রংপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং জিএম কাদেরের বাসায় হামলার ঘটনায় উভয়পক্ষের এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে পুলিশ।
Advertisement
রোববার (১ জুন) রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান মামলা দুটি রেকর্ড হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, দুটি এজাহারই প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে এবং কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শুকুর আলীকে এর তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।
এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা, হত্যাচেষ্টা, মোটরসাইকেলে আগুন এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় শুক্রবার (৩০ মে) সন্ত্রাস দমন ও বিস্ফোরক আইনে এজাহার দায়ের করেছিলেন জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ আলী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইমরান হোসেন, মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি ও সাবেক মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারসহ ২২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনের নামে এজাহারটি দায়ের করা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন-
মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন: সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা জিএম কাদেরের বাসায় হামলা: থানায় পাল্টা অভিযোগ এনসিপি নেতার জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগঅপরদিকে মিছিলে হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে একই আইনে গত শনিবার (৩১ মে) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির, যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেনসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনের নামে থানায় এজাহার দায়ের করেন এনসিপির রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়ন।
এদিকে দুই পক্ষের মামলা রেকর্ড হলেও জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি এবং বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় রোববার রাতে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের উপস্থিতিতে রংপুর স্টেডিয়াম ক্যাম্পে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির পক্ষ থেকে মহানগরের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের সদস্যসচিব ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
এসময় ব্রিগেডিয়ার হুমায়ুন কাইয়ুম উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যারা রংপুরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে আমরা অভিযানে নেমেছিলাম। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনতে আমরা বিএনপি ও এনসিপির নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের সহকর্মী বা সহযোদ্ধা যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করেছেন এবং নিজে থেকে আইন তুলে নেওয়ার চেষ্টার মতো কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে তারা আর করবেন না বলে আশ্বস্ত করেছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, আমরাও আশা করবো যে, আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যে নিয়মের মধ্যে পড়ে সেভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কিছু নষ্ট করা, ভাঙচুর করা, মবের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টি করা- এসব আর শুধু রংপুর কেন, বাংলাদেশে কোথাও হওয়ার সুযোগ নেই। তখনই আপনি আমাকে কঠোর পাবেন, যখন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাবেন। সেটা যেন আমাকে করতে না হয়। আমিও চাই আপনাদের সঙ্গে সবসময় হাসিমুখে থাকতে।
আপাতত ফোকাস একটাই যে, রাজনীতির নামে, মবের নামে নাশকতার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রীতি ও শান্তির শহর রংপুর। আমরা যদি সবাই একমত হই তাহলে রংপুর নয়, সারাদেশে এমন কাজ হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। যারা মবের নামে নাশকতা করবে তাদের চিহ্নিত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এই সেনা কর্মকর্তা।
এর আগে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের ডেকে সহযোগিতা চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনাবাহিনী। খবর পেয়ে ওই সময় সেখানে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
এসময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, ‘শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে, ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।’
জিতু কবীর/এফএ/জেআইএম