লাইফস্টাইল

নীরবতার শক্তি ব্যবহার করার ৫ উপায়

নীরবতার শক্তি ব্যবহার করার ৫ উপায়

নীরবতা কেবল শব্দের অনুপস্থিতি না। ক্ষেত্রবিশেষে এটি হতে পারে একটি কৌশল, একটি হাতিয়ার। এই শক্তিশালী কৌশলটি আপনার বিচক্ষণতা বাড়াতে, চরিত্রকে শক্তিশালী করতে এবং দৈনন্দিন বিশৃঙ্খলা থেকে আপনার শান্তিকে রক্ষা করতে সক্ষম। শুনতে অবাক লাগছে? কিন্তু ভেবে দেখুন আপনার জীবনেরও এমন মুহূর্ত নিশ্চয় এসেছে, যখন কথার চেয়ে নীরবতা বেশি জুতসই মনে হয়েছে।

Advertisement

তাই নীরবতাকে আপনার সুবিধায় ব্যবহার করার পাঁচটি উপায় জেনে নিন। এগুলো আয়ত্ত করলে আপনি আবিষ্কার করবেন যে পেশাগত ও সামাজিক জীবনে কম বলা অনেক সময় বেশি ফলাফল আনে।

১. সবার কাছে নিজেকে ব্যাখ্যা করবেন না

কেউ আপনাকে সমালোচনা করলে হয়তো আপনার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নিজের কাজকে ব্যাখ্যা করা, ন্যায্যতা প্রমাণ করা এবং নিজের অহং রক্ষা করা। রোমান দার্শনিক এপিকটেটাস বলেন, অভিযোগগুলোকে চ্যালেঞ্জ না করে যেতে দিন। নিজেকে ব্যাখ্যা না করার সিদ্ধান্ত আপনাকে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মসচেতন হিসেবে উপস্থাপন করবে।

যারা আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই গ্রহণ করুন। তবে কিছু মানুষ আছে যাদের কাজই অন্যের সমালোচনা করা। তারা মূলত মনোযোগ চায়। তবে আপনার নীরবতা ওইসব সমালোচকদের মনোযোগ দেয় না, তাই ধীরে ধীরে তারাও নিরুৎসাহিত হতে থাকে।

Advertisement

‘দুর্বল ব্যক্তি ত্রুটিগুলো লুকায় এবং গুণগুলো প্রদর্শন করে; জ্ঞানী ব্যক্তি ত্রুটিগুলো মেনে নেন এবং প্রকৃত গুণগুলোকে নিজে থেকেই প্রকাশিত হতে দেন।’ -  এপিকটেটাস

যখন আপনি নিজেকে নিখুঁত দেখানোর জন্য ছটফট করা বন্ধ করবেন, তখনই আপনি উন্নতির পথে হাঁটতে শুরু করবেন। তাই পরেরবার নিজেকে নিয়ে কোনো গুজব শুনলে এই কৌশলটি অনুশীলন করুন – হাসুন, চুপ থাকুন এবং দেখুন জ্বালানি ছাড়া আগুন বেশিক্ষণ জ্বলে না।

২. অভিযোগ করবেন না

রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস অভিযোগ নিয়ে মানুষের মনের ভেতরের কথোপকথন নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তার মতে, অসন্তোষ ও অভিযোগ অসহায়ত্বের চর্চা করে; এটি মানুষের মনকে সমাধানের বদলে সমস্যা খুঁজতে প্রশিক্ষণ দেয়।

এর থেকে বের হওয়ার একটি সরল পথ আছে। যখন কোনো বিষয়ে অসন্তোষ তৈরি হবে বা অভিযোগ করতে ইচ্ছা হবে, কথন নিজেকে প্রশ্ন করুন – আমি কি এখন এটা পাল্টাতে পারবো? যদি উত্তর হ্যা হয়, তাহলে অভিযোগ না করেই পাল্টে ফেলুন; আর ইত্তর যদি না হয়, তাহলে ওই বিষয়ে অভিযোগ করে লাভ নেই। বরং নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে সেটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এতে পরিবেশে নেতিবাচকতা কমবে। অভিযোগ আপনার ফোকাসকে এমন জায়গায় স্থির করে, যার আসলে অস্তিত্বই নেই। আর অভিযোগ না করলে, যা আছে তা আরও আলোকিত হয়, কৃতজ্ঞতা অনুভূতি হয়।

