অর্থনীতি

এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করবো

এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করবো

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) একটি দেশের বৃহৎ শিল্পের প্রাণ। তৈরি পোশাক শিল্পকে আরও বড় করা, অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ও প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হবে। এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুকূল এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করবো।

Advertisement

নির্বাচনে জয়লাভ করলে শিল্পের জন্য তার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বিজিএমইএ নির্বাচন ২০২৫-২৭ এর সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার ও চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি ইব্রাহীম হুসাইন অভি।

আপনি বিজিএমইএর সভাপতি নির্বাচিত হলে কোন বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন?

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হচ্ছে একটা দেশের বৃহৎ শিল্পের প্রাণ। তৈরি পোশাক শিল্প আরও বড় করা এবং উন্নয়ন টেকসই করার জন্য আমার প্রথম কাজ হবে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যুগোপযোগী করে তোলা। ব্যবসায় তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও ক্রেতাদের সঙ্গে একটা সেতুবন্ধ তৈরি করা, যাতে তাদের কনফিডেন্স বাড়ে। তারা যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে সাহসিকতার সঙ্গে ব্যবসা করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি থেকে বড় হতে পারে।

একজন শ্রমিকের যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আইনে দেওয়া আছে তা নিশ্চিত করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের সামাজিক জীবনে ভালো অবস্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা নতুন করে পদক্ষেপ নেবো, যাতে তারা সমাজে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে মর্যাদা নিয়ে

Advertisement

আমরা যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তাহলে তারা সামনে এগিয়ে আসবে, তাদের ফ্যাক্টরি বড় হবে এবং রপ্তানি বাড়বে। একসময় তারা বড় শিল্পে পরিণত হবে। এতে দেশের কর্মসংস্থান ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অর্থনীতিতে আরও বাড়বে।

নির্বাচিত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার জন্য নীতিগত, আর্থিক ও কাঠামোগত সহায়তায় ‘এসএমই সাপোর্ট সেল’ চালু করবো। ভ্যাট, এইচএস কোড, অর্ডার বাতিল, বিলম্বিত পেমেন্ট ও চুক্তি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিরসনে সরকারের সঙ্গে কাজ করবো।

শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে ও জীবনমান উন্নয়নে কী করবেন?

শ্রমিক শিল্পের মূল চালিকাশক্তি ও প্রধান সম্পদ। এই সম্পদ আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। তাদের যুগোপযোগী করে তৈরি করতে হবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। নতুন যে ধরনের প্রযুক্তি আসবে তা যাতে তাদের কর্মচ্যুতি না করে। বরং তাদের প্রশিক্ষিত করে যেন কর্মোপযোগী করা যায় সেজন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করবো।

আরও পড়ুনবাণিজ্য বৈষম্যের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিমার্কিন শুল্ক-ভারতের নিষেধাজ্ঞায় চাপে পড়বে দেশের রপ্তানি খাতভারতে পণ্য রপ্তানি করতে বাংলাদেশের সময়-খরচ বাড়বে

একজন শ্রমিকের যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আইনে দেওয়া আছে তা নিশ্চিত করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের সামাজিক জীবনে ভালো অবস্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা নতুন করে পদক্ষেপ নেবো, যাতে তারা সমাজে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে মর্যাদা নিয়ে।

Advertisement

আঞ্চলিক বাণিজ্য সংস্থা-চেম্বারগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা স্মারক সই, এক্সপো ও সোর্সিং ফেয়ারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করবো। ইউরোপ-আমেরিকার অতিনির্ভরতা কমিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য ঝুঁকি কমাবো

একজন শ্রমিক তখনই সম্পদে পরিণত হয়, যখন সে তার প্রাপ্য সুবিধা পায় এবং শিল্পে তার অবদান মূল্যায়িত হয়। কারণ প্রাপ্য সুবিধা পেলে তার উৎপাদনশীলতা বাড়ে। শ্রমিক ছাড়া আমার শিল্পের কোনো দাম নেই। আমরা সব সময় শ্রমিকবান্ধব এবং শ্রমবান্ধব শিল্প গড়ে তুলতে কাজ করবো।

শিল্পের মালিকদের চাওয়া একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও সহজ শর্তে অল্প সুদে ঋণ। আপনি এ চাওয়া পূরণে কীভাবে কাজ করবেন?

