দেশজুড়ে

১০ হাজার টাকা নিয়ে জখমি সনদ দিলেন চিকিৎসক

১০ হাজার টাকা নিয়ে জখমি সনদ দিলেন চিকিৎসক

জখমি সনদের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মিতুল ভৌমিকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এ ঘটনায় উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর মধ্যপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী রোগী আশরাফ আলীর ছেলে তানজিমুল ইসলাম সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাব-১২ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ওই চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেছেন।

ভুক্তভোগীর ছেলে তানজিমুল ইসলাম ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত ১৫ মে পূর্বশত্রুতার জেরে একই গ্রামের আলমগীর হোসেন, তার দুই ছেলে মনিরুল ইসলাম ও মারুফ হোসেন তার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে তার বাবার মাথার পেছনের অংশে প্রচুর রক্তক্ষরণ ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তিনি দ্রুত সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালের দায়িত্বরত জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মিতুল ভৌমিক তার বাবা গুরুতর আহত হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসা দিতে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেন। পরে ওই চিকিৎসক নগদ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তার বাবার মাথায় ৬টি সেলাই দেন। জখমি সনদ (গ্রিভিয়াস) বাবদ তার কাছে থেকে আরও ১৫ হাজার টাকা ঘুষ চান চিকিৎসক। পরে তাকে তিনি নগদ ১০ হাজার ৫০০ টাকা দেন। একইসঙ্গে পরিবারের পরামর্শে তার বাবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকায় ভর্তি করেন৷

পরবর্তীতে তার মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ আদালতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এরপর তারা জানতে পারেন ডা. মিতুল ভৌমিক বিবাদীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিমেয় তাদের সাধারণ (সিম্পল) সনদ দিয়েছেন। পরে তারা যোগাযোগ করলে চিকিৎসক জানান উপরের চাপ থাকায় তিনি ওই সনদ দিয়েছেন।

Advertisement

ভুক্তভোগী পরিবার ও তার স্বজনদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে প্রভাবশালী একটি চক্র গ্রিভিয়াস সনদ বাণিজ্য করছে। কিন্তু অজানা কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক জখমি সনদ প্রদান করাসহ অভিযুক্ত ডা. মিতুল ভৌমিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

হাসপাতালের মেডিকেল রেকর্ড সেন্টারের তথ্যানুসারে, গত ১ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ২৬৯টি জখমি সনদ প্রদান করেছেন চিকিৎসকরা। আর গত ছয় মাসে এ সনদ প্রদানের সংখ্যা প্রায় পাঁচশোর অধিক।

তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক মিতুল ভৌমিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, গ্রিভিয়াস সনদে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওই রোগীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়নি। যে কারণে ৩২৬ ধারার সনদ না দিয়ে সাধারণ (সিম্পল) সনদ প্রদান করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল আমীন ওই ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Advertisement

তিনি জাগো নিউজকে জানান, এ ঘটনায় হাসপাতালের ওই জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শিমুল তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, সিভিল সার্জনের নির্দেশে মিতুল ভৌমিককে জরুরি বিভাগ থেকে সরিয়ে মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়েছে। শুনেছি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে নাকি একজন অভিযোগ দিয়েছেন। তবে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি।

এফএ/এমএস