২০. টানা চার ব্যালন ডি’অর (২০০৯-২০১২): ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা চারটি ব্যালন ডি’অর জয় করেন মেসি।
২১. ২০১১-১২ মৌসুমে রেকর্ড গোল (২০১২): ২০১১-১২ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রেকর্ড ৭৩টি গোল করেন তিনি। যার মধ্যে লা লিগায় ছিল ৫০ গোল।
২২. ২০১২ সালে ৯১ গোল: শুধু এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলই নয়, ২০১২ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষেও সর্বোচ্চ গোলের বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি।
২৩. বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা (২০১২): ২০১২ সালে সিজার রদ্রিগেজের রেকর্ড ভেঙে ৯১টি গোল করেন মেসি। ৬৯টি ম্যাচ খেলে এই গোলগুলো করেন তিনি। এর মধ্যে ছিল ৯টি হ্যটট্রিকও। পাশাপাশি ছিল ২৪টি অ্যাসিস্ট।
২৪. তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় (২০১১): ২০১১ সালে এসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে জেতেন তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
২৫. ২০১৪ বিশ্বকাপে রানার-আপ: ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে হেরে রানারআপ হয় মেসির আর্জেন্টিনা। তবে টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে জেতেন গোল্ডেন বল।
২৬. লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা (২০১৪): লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে তেলমো জারার ২৫১ গোলের রেকর্ড ভাঙেন মেসি।
২৭. দ্বিতীয় ট্রেবল (২০১৫): বার্সেলোনার হয়ে দ্বিতীয়বার ট্রেবল তথা লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা দেল রে জয় করেন।
২৮. পঞ্চম ব্যালন ডি’অর (২০১৫): আগে জিতেছেন চারবার। এরপর ২০১৫ সালে রেকর্ড গড়ে জেতেন পঞ্চম ব্যালন ডি’অর।
২৯. বাতিস্তুতার রেকর্ড ভাঙা (২০১৬): আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন গ্যাবিয়েল বাতিস্তুতা। ৫৬টি গোল করেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে মেসি এই রেকর্ড ভাঙেন। এরপর বর্তমানে মেসির নামের পাশে রয়েছে ১১২ গোল।
৩০. কোপা আমেরিকা জয় (২০২১): ১৯৯৩ সালের পর আর্জেন্টিনাকে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা উপহার দেন মেসি। ২০২১ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে মেসিও জেতেন প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। হলেন সেরা খেলোয়াড়ও।
৩১. পিএসজিতে যোগদান (২০২১): ক্যারিয়ারের পুরোটাই প্রায় বার্সেলোনায় কাটালেন। তবে, ২০২১ সালে এসে বার্সা ছেড়ে ফ্রান্সে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। যোগ দেন বার্সেলোনায়।
৩২. সপ্তম ব্যালন ডি’অর (২০২১): লম্বা বিরতি দিয়ে ২০২১ সালে আবারও জেতেন ব্যালন ডি’অর। যেটা সপ্তম। যদিও এই ব্যালন ডি’অর জয় ছিল বিতর্কিত।
৩৩. বিশ্বকাপ জয় (২০২২): অবশেষে মেসির হাতে উঠলো বিশ্বকাপ শিরোপা। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে শ্বাসরূদ্ধকর লড়াই শেষে টাইব্রেকারের জয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। মেসি দ্বিতীয়বারের মত জেতেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল।
৩৪. ইন্টার মায়ামিতে যোগদান (২০২৩): পিএসজি এবং ইউরোপ ছেড়ে মেসি ২০২৩ সালে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল ইন্টার মিয়ামিতে।
৩৫. লিগস কাপ জয় (২০২৩): ইন্টার মায়ামির হয়ে প্রথম শিরোপা জেতেন মেসি।
৩৬. অষ্টম ব্যালন ডি’অর (২০২৩): আবারও ব্যালন ডি’অর উঠলো মেসির হাতে। অষ্টমবারের মত। যা ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
৩৭. দ্রুততম গোলের রেকর্ড (২০২৩): অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৯ সেকেন্ডে গোল করে হলেন দ্রুততম গোলদাতা।
৩৮. ক্লাব বিশ্বকাপে গোল (২০২৫): পোর্তোর বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে গোল করেন মেসি, ইন্টার মিয়ামির জয়।
বিশষ দ্রষ্টব্য: মেসির ক্যারিয়ারে আরও অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। যেমন ৬টি গোল্ডেন শু, ৪৪টি ট্রফি (ইতিহাসে সর্বোচ্চ) এবং ৩৮২টি অ্যাসিস্ট (ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ)। উপরের তালিকায় কিছু প্রধান মাইলফলক বাছাই করা হয়েছে।
আইএইচএস/