উদ্ভিদ আমাদের জীবনের মৌলিক ভিত্তি। আমরা যা খাই, যে বাতাসে নিঃশ্বাস নিই, তার প্রায় সবটাই উদ্ভিদনির্ভর। বিশ্বের ৮০ শতাংশ খাদ্য আসে উদ্ভিদের কাছ থেকে এবং আমাদের শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ৯৮ শতাংশই তৈরি হয় উদ্ভিদের মাধ্যমে। অথচ প্রতিবছর বৈশ্বিকভাবে প্রায় ৪০ শতাংশ ফসল উদ্ভিদের রোগ ও পোকামাকড়ের কারণে নষ্ট হয়। এ ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
Advertisement
এই ভয়াবহ ক্ষতির কথা মনে রেখেই ১২ মে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ স্বাস্থ্য দিবস। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই দিবসটি চালু করেছে। দিবসটির লক্ষ্য হলো উদ্ভিদ স্বাস্থ্য রক্ষার মাধ্যমে ক্ষুধা নির্মূল, দারিদ্র্য হ্রাস, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
২০২৫ সালের দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো, ‘ওয়ান হেলথে উদ্ভিদ স্বাস্থ্যের গুরুত্ব’। ওয়ান হেলথ মানে বুঝায় একক স্বাস্থ্য বা সবার স্বাস্থ্য। অর্থাৎ উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের স্বাস্থ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। একটির উপর আঘাত অপরটির ওপরও প্রভাব ফেলে। উদ্ভিদের রোগ খাদ্য ঘাটতি তৈরি করে, যা আবার পুষ্টিহীনতা ও দারিদ্র্যকে বাড়িয়ে তোলে। একইসঙ্গে এটি বন উজাড়, মাটি ও পানি দূষণ, এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের গতিও বাড়ায়।
বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে উদ্ভিদ স্বাস্থ্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ধান, গম, আলু কিংবা সবজি-সব ফসলই আজ নানা রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণে আক্রান্ত। বিশেষত ধানের ব্লাস্ট রোগ, আলুর লেট ব্লাইট, গমের রতুয়া রোগের মতো সমস্যা কৃষক এবং অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান উদ্ভিদ রোগ শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে কাজ করছে। কিন্তু এই প্রচেষ্টার পাশাপাশি দরকার মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানো।
Advertisement
এ বিষয়ে কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন জানান, আমাদের দেশে দিবসটি সম্পর্কে অনেকেই জানে না। এটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিবস। উদ্ভিদ আছে বলেই মানব সভ্যতা টিকে আছে। মানুষ যে কার্বনডাই অক্সাইড ত্যাগ করে তা উদ্ভিদ গ্রহণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন সেটিও উদ্ভিদ থেকেই আসে। সেই উদ্ভিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা খুবই জরুরি। কারণ বিভিন্ন রোগ, পোকা মাকড়ের আক্রমণ এবং মানব সৃষ্ট নানা কারণে উদ্ভিদের স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের শুধু কৃষক নয় সব মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। তাই আমাদের উচিত প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের নিয়ে দিবসটি পালন করা।
উদ্ভিদ স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আমাদের করণীয় অনেক। সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন তা হলো, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই চাষাবাদ। যেমন- জৈব চাষ এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা। এছাড়া বিদেশ থেকে গাছ বা বীজ আমদানির সময় প্রয়োজন কঠোর ফাইটোস্যানিটারি নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য মান পূরণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা, যাতে রোগ ছড়ানো রোধ করা যায়। পাশাপাশি স্কুল, গণমাধ্যম এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।
মনে রাখা উচিত, উদ্ভিদের স্বাস্থ্য রক্ষা শুধু কৃষকের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। কারণ, একটি সুস্থ গাছ মানে একটি নিরাপদ পরিবেশ, একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের টেবিল এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ। আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ স্বাস্থ্য দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক-গাছের প্রতি যত্নশীল হয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
Advertisement
আরও পড়ুন
গরমে এসি ছাড়াই ঘর রাখুন ঠান্ডা মাইক্রোচিটিং কি সম্পর্কের নতুন সমস্যাকেএসকে/এমএস