ছোটবেলায় রাক্ষস-খোক্ষস, ভুত-পেত্নীর গল্প শুনে ভয় পেতাম আমরা সবাই। বড় হতে হতে উপলব্ধি হয় যে, এসব শুধুই গল্প, জীবনে সত্যিকারের ভয় তৈরি হয় বাস্তব পরিস্থিতি থেকেই। কেউ ভয় পান অনেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে, কেউ ভয় পান পানিতে নামতে, আবার কেউ বা ছোট্ট একটি ইনজেকশন দেখে যমের মতো ভয় পান। তবে প্রতিদিনের জীবনে এমন অনেক ভয়কে জয় করেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এভাবেই মানুষ হিসেবে আমাদের উন্নতি হয়।
Advertisement
১৯৩৩ সালে আজকের দিনে (২৭ মে) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট বলেছিলেন, ‘ভয় পাওয়ার মতো একমাত্র জিনিস হলো ভয় নিজে।’ এই বক্তব্যটিকে কেন্দ্র করেই ২৭ মে পালন করা হয় ‘নাথিং টু ফিয়ার ডে’ বা ভয়কে জয় করার দিবস।
ভয় মানুষের একটি স্বাভাবিক অনুভূতি, যুগ যুগ ধরে ভয় মানুষকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়িয়ে বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে। কিন্তু এ ভয় যখন অতিরিক্ত হয়ে যায় বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা আমাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই চলুন আজকের এই বিশেষ দিবসে জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিনের জীবনে ভয়ের বাধাগুলো অতিক্রম করে কীভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
১. ভয়কে স্বীকার করাকোনো বিষয়ে যদি আপনার মধ্যে ভয় কাজ করে, যা আপনার জীবনকে কঠিন করে তোলে, তাহলে এটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার আচরণে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এমনকি অন্যেরা আপনাকে ভুলও বুঝতে পারে। তাই প্রথমে নিজের কাছেই নিজের ভয়টি স্বীকার করুন। কেননা, আত্মোন্নয়ের যাত্রার প্রথম ধাপটি হলো নিজের সঙ্গে সততা।
Advertisement
দ্বিতীয় ধাপ হলো আপনার ভয়ের কারণ বোঝার চেষ্টা করা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে এর পেছনে কোনো কারণ নেই। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখবেন বড় কোনো ফোবিয়া ছাড়া অন্যান্য ভয়গুলোর পেছনে কারণ খুঁজে পাবেন। এমনকি ফোবিয়ারও চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
৩. নিজের সঙ্গে যুক্তি-যুদ্ধভয়ের কারণ বোঝার পর দিয়ে চিন্তা করুন। ভেবে দেখুন যে যৌক্তিকভাবে আদৌ কি এতো ভয় পাওয়ার কোনো কারণ আছে? আরও ভাবুন, আপনি ভয়ের যে কারণটি খুঁজে পেয়েছেন, তা কি আদৌ আপনার বর্তমান জীবনে এখনও উপস্থিত আছে? এভাবে ধাপে ধাপে যুক্তির সিড়ি বেয়ে এক সময় আপনি ভয়টির ঊর্ধ্বে উঠে যাবেন।
৪. তাড়াহুড়া নয়ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধের প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। কারও জন্য এটি অল্প সময়ের বিষয়, কারও জন্য কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ছোট পদক্ষেপ নিন। তাড়াহুড়া করবেন না। তবে হাল ছেড়ে দিবেন না।
৫. বিশেষজ্ঞদের পরামর্শএমন হতে পারে যে, অনেকদিন ধরে চেষ্টা করেও আপনার মনে হচ্ছে কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আপনি একা পারছেন না। সে ক্ষেত্রে কাউন্সেলর বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে মোটেও সংকোচ করবেন না। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ভয়কে এড়িয়ে না গিয়ে এর মুখোমুখি হওয়াই সবচেয়ে ভালো সমাধান। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হলে ভয় কমে যায়।
Advertisement
ভয়ের বিষয় নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করুন। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে বিষয়গুলো শেয়ার করুন। এভাবেই আপনি ধীরে ধীরে নিজের ভয়গুলো কে জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবেন।
এএমপি/এমএস