যদি শিল্পের মালিকরা আমাকে ভোটের মাধ্যমে তাদের সেবা করার সুযোগ দেন, তাহলে আমি বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে একটি ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করবো, যাতে সদস্যরা ব্যবসা করে দেশের অর্থনীতিকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারেন।

করহার ও কর কাঠামো সহজীকরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অন্য অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করবো। পাশাপাশি ব্যাংকের সুদের হার ও ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সব জটিলতা রয়েছে তার সমাধান খুঁজে বের করবো।

জাতীয় রপ্তানিতে বর্তমানে আমাদের শিল্পের অবদান ৮৪ শতাংশ। আমরা এখন ৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করি। আমাদের লক্ষ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করা। সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে আমরা ব্যবসা উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে পারবো। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের গতি ত্বরান্বিত হবে। আমরা চাই মালিক-শ্রমিক সবাই মিলে দেশের অর্থনীতি আরও চাঙা করতে।

পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে আপনার পরিকল্পনা কী?

মার্কেট এক্সপ্যানশন ডেস্ক গঠন করে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় বাজার সম্প্রসারণ এবং ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ থাকবে।

আঞ্চলিক বাণিজ্য সংস্থা-চেম্বারগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা স্মারক সই, এক্সপো ও সোর্সিং ফেয়ারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করবো। ইউরোপ-আমেরিকার অতিনির্ভরতা কমিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য ঝুঁকি কমাবো।

সরকারের সঙ্গে কাজ করে আমরা বিকল্প নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করবো। ক্রেতা-সহযোগিতা ও খাতভিত্তিক সহায়তার মাধ্যমে সব ধরনের কারখানা—বিশেষ করে এসএমইকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে

বিদেশি মিশন ও প্রবাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন ক্রেতা সংযোগ, সিনথেটিক, ব্লেন্ড ও আউটারওয়্যার পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমদানি কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন পণ্যে প্রবেশ ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির বাজারে অবস্থান সুদৃঢ় করবে।

বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে প্রিমিয়াম পণ্যের প্রচারণা, ডিজাইনভিত্তিক প্রদর্শনী ও ভিজ্যুয়াল ব্র্যান্ডিং সাপোর্টে আমরা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ – প্রিমিয়াম অ্যাডিশন’ নামে একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করবো, যেখানে বাংলাদেশকে কেবল সস্তা উৎপাদনের দেশ নয়, বরং আধুনিক, টেকসই ও মূল্যনির্ভর সোর্সিং ডেস্টিনেশন হিসেবে পরিচিত করা হবে।

প্রিমিয়াম ক্রেতাদের জন্য কাস্টমাইজড কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার, সদস্যদের জন্য ব্র্যান্ড বিল্ডিং সাপোর্ট– ফটোশুট, ক্যাটালগ, ভার্চুয়াল শোরুম তৈরি, হাই-এন্ড নিটওয়্যার, আউটারওয়্যার ও সার্কুলার কালেকশন নিয়ে ডিজাইনভিত্তিক প্রদর্শনী করা হবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি ভাবমূর্তি ও বাজার অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রভাব মোকাবিলায় আপনার কৌশল কী হবে?

শুল্ক সুবিধা কমে যাওয়া ঠেকাতে স্মার্ট রাজস্ব নীতি ও প্রণোদনার মাধ্যমে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, মজুরি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের সঙ্গে কাজ করে আমরা বিকল্প নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করবো। ক্রেতা-সহযোগিতা ও খাতভিত্তিক সহায়তার মাধ্যমে সব ধরনের কারখানা—বিশেষ করে এসএমইকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে।

শিল্পের কমপ্লায়েন্স কীভাবে নিশ্চিত ও টেকসই করবেন? ক্রেতারা একেকজন আলাদাভাবে অডিট করে। ফলে মালিকদের ব্যয়ের সময় বেড়ে যায়। এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। আমরা এর সমাধানে ইউনিফায়েড কোড অব কন্ডাক্ট চালু করবো। বিভিন্ন ক্রেতা অডিট একত্র করে একটি একক নীতিমালা তৈরি করা হবে, যাতে এসএমই কারখানার কমপ্লায়েন্স সহজ হয়।

আমরা বিজিএমইএ অনুমোদিত একটি ‘ইউনিফায়েড কোড অব কন্ডাক্ট’ চালু করবো, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতা এবং অন্য অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রণয়ন করা হবে। এ উদ্যোগ বিশেষভাবে এসএমই কারখানার জন্য কমপ্লায়েন্স সহজ ও কার্যকর করে তুলবে।

আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম