দেশজুড়ে

মরা নদীতে জোয়ার ফিরতেই সেতুতে ধস, এলাকায় দুর্ভোগ

মরা নদীতে জোয়ার ফিরতেই সেতুতে ধস, এলাকায় দুর্ভোগ

সেতুটি যখন নির্মিত হয়েছিল তখন মরিচ্চাপ নদী ছিল মরা। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন করায় সেখানে আবার স্রোত ও জোয়ার-ভাটা ফিরে আসে। কিন্তু সেতুটির কাঠামো ততোটা মজবুত ছিল না। ফলে প্রবল স্রোতের ধাক্কায় ভেঙে পড়ে সেতুটি। এতে প্রায় ২০ দিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এল্লারচর সেতুটি ব্যবহার করেন। কিন্তু গত ১৮ মে রাতের কোনো এক সময় পুরোনো সেতুটির একটি অংশ হঠাৎ ধসে পড়ে। এরপর থেকেই ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের খুঁটি ও ভাঙা কাঠের পাটাতনের সাহায্যে পারাপার হচ্ছে নারী-শিশু, শিক্ষার্থী, চাষি ও শ্রমজীবী মানুষ।

এই সেতুটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন, পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড এবং দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়ন ও আশাশুনির শোভনালী ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র ভরসা। বাজার, স্কুল-কলেজ, স্বাস্থ্যসেবা ও নিত্যকার কাজকর্মে প্রতিদিনই সেতুটি ব্যবহার করতেন তারা।

সেতুটি ধসে পড়ায় কেবল সাধারণ মানুষের যাতায়াতই ব্যাহত হয়নি, ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক ও চিংড়ি চাষিরাও। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এখন ওপারের হাটে পণ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা, যাদের সবজি ও মাছ এখন পচে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।

Advertisement

নদীর ওপারের বাসিন্দা গৃহবধূ রোকসানা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর আমরা খুব কষ্টে আছি। ভ্যানে করে বাজারে যেতে পারছি না ঠিকমতো। বাচ্চাদের ডাক্তার দেখাতে হলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, যেকোনো সময় নদীতে তলিয়ে যাবে।’

এল্লারচর গ্রামের স্কুলছাত্র সজীব হোসেন জাগো নিউজকে জানায়, ‘আগে সেতু দিয়ে পার হয়ে সহজে স্কুল যেতাম। এখন সেতুর একপাশে ভেঙে গিয়ে উঁচু হয়ে গেছে। পার হতে খুব ভয় হয়।’

কলেজছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা বলেন, আমি প্রতিদিন কলেজে যাই এই সেতু দিয়ে। সেতু ভেঙে যাওয়ার পর খুব সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে সেতু পার হয়ে কলেজে যেতে হয়।

চিংড়িচাষি মো. খলিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমি নদীর ওপারে ঘেরে চিংড়ি চাষ করি। আগে সেতু দিয়ে ট্রলিতে মালামাল আনা-নেওয়া করতাম। এখন হেঁটে পার হতেও ভয় হয়। এখন সেতু ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি যেতে পারে না। অল্প অল্প করে পণ্য নিয়ে হেঁটে পার হতে হয়। এতে সময়, খরচ দুইটাই বাড়ছে।

Advertisement

স্থানীয় ইউপি সদস্য আরশাদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, এই সেতু নির্মিত হয়েছিল অনেক বছর আগে, যখন মরিচ্চাপ নদী ছিল মরা। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন করায় সেখানে আবার স্রোত ও জোয়ার-ভাটা ফিরে আসে। কিন্তু সেতুটির কাঠামো ততোটা মজবুত ছিল না। তাই প্রবল স্রোতের ধাক্কায় ভেঙে পড়ে এটি।

তিনি আরও বলেন, সেতুটি ধসে যাওয়ার কারণে এলাকার স্কুলগামী শিশুদের অনেক ঘুরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও অর্থ দুটিরই অপচয় বাড়িয়ে দিয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, ব্রিজটি পরিদর্শন করেছি। সেতুটি অনেক পুরোনো ও সংকীর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি নদীতে জোয়ার-ভাটার শক্তিশালী প্রবাহের কারণে সেতুর নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এটি ধসে পড়ে। আপাতত সেতুর পাশে ব্লক ফেলে অস্থায়ীভাবে চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, পুরো সেতু পুনর্নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে টেকসই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আহসানুর রহমান রাজীব/এফএ/এএসএম