অর্থনীতি

অপ্রচলিত বাজারে বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি

অপ্রচলিত বাজারে বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়েছে। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে রাশিয়া, ইউএই, মালয়েশিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি কমেছে। নতুন বাজারে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন খাতের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছর ছিল ৬ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। এটি মোট রপ্তানির ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

বিশ্ব বাজারে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা ও ঐতিহ্যবাহী বাজারে স্থবির প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, অপ্রচলিত বাজারে এ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার বলে মনে করছেন শিল্প মালিকরা।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নতুন বাজারে প্রবেশ ও তাদের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ওপর। অপ্রচলিত বাজারে যে প্রবৃদ্ধির ধারা শুরু হয়েছে, সেটি আরও বেগবান করতে হলে কৌশলগত পরিকল্পনা, সরকারের সক্রিয় ভূমিকা ও উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী মানসিকতা একসঙ্গে কাজ করতে হবে।- মহিউদ্দিন রুবেল

Advertisement

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই শ্রেণিভুক্ত বাজারগুলোর মধ্যে তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, ভারতে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও জাপানে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

আরও পড়ুনবিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে কমেছে বাংলাদেশের হিস্যামার্কিন শুল্কে ‘ঝুঁকির শঙ্কা’, দ্রুত পদক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরাবাধা পেরিয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে, প্রত্যাশা ছুঁতে পারেনি প্রবৃদ্ধি

তবে রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি কমেছে, যা উদ্বেগের। রাশিয়ায় রপ্তানি ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, ইউএইতে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে ২৩২ মিলিয়ন ডলার এবং মালয়েশিয়ায় ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ১৮৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তবে এসব অঞ্চলে আবারও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যদি বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কম দামে পোশাক সরবরাহ করে এ বাজারে টিকে থাকা যাবে না। বরং উচ্চ মানসম্পন্ন ও নতুন ডিজাইনের পোশাক, টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী অথচ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া— এসবই হতে হবে ভবিষ্যতের মূল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নতুন বাজারে প্রবেশ এবং তাদের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ওপর। অপ্রচলিত বাজারে যে প্রবৃদ্ধির ধারা শুরু হয়েছে, সেটি আরও বেগবান করতে হলে কৌশলগত পরিকল্পনা, সরকারের সক্রিয় ভূমিকা ও উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী মানসিকতা একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অপ্রচলিত বাজারে প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ রপ্তানি খাতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।’

Advertisement

অগ্রগতি ধরে রাখতে আমাদের পণ্য উদ্ভাবন, বৈচিত্র্য ও চাহিদা অনুযায়ী বাজারভিত্তিক নতুন ডিজাইন এবং পণ্য উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া অপ্রচলিত দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণে এফটিএ বা পিটিএ চুক্তি করা যেতে পারে।-ফজলে শামীম এহসান

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘অগ্রগতি ধরে রাখতে আমাদের পণ্য উদ্ভাবন, বৈচিত্র্য ও চাহিদা অনুযায়ী বাজারভিত্তিক নতুন ডিজাইন এবং পণ্য উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া অপ্রচলিত দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণে এফটিএ বা পিটিএ চুক্তি করা যেতে পারে। বাংলাদেশি পোশাককে ‘গুণগত মান ও ন্যায্যমূল্যের প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরতে হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘যোগাযোগ ও সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে এশিয়া-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আরও কার্যকর সরবরাহ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন।’

জাতীয় রপ্তানির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের ৩৬ দশমিক ১৫ বিলিয়নের চেয়ে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছর ছিল ১৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।

আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম