অর্থ সংকটে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার কারণ পর্যালোচনা (ডেথ রিভিউ) বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মো. হালিমুর রশীদ।
Advertisement
বুধবার (১৮ জুন) সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপ (২০২৪-২০২৫) প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
অধ্যাপক মো. হালিমুর রশীদ বলেন, আমি আসার পর ডেথ রিভিউ শুরু করেছিলাম। গত বছর যারা মারা গেছেন, তার মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ১২৪ জন রোগীর ফাইল নিয়ে একটা কমিটি করেছিলাম। কমিটি করে আমরা অনেকগুলো মিটিং করে মোটামুটি একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়েছিলাম যে কী কী কারণে মৃত্যু হচ্ছে। তো আর আমি আগাতে পারিনি। কারণ বুঝতে পারছেন, আমাকে যদি ৮-১০ জন লোকের একটা মিটিং করতে হয়, সেটা নিজের পকেট থেকে দিয়ে খুব বেশি কন্টিনিউ করা যায় না।
আইইডিসিআর মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জরিপের তথ্য তুলে ধরেন। এতে উঠে আসে, রাজধানী ঢাকার ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। গত বছর মে মাসে প্রকাশিত জরিপে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ। এক বছরে বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
Advertisement
আরও পড়ুন
একদিনে আরও ২১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত কুমিল্লায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, দুই ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণাজরিপে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ১৪৭টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ কর ৪৬৩ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে রাজধানীর ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে। এবার বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে, রাজধানী ঢাকার ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বহুতল ভবনে লার্ভা পাওয়া গেছে। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবন ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলাদ ভবন, আধাপাকা ভবনে ৮ দশমিক৮৮ শতাংশ, পরিত্যক্ত ভবনে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। লার্ভা জরিপে যে বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটি হলো লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ করা। এ ক্ষেত্রে স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। যদি এই ইনডেক্সের পরিমাণ ২০–এর বেশি হয়, তবে তা আশঙ্কাজনক বলে বিবেচিত হয়।
তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো- ১২, ২, ৮, ৩৪, ১৩, ২২ নং ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো- ৩১, ৪১, ৩, ৪৬, ৪৭, ৪, ২৩ নং ওয়ার্ড। ঢাকার মধ্যে এই জরিপ করা হয়েছে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। ঢাকার বাইরে ৮ জেলা জরিপ প্রকাশ করা হয়।
Advertisement
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগ্রাম প্রস্তুতি বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, চার জেলায় বেশি এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এই লার্ভা থেকে ডেঙ্গু মশা যেন তৈরি না হয় এজন্য এডিস মশা নিধন কর্মসূচি নিতে পারে সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার বিভাগ। কীটতত্ত্ববিদ ওষুধের পরিবর্তন আনতে পারেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সচেতনতার জায়গাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে বেশি মারা যাচ্ছে। রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে আমরা নতুন করে গাইডলাইন করে দিয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য ডেঙ্গুতে প্রাণহানিতে বাংলাদেশ শীর্ষে। মৃত্যু কমাতে হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেহেতু স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব তারপরও স্বাস্থ্য বিভাগের তাদের সঙ্গে সমন্বয় থাকা উচিত। তবে সবার আগে দরকার গণসচেতনতা।
ডা. মো. আবু জাফর বলেন, প্রকোপ শুরুর আগে থেকেই স্থানীয় সরকারকে ব্যবস্থা নিতে মূলত এসব জরিপ করা হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকারের কিছু দুর্বলতা আমরা দেখছি।
তিনি আরও বলেন, এ বছর ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে বিশেষ করে দক্ষিণের জেলা বরগুনায় প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। সেখানে গবেষণা জরিপ চলমান। ফল পেলে কেন এমন অবস্থা হচ্ছে জানা যাবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বাসাবাড়িতে বেশি পানি জমে রাখার আধিক্য এবং জেলাটিতে তুলনামূলক ডোবা-নালা বেশি হওয়ায় সংক্রমণের হার বেশি। সেখানে স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা প্রকট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, জরিপে যেসব জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে, সেসব জেলায় আগামীতে ডেঙ্গু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
এসইউজে/ইএ