বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে প্রাধান্য পাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন ও ঐকমত্য। প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুত সময়ে নির্বাচন যেন পিছিয়ে যায় সেই চক্রান্ত চলছে বলে দাবি উঠেছে দলের মধ্যে থেকে। হঠাৎ করেই পিআর পদ্ধতিসহ কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনাও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
Advertisement
রোববার (২৯ জুন) দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে এসব বার্তা দিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ে নেতারা। উঠে এসেছে কুমিল্লার মুরাদ নগরের ধর্ষণের ঘটনায় বিএনপিকে দোষারোপ করার বিষয়ও।
সকালে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে রমনা থানা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বড় বড় সমাবেশ করে জাতির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবেন না। মোবাইল দিয়ে যদি প্রমাণ করা যায় কে কত জনপ্রিয়, আমরা সারা বাংলাদেশকে একদিনে সমাবেশের আওতায় আনতে পারি। কেউ কোনো জায়গায় ছাড়বে না। এটাতো সিস্টেম হলো না।
তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে পিছিয়ে দিয়ে জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। একেকজন একেকটা দাবি তুলে নির্বাচনকে পিছিয়ে, নির্বাচনের অবস্থা সর্বনাশ করে দিয়ে এ জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। পিআর পদ্ধতি কই থেকে আসে? দেশটাকে সুন্দর করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু করেন না, শুধু আপনার কথামতোই হতে হবে, স্থানীয় সরকার আগে হতে হবে, আবার পিআর ভোট করতে হবে। কেন ভাই? কই থেকে আবিষ্কার করেন এগুলো? কে দেয় বুদ্ধি আপনাদের? এই সমস্ত কু-পরামর্শ নিয়ে, এই দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য একদল লোক আজ মাঠে নেমেছে।
Advertisement
তবে নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে উপস্থিত থাকা এই শীর্ষ নেতা বিকেলে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ধর্ষণের মতো ঘটনার সমাধান না করে রাজনৈতিক ট্যাগ দেওয়া ভালো বিষয় নয়। আগামী দিনে নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার জন্য, নিজেদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য এ ধরনের ঘটনা সমাধান না করে রাজনীতিকরণের যে চেষ্টা চলছে, তা দুঃখজনক। এ বিষয়ে প্রশাসনের আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, মিথ্যাচারের মাধ্যমে মানুষের নজর ঘোরানোর সুযোগ নেই। যারা এই অপচেষ্টা করছে, তারা খুব একটা লাভবান হবে না। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন হবে না, এমন কোনো আলামত নেই। দ্বিমত থাকবেই, সবকিছুকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
নির্বাচনের আগে সংস্কারের অন্যতম আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সামনে আসছে জাতীয় ঐকমত্য। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারে তাহলে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য নিয়ে অন্য দলগুলোর মতানৈক্য আছে সেটা বিভিন্ন সময়ে স্পষ্ট হয়েছে। রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যেও সেটা অনুমেয়।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সব প্রস্তাব মানতে হবে এমন ধারণা থেকে বের হতে হবে। ঐকমত্য কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা ঠিক করতে হবে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেসব বিষয়ে সনদ হবে আর যেগুলোতে হবে না সেগুলো বাস্তবায়ন হবে না। ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সব প্রস্তাব মানতে হবে, সেই ধারণা থেকে বের হতে হবে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচনের দিনটার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। তাই যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে। এর সঙ্গে কোনো আপস নয়। যারা সকালে এক কথা, দুপুরে এক কথা আবার বিকেলে আরেক কথা বলছেন, তাদের বলবো- আসুন আমরা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। ত্রুটি-বিচ্যুতি যেগুলো থাকবে আমরা বসে সমাধান করি। আর মানুষ যাকে ভোট দেবে সেই দল সরকার গঠন করবে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করি।
আবার অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেবেন- এটি নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। তিনি শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ইউনূস সাহেব যেদিন ইলেকশন (নির্বাচন) দেবেন, সেদিন আমি বিশ্বাস করবো। আমার নেতা তারেক রহমান বিশ্বাস করছেন, আমিও করলাম। কিন্তু ভাবসাব দেখে মনে হয় না। ফেব্রুয়ারিতে যদি ইলেকশন হয়, ইউনূস সাহেব আপনাকে সালাম।
অন্যদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, মুরাদনগরে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীর শ্লীলতাহানি ও সহিংসতা মনুষ্যত্বহীন, অমানবিক, পাশবিক ও মহল বিশেষের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের অভিসন্ধি। আবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার আওয়ামী নোংরা কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। হাসিনার পতনের পরেও আমাদের চিরচেনা সেই সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে না এনে বরং বিনষ্ট করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। এদিকে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা অর্থবিত্তে সজ্জিত। নারী নির্যাতনসহ সহিংস সন্ত্রাসের গোপন অভিযান চালিয়ে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য তারা বিপজ্জনক গোপন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। তবে সত্যের জন্য, সম্মানের জন্য ও আত্মমর্যাদার জন্য ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাইকে দুষ্কৃতকারী পাষণ্ডদের প্রতিহত করতে হবে সুস্থ সমাজ ও নিরাপদ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য।
এমএইচএ/এএসএ/