আইন-আদালত

জাতির বৃহৎ স্বার্থে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ কাঙ্ক্ষিত

জাতির বৃহৎ স্বার্থে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ কাঙ্ক্ষিত

‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫’–এর চারটি ধারার বৈধতা নিয়ে করা রিট পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ আদেশের অভিমতে আদালত বলেছেন, জাতির বৃহৎ স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫ কাঙ্ক্ষিত।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ–২০২৫ শিরোনামে অধ্যাদেশ গত ২১ জানুয়ারি গেজেট আকারে জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।

অধ্যাদেশের ৩, ৪, ৬ ও ৯ ধারার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আজমল হোসেন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রিট করেন। শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৮ এপ্রিল পর্যবেক্ষণসহ রিট নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন। পূর্ণাঙ্গ আদেশ বৃহস্পতিবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

Advertisement

পূর্ণাঙ্গ আদেশের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন জানিয়ে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. আজমল হোসেন বলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে সংবিধানের স্কিম প্রকৃতভাবে কার্যকরে কিছু ত্রুটি বা ফাঁকফোকর দেখা গেছে বলে আদেশে এসেছে। পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, এ ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের নিয়োগে সবসময় যোগ্যতা প্রাধান্য পায়নি এবং রাজনৈতিক বা অন্যান্য কারণে হাইকোর্টে অনেক অসন্তোষজনক নিয়োগ হয়েছে; যার ফলে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়নি, যা দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে।

রাষ্ট্রপতি বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব বা যে কোনো রাজনৈতিক বা দলীয় বিবেচনার প্রভাব দূর করার লক্ষ্যে বর্তমান ব্যবস্থায় ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন।

অধ্যাদেশের চারটি ধারা নিয়ে ওই রিটটি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩ ধারায় কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা, ৪ ধারায় কাউন্সিল সচিব, ৬ ধারায় কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলি এবং ৯ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগবিষয়ক সুপারিশ সম্পর্কে বলা রয়েছে।

Advertisement

সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করবেন। ৯৫(১) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, সে অনুযায়ী অধ্যাদেশের অধীন ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়নমেন্ট কাউন্সিল’ নামে একটি কাউন্সিল গঠিত হবে। অধিকন্তু, কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক পদের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন এবং সুপারিশের প্রক্রিয়া শুধু বিচারকদের নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দূর করবে না; বরং কোনো প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সামনে আনার সম্ভাবনা কম–বেশি দূর করবে।

উচ্চ আদালত বলেন, অভিজ্ঞতা বলে যে ভুল নিয়োগ কেবল আদালতের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করে না; বরং মামলাকারী, বার সদস্য (আইনজীবী সমিতির সদস্য) এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা খাটো করে।

এফএইচ/এমএএইচ/