ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর যুদ্ধ আরও ছাড়িয়ে পড়তে পারে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে গত রোববার দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়। তবে মার্কিন হমলার দুদিন পরেই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতির ঘোষণায় আসায় আতঙ্ক কেটে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এতে বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় অধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর আগ শনিবার রাতে ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই আতঙ্কে বিক্রির চাপ বাড়ান বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। ফলে দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরাপতন হয়। সাড়ে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৭৬ পয়েন্ট কমে যায়।
পরের কার্যদিবস সোমবার মূল্যসূচক বাড়লেও লেনদেন তিনশ কোটি টাকার নিচে থাকে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই গুঞ্জন ছড়াতে থাকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতিতে যাচ্ছে। ফলে এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে।
Advertisement
শেয়ারবাজারে লেনদেন চলাকালীন স্পষ্ট হয়ে যায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতিতে যাচ্ছে। ফলে লেনদেনের পুরো সময়জুড়েই দাম বাড়ার তালিকায় অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকে। ভালো, মন্দ সব খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় থাকায় সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৩৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৯২টির। এছাড়া ৭৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪৩টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৪৩টির দাম কমেছে এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
আরও পড়ুন ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে ২৫-২৬ জুন চলবে কলমবিরতি, ২৮ জুন থেকে কমপ্লিট শাটডাউনমাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৪৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে ২২টির দাম কমেছে। এছাড়া ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪৬টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭টির এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫টির এবং ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৭৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
Advertisement
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে ৩৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৭৬ কোটি ৫৩ টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৯৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হলো।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে লাভেলো আইসক্রিম। কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৬ লাখ টাকার। ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, অগ্নি সিস্টেম, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ব্র্যাক ব্যাংক, মুন্নু সিরামিক, রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড এবং ফাইন ফুডস।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৯৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৫টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এমএএস/কেএসআর/এএসএম