খেলাধুলা

বহুদিন পর প্রাণ ফিরে পেলো ঢাকা স্টেডিয়াম

বহুদিন পর প্রাণ ফিরে পেলো ঢাকা স্টেডিয়াম

খেলা শুরু হওয়ার কথা সন্ধ্যা ৭টায়। গেইট খোলা হলো তারও প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা আগে। টিকিটধারী দর্শকরা এসে লাইন ধরলেন প্রবেশ গেটে। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকলো গেইটে, কিন্তু ভিতরে দর্শক ঢুকতে পারার হার খুবই কম। টিকিট নিয়ে যে অব্যবস্থাপনা বিক্রির সময় হয়েছিলো, সেই একই অব্যবস্থাপনা দেখা গেলো স্টেডিয়ামের গেইটেও।

Advertisement

টিকিট চেকিংয়ে মন্থর গতি দর্শকদের উত্তেজিত করে তুললো। হামজা চৌধুরীর খেলা দেখতে এসে গেইটে দাঁড়িয়ে থেকে এত সময় ব্যায় করার কোনো মানে হয় না। উত্তেজিত দর্শকরা গেইটই ভেঙে ফেলে। ঠেলাঠেলিতে টিকিটধারী দর্শকের সঙ্গে টিকিটছাড়া দর্শকও অনেকে ঢুকে পড়ে উত্তর গ্যালারিতে।

এই যে দর্শকদের গেইট ভেঙে ফেলা, ঠেলাঠেলি, উত্তেজনা- সবই কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য সত্যিই ইতিবাচক একটা দিক। দেশের ফুটবল খেলা দেখার জন্য দর্শকদের এমন উন্মাদনা তো সবাই কামনা করে; কিন্তু এমন দৃশ্য তো সচরাচর দেখাই যায় না। কোনো কোনো সময় টিকিট ফ্রি করে দিলেও গ্যালারি খাঁ খাঁ করতে থাকে। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা আর দায়িত্বপালনকারী গণমাধ্যম কর্মীছাড়া মাঠে উপস্থিতিই থাকে না।

এবার চিত্রটা ভিন্ন। এবার বাংলাদেশের ফুটবলকে ঘিরে খেলাপ্রেমীদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে। আশি-নব্বইয়ের দশকে ফুটবল নিয়ে যে উম্মাদনা লক্ষ্য করা যেতো, তেমনটাই এখন দেখা যাচ্ছে। দর্শকরা উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল, ‘মাঠে প্রবেশ করতে হবে। হামজা-ফাহামিদুলদের খেলা দেখতে হবে।’

Advertisement

এমনিতেই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম ছিল দীর্ঘদিন ক্রীড়াবিমুখ। সংস্কারের নামে এই স্টেডিয়াম থেকে ফুটবলকে দূরে রাখা হয়েছিল পাক্কা ৫৫ বছর। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছিল এই মাঠে। এরপর আর এখানে ফুটবল গড়ায়নি।

এ সময়ের মধ্যে স্টেডিয়ামের ভেতর এবং বাইরে অনেক সংস্কার আনা হয়েছে। স্টেডিয়ামের ভেতর-বাইরের দৃশ্যের পরিবর্তন আনা হয়েছে। বসানো হয়েছে আধুনিক চেয়ার। সবকিছু করতে করতে কেটে গেছে ৫৫টি মাস।

অবশেষে উন্মুক্ত করা হলো ঢাকা স্টেডিয়ামকে। অবশেষে দেশের ক্রীড়া প্রাণকেন্দ্রে গড়ালো ফুটবল। এবং ইতিহাস সৃষ্টি করে। যে স্টেডিয়ামের গ্যালারি ফাঁকা পড়ে থাকতো, আজ সেই স্টেডিয়মে প্রবেশ করার জন্য দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। সমান্য বিলম্বও তারা সহ্য করতে রাজি নয়।

২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময় গ্যালারিতে এমন উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল। দর্শকরা প্রাণভরে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলো বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জানাতে। এরপর ২০০৯ সালে কাজী সালাউদ্দিনের কোটি টাকার সুপার কাপ দর্শক সাড়া ফেলেছিল। আবাহনী-মোহামেডান ফাইনালে দর্শক জায়গা দেয়া যায়নি মাঠে।

Advertisement

এরপর ২০১৭ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ঢাকা স্টেডিয়ামে কাতার এবং অস্ট্রেলিয়রা মত দল খেলতে এসেছিল। তখনও দর্শক উন্মাদন দেখা গিয়েছিল। যদিও সেই উন্মাদনা গ্যালারি পূর্ণ করতে পারেনি।

এবার স্টেডিয়াম সংস্কারের কারণে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে তা নয়। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে এই উন্মাদনা তৈরি হয়েছে হামজা দেওয়ান চৌধুরীকে ঘিরে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা এই ফুটবলারের বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে আসার পর থেকেই এ দেশের ফুটবলে দর্শক ও সমর্থন বাড়তে শুরু করেছে।

আর তিনি নিজে যখন ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলতে নামবেন, তখন দর্শকদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তৈরি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, হামজার সঙ্গে বাংলাদেশ দলে রয়েছেন আলোচিত ফাহামিদুল ইসলাম, শামিত সোমের মত ফুটবলাররাও। যদিও শামিত সোম আজ খেলেননি। তবে, মাঠে তার উপস্থিতি ভিন্ন মাত্রা ছড়িয়েছিল।

ঢাকা স্টেডিয়ামে আজ পূর্ণ গ্যালারি মূলত হামচা চৌধুরীদের কারণেই। এই ফুটবলারদের খেলা দেখতেই গ্যালারি ভরিয়ে দিয়েছিল দর্শকরা। যদিও সংস্কারের সময় চেয়ার বসানোর ফলে ৩২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা থেকে ঢাকা স্টেডিয়াম নেমে এসেছে ২২-২৩ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতায়।

একদিনে ফুটবলের উন্মাদনা বেড়েছে, অন্যদিকে আসন সংখ্যা কম। যে কারণে দর্শকদের মধ্যে এমন উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দর্শকদের ক্ষুদা মিটিয়ে দিয়েছেন হামজা চৌধুরী।

ম্যাচ শুরুর ৬ষ্ঠ মিনিটেই জামাল ভূঁইয়ার কর্ণারর কিক থেকে ভেসে আসা বলে দারুণ হেডে ভুটানের জালে গোল করে বসেন তিনি। দর্শকরাও যা দেখার জন্য মাঠে হাজির হয়েছিল, সেটা চোখভরে উপভোগ করলো। শেষে বোনাস হিসেবে ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২-০ গোলে জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে মাঠ ছাড়লো তারা।

আইএইচএস/