Advertisement

তাহলে কী আপনি পরিবর্তন চাইবেন না? অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবেন না? অবশ্যই চাইবেন। প্রত্যয়ের সঙ্গে কাজ করবেন সেসব বিষয়ে। যথাযথ স্থানে অভিযোগ করবেন। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট বিষয়ে অভিযোগ ও বিরক্তি প্রকাশ থেকে বিরত থাকুন।

কোনো অভিযোগ ছাড়া ২৪ ঘন্টার একটি চ্যালেঞ্জ শুরু করুন নিজের সঙ্গে। আপনি নিজেই লক্ষ্য করবেন যে, কতবার ছোট ছোট বিরক্তিগুলো আমাদের কথোপকথন দখল করে নেয় এবং এমন সময়ে নীরবতা কতটা উপকারী।

৩. ঘোষণা না করে অন্যদের উপলব্ধি করতে দিন

শব্দ যেকোনো কিছুর প্রতিশ্রুতি দিতে পারে; কিন্তু কর্ম প্রমাণ দেয়। যদি আপনি নীরবে পরিশ্রমী, বিনয়ী ও শৃঙ্খলার উদাহরণ হয়ে ওঠেন, তা নিঃসন্দেহে অন্যকে বক্তৃতার চেয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। কাজে, অভিপ্রায় ঘোষণা করার বদলে সময়ের আগে কাজ শেষ করুন। সম্পর্কে, বড় ঘোষণার বদলে ছোট ছোট সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের মাধ্যমে যত্নের উদাহরণ তৈরি করুন। আপনি যত কম ব্যাখ্যা দেবেন, আপনার চরিত্র তত স্পষ্ট হয়ে উঠবে। নীরবতা জীবনকে প্রমাণে পরিণত করে।

‘কীভাবে ভালো মানুষ হওয়া উচিত তা নিয়ে তর্ক না করে ভালো মানুষ হয়ে দেখান।’ -মার্কাস অরেলিয়াস

৪. প্রতিক্রিয়া নয়, সাড়া দিন

রোমান স্টেটসম্যান ও দার্শনিক ক্যাটো দ্য এল্ডার এমন ব্যক্তির প্রশংসা করেছিলেন যিনি সঠিক হওয়া সত্ত্বেও চুপ থাকতে পারতেন। প্রতিক্রিয়াশীলতা বা সব কথার উত্তর দেওয়ার প্রবণতা আপনার নিয়ন্ত্রণকে সামনের জনের হাতে তুলে দেয়। চিন্তাশীল সাড়া দিয়ে তা ফিরে পাওয়া সম্ভব। সামনের জনের কথা ও আপনার উত্তরের মধ্যে ছোট্ট একটি বিরতি তৈরি করুন। কেউ আপনাকে উত্তেজিত করার মতো কিছু বললে পাঁচ পর্যন্ত গণনা করুন, লম্বা শ্বাস নিন, আপনার কণ্ঠস্বর নামিয়ে আনুন। এই অল্প সময়টিই আপনার উত্তরের মধ্যে থেকে অহংকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। আপনি আক্রমণকারীদের ধৈর্য দিয়ে অবাক করে দিবেন, সংঘাত নিরসন করবেন এবং দীর্ঘমেয়াদী ভাল ফলাফলের দিকে লক্ষ্য স্থির লাখবেন।

৫. আপনার শব্দগুলো রক্ষা করুন

গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাস পরামর্শ দিয়েছিলেন শুধু তখনই কথা বলতে যখন শব্দ নীরবতার চেয়ে বেশি মূল্যবান হয়। অযথা গুজব, পরনিন্দা এবং তুচ্ছ তর্ক সময় এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। কথোপকথনকে মুদ্রার মতো বিবেচনা করুন, এটি এমন জায়গায় খরচ করুন যেখানে এর মূল্য আছে। কথা বলার আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন – এক, এটি কি সত্য; দুই, এটি কী সামনের জনের জীবনে সহায়ক কোন তথ্য; এবং তিন, কথাটি কি প্রয়োজনীয়? যদি এই তিনটির একটি উত্তরও না হয়, তাহলে চুপ থাকুন।

সূত্র: টাইমস্ অব ইন্ডিয়া

এএমপি/জিকেএস