দেশজুড়ে

বাস্তবায়ন নেই সরকারি নির্দেশনার, কয়েকগুণ বেশি হাসিল আদায়

বাস্তবায়ন নেই সরকারি নির্দেশনার, কয়েকগুণ বেশি হাসিল আদায়

পাবনায় শেষ মুহূর্তে চলছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। তবে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে হাট পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। ক্রেতা-বিক্রেতাকে জিম্মি করে কোনো কোনো হাটে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি হাসিল। এতে ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তেমন নজরদারি নেই প্রশাসনের।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জেলার গরুর হাটগুলোতে হাসিল আদায়ে বড় গরু ৬৫০ ও ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে মহিষ ৭৫০, বড় ছাগল ২৪০ ও ছোট ছাগল ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ নির্দেশনা মানছে না কোনো হাট পরিচালনা কমিটি।

মঙ্গলবার (৩ জুন) পাবনা শহরের হাজিরহাটে দেখা যায়, হাট শুরুর দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকার নির্ধারিত হাসিলের বাইরে হাসিল আদায় করা যাবে না বলে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে সেনাবাহিনীর আভিযানিক দল হাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার শুরু হয় অতিরিক্ত হাসিল আদায়। ৪৪০ টাকার বিপরীতে ছোট গরুতেই নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। একইভাবে বড় গরু ও ছাগলের ক্ষেত্রেও নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত হাসিলের অনেক বেশি।

হাটে গরুর বাছুর কিনতে আসা রহিমুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘পোষার জন্য একেবারে ছোট বাছুর কিনেছি। দাম ৫০ হাজারেরও কম। লেখাতে (রসিদ কাটা) গেলে ৬৫০ টাকা নিলো। অথচ সকালে প্রশাসনের সামনে নিজেরাই মাইকিং করলো ছোট গরু ৪৪০ টাকা। এখন প্রশাসন নেই, এজন্য আবার বেশি নিচ্ছে।’

Advertisement

সম্প্রতি সদর উপজেলার তাড়াবাড়িয়া মাদরাসা হাট, বেড়া সিঅ্যান্ডবি বেসরকারি বাজার ও আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত পশুর হাটসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, সরকারি নির্দেশনা মানছেন না কেইউ। উল্টো আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ হাসিল। তাড়াবাড়িয়া মাদরাসা হাটে ৬৫০ টাকার বিপরীতে বড় গরুতে ১২০০, ছোট গরুতে ৪৪০ টাকার বিপরীতে ১০০০ টাকা, ছাগলে ২৪০ টাকার বিপরীতে ৫০০-৬০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

নির্ধারিত হাসিলের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় নয়: ডিএমপি কমিশনার পশুহাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়, সাবেক বিএনপি নেতা গ্রেফতার পশুর হাটে বাড়তি হাসিল আদায়, সেনা অভিযানে টাকা ফেরত পেলেন ক্রেতারা মাংস সুস্বাদু, তাই বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বরিন্দা গরু

একইভাবে আটঘরিয়ার একদন্ত ও বেড়া সিঅ্যান্ডবি বেসরকারি বাজার হাটে গরুতে নেওয়া হচ্ছে ১০০০ টাকা। শুধু এ হাটগুলোতে নয়, জেলা শহরের হাজিরহাট, পুষ্পপাড়া হাট ও ঈশ্বরদীর অরণকোলাসহ জেলার বেশিরভাগ হাটেই এভাবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে প্রায় দ্বিগুণ হাসিল আদায় করা হচ্ছে।

এক লাখ ২০ হাজার টাকায় গরু কেনার পরের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তাড়াবাড়িয়া মাদরাসা হাটে আসা মেছের উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গরুর দাম দেড় লাখ টাকাও না। অথচ হাসিল নেওয়া হলো ১২০০ টাকা। আতাইকুলা থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসে রীতিমতো ডাকাতির শিকার হলাম।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে একটি রেট নাকি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর কোনো বালাই এই হাটে দেখলাম না। খাজনার (হাসিল) নামে যার থেকে যেভাবে পারছে টাকা লুটে নিচ্ছে।’

একই হাটে গরু কিনেছেন বুলবুল আহমেদ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘৪০ হাজার ৭০০ টাকা গরুর দাম। অথচ খাজনা দিতে হলো ১২০০ টাকা। শুধু আমরা ক্রেতারা দিচ্ছি তা নয়, বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ১০০, ২০০ বা ৩০০ যার থেকে যেমন পারছে নিচ্ছে।’

বেড়া সিঅ্যান্ডবি বেসরকারি বাজার হাটে গরু কিনতে আসা হাশেম, ফজর ও রানুসহ কয়েকজনের সঙ্গে হাটের শৃঙ্খলা ও হাসিল আদায় নিয়ে আলাপ হয়। এদের কেউ কেউ গরু কিনেছেনও। তারা বলেন, এক লাখের নিচে দামের গরুতেও ১০০০-১২০০ টাকা হাসিল দিতে হচ্ছে।

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান আটঘরিয়ার একদন্ত পশু হাট, ঈশ্বরদীর অরণকোলা ও সদরের পুষ্পপাড়াসহ অন্যান্য হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতারা। তারা জানান, কোনো হাটেই ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই। হাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকারা যে যার মতো হাট থেকে হাসিল আদায় করছেন। গরু-ছাগল সবকিছুতেই একইভাবে দ্বিগুণ টাকা লুটে নিচ্ছে।

হাসিল আদায়ের বিষয়ে তারাবাড়িয়া মাদরাসা হাটের ইজারাদার রইজ উদ্দিন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কোটি টাকা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে হাট ইজারা নিয়েছি। বেশি টাকা না নিলে হাটের টাকা উঠবে না। আর ঈদের সময় একটু বেশি নিতে হয়। সারাবছর তো নেওয়া হয় না।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার স্থায়ী ১৮ ও অস্থায়ী সাতটিসহ বৈধ মোট পশুহাটের সংখ্যা ২৫টি। এরমধ্যে সদরে চার, ঈশ্বরদীতে তিন, আটঘরিয়ায় দুই, চাটমোহরে দুই, ভাঙ্গুড়ায় এক, ফরিদপুরে এক, সাঁথিয়ায় পাঁচ, বেড়ায় তিন এবং সুজানগরে চারটি পশুহাট রয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএসএম মুশাররফ হোসেন বলেন, আমরা নিয়মিতই হাট-বাজারের খোঁজখবর রাখছি। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় হাটের শৃঙ্খলা রক্ষার কাজও চলছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে হাটগুলোতে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সুযোগ নেই।

এসআর/এমএস