অর্থনীতি

গ্যাস অনুসন্ধান-নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিতে হবে

গ্যাস অনুসন্ধান-নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিতে হবে

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি খাতে সংকট থাকলেও বিদ্যুৎ খাতে বাড়তি নজর দেওয়া হয়। ওই বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। আর জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সন্নিকটে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। আসন্ন বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কেমন হওয়া উচিত? গুরুত্ব আর প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে কোথায় কোথায় নজর দেওয়া প্রয়োজন— এসব নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাহিদ হাসান।

জাগো নিউজ: আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে প্রত্যাশা কেমন?

ড. ইজাজ হোসেন: যেহেতু একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে এবং এর পরই বাজেট হচ্ছে, অবশ্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ বাজেট। আমরা আগে যেসব সমস্যায় জর্জরিত ছিলাম সেগুলো কাটিয়ে ওঠার দারুণ একটা সুযোগ। যদিও এর মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেছে। কর আদায় ও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালো নয়।

Advertisement

সব সরকারই নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে মুখে অনেক কিছুই বলে। কিন্তু বাস্তবে কিছু করে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উৎসাহিত করতে হবে। যতটুকু বরাদ্দ দরকার সেই বরাদ্দটুকু দিতে হবে

সরকারের হাতে টাকা বেশি নেই। কতটুকু সুষম বণ্টন করতে পারে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা দেখেছি ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতে সাংঘাতিক রকমের ক্ষতি হয়ে গেছে। এই দুটি খাত দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। এই দুই খাত প্রাধান্য দিয়ে বাজেট করা উচিত- এটাই প্রথম কথা।

আরও পড়ুনক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ থাকা জরুরিরাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬১৪ কোটি টাকা বেশি কর আদায়ের লক্ষ্যএলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি, সম্ভাব্য করহার চালু থাকছেদ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

এনার্জি খাতে বিরাট একটা ভর্তুকি সরকারকে দিতে হবে। ভর্তুকি এবং ঋণ শোধ করার পরে খুব বেশি একটা টাকা থাকবে না। এই সেক্টরটা আর্জেন্টলি ঠিক করা দরকার। জ্বালানির ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও বিদ্যুতের জন্য গ্রিন এনার্জির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আমরা ধীরে ধীরে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।

জাগো নিউজ: গত বাজেটে দেখেছি জ্বালানিতে সংকট থাকলেও বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ড. ইজাজ হোসেন: প্রতি বছর বাজেটে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। বিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। তবে কোনোভাবেই অনুসন্ধান যেন পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের নিজস্ব অর্থে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম চলবে, এটি বড় বিষয়। এই বরাদ্দ নিষেধ করতে না পারলে সংকট সহজেই কাটবে না।

এলএনজি আমদানি ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো এনার্জি সোর্স নেই। আপাতত আমাদের আমদানি করতেই হবে। তবে, গ্যাস অনুসন্ধানে সফল হলে ভবিষ্যতে আমরা এলএনজি আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারবো

সব সরকারই নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে মুখে অনেক কিছুই বলে। কিন্তু বাস্তবে কিছু করে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উৎসাহিত করতে হবে। যতটুকু বরাদ্দ দরকার সেই বরাদ্দটুকু দিতে হবে।

জাগো নিউজ: দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে কতটা গুরুত্ব প্রয়োজন?

ড. ইজাজ হোসেন: গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ সফল করতে হবে। এজন্য যে পরিমাণ বাজেট দরকার তা বরাদ্দ দিতে হবে।

জাগো নিউজ: মনে হচ্ছে সরকার অনেক বেশি এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকছে। এটাই কি স্থায়ী সমাধান?

ড. ইজাজ হোসেন: এলএনজি আমদানি ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো এনার্জি সোর্স নেই। আপাতত আমাদের আমদানি করতেই হবে। তবে, গ্যাস অনুসন্ধানে সফল হলে ভবিষ্যতে আমরা এলএনজি আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারবো। কিন্তু তার আগে আমাদের অবশ্যই অনুসন্ধানে সফলতা অর্জন করতে হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উৎসাহিত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ট্যাক্স প্যানেল ও ইনভার্টারের ওপর বসিয়ে রেখেছে। এই অতিরিক্ত করের বোঝা অবশ্যই উঠিয়ে নিতে হবে

আরও বেশি কয়লা বা এলএনজি কেনার জন্য যদি বাড়তি বরাদ্দ রাখা যায় তাহলে এই সেক্টর স্মুথলি চলবে। যদিও আগের মতো পাওয়ার জেনারেশনের জন্য বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে না, তবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে সরকারকে টাকা দিতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ: গত বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আপনি নিজেও এই খাতকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করলেন। বাজেটে এই খাতে বিশেষ নির্দেশনার প্রয়োজন কতটুকু?

ড. ইজাজ হোসেন: সব সরকারই নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে মুখে অনেক কিছুই বলে। কিন্তু বাস্তবে কিছু করে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উৎসাহিত করতে হবে। যতটুকু বরাদ্দ দরকার সেই বরাদ্দটুকু দিতে হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ট্যাক্স প্যানেল ও ইনভার্টারের ওপর বসিয়ে রেখেছে। এই অতিরিক্ত করের বোঝা অবশ্যই উঠিয়ে নিতে হবে। সরকারি জমি সোলার প্রজেক্টের জন্য ব্যবহার করতে হবে। এনার্জি খাতে যদি ভর্তুকি দিতেই হয় তাহলে আমি বলবো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিতে। অনেকেই বড় বড় প্রজেক্ট করতে পারছে না তাদের প্রতি ইউনিটে অন্তত এক টাকাও যদি ভর্তুকি দেওয়া হয় তাহলে দেশের জন্য ভবিষ্যতে ভালো ফল আসবে।

এনএস/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম