অর্থনীতি

বিজিএমইএ সদস্যদের কল্যাণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবো

বিজিএমইএ সদস্যদের কল্যাণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবো

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্যদের কল্যাণ ও সব কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বিজিএমইএকে একটি ব্যবসা সম্প্রসারণের সহায়ক কেন্দ্রে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই আমার মূল অঙ্গীকার। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থাকবে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে।

Advertisement

নির্বাচনে জয়লাভ করলে শিল্পের জন্য তার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিজিএমইএ নির্বাচন ২০২৫-২৭ এর ফোরামের প্যানেল লিডার ও রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের বিশেষ প্রতিনিধি ইব্রাহীম হুসাইন অভি।

এই নির্বাচনে আপনাদের দলের প্রধান অগ্রাধিকার কী?

আমাদের মূল অগ্রাধিকার হলো একটি কার্যকর, সদস্যকেন্দ্রিক এবং জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়ে তোলা। বর্তমানে আমাদের যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সদস্য রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। বিজিএমইএ যেন একটি ‘সার্ভিস ওরিয়েন্টেড’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

আরও পড়ুনসমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান বের করতে কাজ করবে ফোরাম রুগ্ণ শিল্পের জন্য কার্যকর এক্সিট পলিসি প্রণয়নে কাজ করবে ফোরাম বিজিএমইএ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলো ফোরাম জোট রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬১৪ কোটি টাকা বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি, সম্ভাব্য করহার চালু থাকছে

আমরা এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই যেখানে দায়িত্ব পাওয়ার পর কেউ আর সদস্যদের ফোন এড়িয়ে যাবেন না। সদস্যদের পাশে থেকে, তাদের সমস্যার সমাধানে দ্রুত সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আমরা সংগঠনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।

Advertisement

সেবামুখী দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো সেবা টেকসই হতে পারে না। আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করব, যেখানে সদস্যরা যেকোনো আবেদন, অভিযোগ কিংবা তথ্য অনলাইনে জমা দিতে ও ট্র্যাক করতে পারবেন।

বাজেট, প্রকল্প, সিদ্ধান্তগ্রহণ—সবকিছুতে ‘ওপেন ডিসক্লোজার’ চালু করব। আমরা চাই, সব ধরনের সিদ্ধান্তে সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মতামতের প্রতিফলন থাকুক। বিজিএমইএ হবে সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য আপনার পরিকল্পনা কী? যারা সমস্যাগ্রস্ত তাদের জন্য কী ভাবছেন?

ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা পোশাকশিল্পের অন্যতম ভিত্তি। ফোরাম মনে করে, আজকের ছোট কারখানাগুলোই আগামী দিনের বড় শিল্পে পরিণত হবে। তাই তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা দরকার।

গার্মেন্টস খাতে সুযোগের দরজা কেবল বড় উদ্যোক্তাদের জন্য খোলা থাকবে, এটা আমরা চাই না। আমরা একটি ইনক্লুসিভ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাই, যেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও বায়ারদের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

৩৫ বছর পর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে বাস্তবভিত্তিক-জীবনঘনিষ্ঠ বাজেট চান সাধারণ মানুষ বাণিজ্য বৈষম্যের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতি অধিক মুনাফায় সর্বোচ্চ নিরাপদ যে বিনিয়োগ

যে সব শিল্পের মালিকরা অপ্রত্যাশিত বা অনিয়ন্ত্রিত কারণে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন বা হন তাদের অধিকার রক্ষায় এবং মালিকের জন্য একটি কার্যকর ও ন্যায্য এক্সিট পলিসি প্রণয়নে সরকারকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো।

কেন পোশাকশিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ের দরকার?

ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে, পোশাকশিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় থাকা জরুরি। বর্তমানে এই খাতের নীতি সহায়তার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়, যেখানে সময় ও গুরুত্ব পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে যেসব কারণে মার্কিন শুল্ক-ভারতের নিষেধাজ্ঞায় চাপে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত বছরের ব্যবধানে চা রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি ভারতে পণ্য রপ্তানিতে অতিরিক্ত কত পথ পাড়ি দিতে হবে? লুটের টাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় হবে: গভর্নর

ফোরামের প্রস্তাব—নতুন করে মন্ত্রণালয় গঠনের পরিবর্তে বর্তমান বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে ‘বস্ত্র ও পোশাকশিল্প মন্ত্রণালয়’ গঠন করা হোক, যাতে এই খাতের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়।

শ্রম অধিকার, নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ নিবেন?

৪৫ বছরের বেশি সময়ের এই খাত এখনো টেকসইভাবে গড়ে ওঠেনি। এর জন্য শ্রমিকদের অধিকার, কারখানার নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ফোরাম এসব ক্ষেত্রে সমন্বিত সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও কমপ্লায়েন্স সনদ চালুর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। শ্রমিক যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার পায়, সে জন্য আমরা আইনের বাস্তবায়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিব।

নতুন বাজার ও পণ্যের বহুমুখীকরণে আপনার পরিকল্পনা কী?

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকেন্দ্রিক। ফোরাম এই নির্ভরতা কমিয়ে নতুন বাজারে প্রবেশ এবং পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে চায়। বিশেষ করে কটনভিত্তিক পোশাকের পাশাপাশি ম্যান-মেইড ফাইবার ভিত্তিক পণ্যে মনোযোগ বাড়াতে চায় তারা।

শিল্পখাতের বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অবকাঠামোগত সংকট নিয়ে আপনারা কী পরিকল্পনা করছেন?

বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য। আমরা আলাদা সেল গঠন করব, যারা এসব সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানে ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন

দেশে নিবন্ধিত কারখানা-দোকান-প্রতিষ্ঠান সাড়ে ৯৪ হাজার খরচ বাড়বে ৫ গুণ, ভারতের বাজার হারানোর শঙ্কায় রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে বাংলাদেশের সময়-খরচ বাড়বে বড় ক্ষতি হবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে

সেক্টরের বিস্তৃতি যেভাবে বেড়েছে, তাতে শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাখলে পর্যাপ্ত মনোযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিও তুলে ধরব।

আইএইচও/এমএমএআর/জেআইএম