লক্ষ্মীপুরে পড়ালেখায় অমনোযোগী অভিযোগে ৮ বছর বয়সী মাদরাসা ছাত্রকে শিক্ষকের বেত্রাঘাতের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
Advertisement
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের আলীপুর নূরানি হাফেজিয়া মাদরাসায় এ বেত্রাঘাতের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লেও দুয়েকদিন ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো. মাসুম নিজেই করিয়েছেন ভিডিওটি। ছড়িয়ে পড়া ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায় ২৩ সেকেন্ডে ওই ছাত্রকে ২১ বার বেত দিয়ে আঘাত করেন তিনি। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ওই শিক্ষক পলাতক রয়েছেন।
শনিবার (১৭ মে) দুপুর পর্যন্ত ওই শিক্ষকের সন্ধান দিতে পারেনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তার ব্যবহার করা মুঠোফোনে ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
Advertisement
অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুম সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের কালভার্ট এলাকার বাসিন্দা। ঘটনায় তাকে মাদরাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার দুয়েকদিন আগে ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষক মাসুম নিজেই ভিডিওটি করিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। এরপর থেকে ওই শিক্ষক মাদরাসায় আসছেন না। অমানবিক ঘটনা ঘটানোর কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে ছাত্রকে বেত্রাঘাতের ভিডিওটি নেটিজেনের মনে দাগ কেটেছে। আইনজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ভিডিওটি সংগ্রহ করে ফেসবুকে পোস্ট করে ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করেছেন। ভিডিওটি ভাইরালের দুইদিন আগে মঙ্গলবার (১৩ মে) লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের আল মুঈন একাডেমিতে ২০ পারা কোরআনে হাফেজ সানিম হোসাইনকে হত্যার অভিযোগ উঠে শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। একের পর এক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।
ভিডিওটি ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথম ২৩ সেকেন্ডেই শিশুটিকে ২১ বার বেত দিয়ে আঘাত করা হয়। পুরো ভিডিওটিতেই শিশুটি কানে ধরে ছিল। এসময় শিক্ষক শিশুটিকে মারতে মারতে কান ধরে ওঠবস করাতে বলেন। তাতেও থামেনি মারধর।
Advertisement
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে সমাধান করেছেন।এ কারণে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি। এভাবে বিচারহীনতায় ঘটনাগুলো অহরহ ঘটবে।
তবে এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার শিশুর পরিবারের বক্তব্য জানা যায়নি।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুমের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলফোন বন্ধ রয়েছে। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে দুজন শিক্ষক জানান, সোমবার (১২ মে) ঘটনাটি ঘটেছে। শিশুটি পড়ালেখায় অমনোযোগী থাকায় শিক্ষক মাসুম তাকে শাস্তি দিয়েছেন। মাসুম নিজেই অন্য এক শিক্ষার্থীকে দিয়ে ভিডিও করিয়েছেন। তবে কীভাবে ফেসবুকে তা ছড়িয়ে পড়েছে তা বলতে পারেনি কেউ।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আজমুল হুদা মিঠু বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে আমরা চাকরিচ্যুত করেছি। বেত্রাঘাতের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তিনি মাদরাসায় অনুপস্থিত।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই শিক্ষককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কাজল কায়েস/এমএন/জেআইএম