বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া সংস্কার বাজেটে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। পাশাপাশি বাজেট হওয়া উচিত বাস্তবমুখী, সংস্কারভিত্তিক ও স্বচ্ছ।
Advertisement
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান এক সাক্ষাৎকারে জাগো নিউজকে এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি ইব্রাহীম হুসাইন অভি।
সরকার এবার একটি নতুন প্রেক্ষাপটে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে। বাজেটে কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত? বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, এ বছরের বাজেটে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সংস্কার, রাজস্ব আয়, ব্যয় ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং ও গুড গভর্ন্যান্স।
প্রথমত, সংস্কার। সরকার বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কার আনছে, বিশেষ করে এনবিআর বা রাজস্ব প্রশাসন, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা, ই-পেমেন্ট, ই-চালান ইত্যাদিতে। এসব সংস্কারের বিষয়ে বাজেটে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি।
Advertisement
দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা কীভাবে বাড়ানো যায়—এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস—সব ক্ষেত্রেই কর কাঠামোর যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস দরকার। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য যে করমুক্ত আয়ের সীমা আছে, সেটি গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতির কারণে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে—এটা পুনর্বিবেচনা দরকার।
আরও পড়ুন
গ্যাস অনুসন্ধান-নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিতে হবে নানামুখী চাপে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ থাকা জরুরি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬১৪ কোটি টাকা বেশি কর আদায়ের লক্ষ্যতৃতীয়ত, ব্যয় কাঠামো বাস্তবমুখী হওয়া উচিত। এডিপির বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানো, অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প নির্ধারণ ও নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ থাকা জরুরি। যেসব প্রকল্প চলমান, সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
ব্যয় কাঠামো বাস্তবমুখী হওয়া উচিত। এডিপির বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানো, অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প নির্ধারণ ও নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ থাকা জরুরি। যেসব প্রকল্প চলমান, সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে
Advertisement
চতুর্থত, গুড গভর্ন্যান্স ও মনিটরিং ব্যবস্থা। বাজেট বাস্তবায়নে জবাবদিহি ও ফলভিত্তিক মনিটরিং খুবই জরুরি। ‘রেজাল্টস বেজড মনিটরিং সিস্টেম’ চালুর কথা আগেই বলা হয়েছে, এবার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
বিনিয়োগ আকর্ষণে বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য শুধু কর নয়, সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশকেই সহায়ক করে তুলতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স হার না বাড়িয়ে কর ফাঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের হয়রানি যেন না হয়, সেজন্য কর প্রশাসন সংস্কার দরকার।
বাজেটে এমন কিছু রাখা যাবে না যা বিনিয়োগকারীদের চোখে অস্পষ্ট বা অনিরাপদ মনে হয়। বরং টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা, প্রযুক্তি ফান্ড তৈরি, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো দরকার।
ম্যাক্রো ইকোনমিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে—যেমন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার যৌক্তিক রাখা। তাহলে কস্ট অব ক্যাপিটাল কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সেবায় গতি আনতে হবে, যেন বিনিয়োগকারীরা হয়রানিমুক্তভাবে কাজ করতে পারেন। ব্যাংকখাতে তো এখনো নানান সংকট আছে। বাজেটে কি এর জন্যও কিছু করা দরকার?
অবশ্যই। গতবারের বাজেটে ঋণ পরিশোধ বাবদ খরচ ছিল সর্বোচ্চ এক লাখ কোটি টাকার মতো, যা প্রায় বাজেটের ১৪ শতাংশ। এটা বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
ব্যাংকখাতের সংস্কারগুলো যাতে বাস্তবায়নের পর্যায়ে যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। বাজেট ও ব্যাংকখাত সরাসরি যুক্ত না হলেও পরোক্ষভাবে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যদি বাজেটের উন্নয়ন ব্যয় সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে সরবরাহপক্ষীয় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি কমবে এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে।
ব্যাংকখাতের সংস্কারগুলো যাতে বাস্তবায়নের পর্যায়ে যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। বাজেট ও ব্যাংকখাত সরাসরি যুক্ত না হলেও পরোক্ষভাবে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে
ডেট সার্ভিসিং, ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা, ঋণ বিতরণে দক্ষতা—এসব কিছুতেই উন্নতি দরকার। তা না হলে অর্থনীতি গতি পাবে না।
এবারের বাজেট নিয়ে আপনার সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?
আমার মতে, এবারের বাজেট হওয়া উচিত বাস্তবমুখী, সংস্কারভিত্তিক ও স্বচ্ছ। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, ব্যয় পরিচালনা, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং ব্যাংকখাত সংস্কারে সমন্বিত পদক্ষেপ থাকলে এটি হবে একটি কার্যকর বাজেট।
আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/এমএস