প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলে তিনখানা সেঞ্চুরি আর একটি ৯০ রানের ইনিংস। আর দ্বিতীয় টেস্টে একটি ফিফটিও নেই। গলের বাংলাদেশকে মোটেও খুঁজে পাওয়া গেলো না কলম্বোয়। বাজে ব্যাটিংয়ের চরম মাশুল দিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
Advertisement
টাইগারদের এমন হতশ্রী ব্যাটিং আর করুণ পরিণতি দেখে সবাই হতাশ। কেউ কেউ ব্যাটারদের ওপর ক্ষুব্ধ। তাদের কথা ব্যাটারদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও বলগাহীন ব্যাটিংই ডুবিয়েছে টাইগারদের।
তবে বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন হতাশ নন। সাবেক এই নির্বাচক রীতিমতো আফসোসে পুড়ছেন। তার মনে হয়, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মাটিতে লঙ্কানদের টেস্ট হারানোর এক মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করলো। সুমনের অনুভব, কলম্বোর এই টেস্ট হতে পারতো বাংলাদেশের।
তাই তো বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের বর্তমান হেড অব অপারেশন্সের মুখে এমন কথা, ‘আমরা বলি না যে, আমরা মিস করি। আমার মনে হয় এই টেস্টে বাংলাদেশ অনেক বড় একটা মিস করলো।’
Advertisement
সেটা কেমন? বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমার মনে হয় কলম্বোর এই পিচে প্রথমেই বড় যে অ্যাডভান্টেজ ছিল, সেটা পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।’ কি সেটা? ‘এই পিচে আগে বা প্রথম ব্যাট করার সুযোগটা অনেক বড় সুযোগ। সেই সুযোগটা পেয়েছিল বাংলাদেশ; কিন্তু তারা কাজে লাগাতে পারেনি। আমরাদের উচিৎ ছিল প্রথম ইনিংসে ভাল ব্যাটিং করে বড়সড় স্কোর গড়া। আমরা যদি প্রথম ইনিংসে ভাল ব্যাটিং করতাম, তাহলে এই ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারতো।’
সুমন যোগ করেন, ‘আজকের উইকেটে খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, উইকেট পুরোপুরি স্পিনারদের হাতে। বিরাট বিরাট টার্ন করছিল উইকেটে। এই টেস্ট প্রথম দুইদিন উইকেট খুব ভাল ছিল। আমরা যদি প্রথম দুইদিন খুব ভাল ব্যাটিং করতাম এবং সেকেন্ড ইনিংসে যদি আমরা ২০০ রানের টার্গেটও দিতে পারতাম, আমি মনে করি বাংলাদেশের জেতার চান্স অনেক বেশি থাকতো। তাই বলছি, আমরা একটা বিগ বিগ চান্স মিস করেছি।’
‘আজকে যে বল ঘুরছে, কালকে আরও বেশি ঘুরতো। প্রথম দুইদিন উইকেট খুব ভাল ছিল। আমরা সে উইকেটকে কাজে লাগাতে পারিনি। যেটা লঙ্কানরা লাগিয়েছে। আমরা প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়ে যদি সেকেন্ড ইনিংসে দেড়শো, দুইশো রানও করতে পারতাম, আজকের উইকেট দেখে মনে হয় আমরা জিতে যেতাম।’
সুমনের ধারনা আগামীকাল শেষদিন উইকেট আরও স্পিন সহায়ক হতো। সেখানে স্পিনারদের দাপটে টেকাই যেত না। সেখানে দেড়শো রানের টার্গেট দিলেও করতে পারতো না লঙ্কানরা।
Advertisement
‘প্রথম দিন উইকেট খুব ভাল ছিল। সেকেন্ড ডেও উইকেট ভাল ছিল। আমরা সেই ভাল পিচের অ্যাডভান্টেজটা নিতে পারিনি। অনেক সময় হয়না যে, পরের দিকে এত বল টার্ন করে না। কিন্তু এ উইকেটে যে টার্ন দেখলাম, তাতে এ উইকেটে দেড়শো রান চেজ করতে পারতো না শ্রীলঙ্কা।’
উইকেট পরে বদলে যেতে পারে বা যাবে। প্রথম ২ দিনের পর ধীরে ধীরে স্পিনারদের পক্ষ নেবে। এটা বুঝতে না পারাকে রীতিমত দুঃখজনক মানছেন সুমন। তার কথা, আমরা যে এখনো উইকেটের চরিত্র ধরতে পারি না, প্রথম ইনিংসটা বড় করতে পারি না- এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের প্লেয়ারদের সবাই এক্সপেরিয়েন্স। নতুন প্লেয়ার কেউ না। সাদমানও ৩-৪ বছর হয়ে গেছে, খেলছে। শান্ত ও ৫ বছর ধরে খেলছে। আর ক’জন রীতিমতো ঝানু ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। বিজয় অনেক দিন ধরে খেলছে। নতুন ও অনভিজ্ঞ কেউই নেই। সবাই যথেষ্ট পরিমাণে টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। প্রথম ইনিংসের গুরুত্বটা যদি তারা এখনো না বোঝে, তাহলে আর কিইবা বলার আছে? আর আগে ব্যাট করার অ্যাডভান্টেজটা এরা কাজে লাগাতে না পারে তাহলে এমনই হবে।’
কেন বোঝে না? এর উত্তর দিতে গিয়ে ক্রিকেটারদের দুষলেন দেশের ক্রিকেটের এ নামি তারকা। বললেন, ‘সবাই ম্যাচিউর। নিজেকে নিজে তৈরি করতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে হেল্পিং হ্যান্ড থাকে। বাট নিজেদের নিজেকে হেল্প করতে হয়। আমরাও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলেছি। নিজেরা নিজেদের হেল্প করেছি।’
এআরবি/আইএইচএস