সানজানা রহমান যুথী
Advertisement
মানবতার সেবায় আত্মনিবেদিত একটি নাম-রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট। প্রতি বছর ৮ মে সারা বিশ্বে পালিত হয় বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস, যা বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রমে জড়িত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি সম্মান জানানোর একটি বিশেষ দিন।
এই দিনের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় জীন হেনরী ডুনান্টের জন্মদিনকে, যিনি ছিলেন রেড ক্রস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ১৮৫৯ সালে ইতালির সলোফেরিনো যুদ্ধে আহত সৈন্যদের করুন অবস্থা দেখে তিনি মানবিক সহায়তার জন্য সংগঠিত হন, যা থেকেই জন্ম নেয় রেড ক্রস আন্দোলন।
রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট: একই উদ্দেশ্যের দুই প্রতীকপৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও অঞ্চলের জন্য ‘রেড ক্রস’ এবং ‘রেড ক্রিসেন্ট’ দুটি প্রতীক ব্যবহার করা হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে রেড ক্রিসেন্ট ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে এই সংগঠন পরিচিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) নামে।
Advertisement
বিশ্বজুড়ে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট মিলে প্রায় ১৯২টি জাতীয় সোসাইটি কাজ করছে। তারা আন্তর্জাতিক কমিটি ও ফেডারেশনের আওতায় যুদ্ধ, দুর্যোগ, মহামারি বা অন্যান্য সংকট মুহূর্তে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে।
প্রতিবছর রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের কোনো না কোনো প্রতিপাদ্য বিষয় থেকে। এবারের ২০২৫ সালের রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘মানবতা বাঁচিয়ে রাখা।’
এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘মানবতা বাঁচিয়ে রাখা’ শব্দগুলো একদিকে যেমন আন্তরিকতা ও সহমর্মিতার প্রতীক, তেমনি এই আন্দোলনের মূল মর্মবাণীও। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, খাদ্য সংকট, শরণার্থী সমস্যা-এই বৈশ্বিক সংকটগুলোতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই রেড ক্রিসেন্টের দায়িত্ব। তাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, এখনো বিশ্বে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহায়তা জীবিত।
বাংলাদেশে রেড ক্রিসেন্টের ভূমিকা১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট তাদের কার্যক্রম শুরু করে। যুদ্ধাহতদের সেবা, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, যুদ্ধবন্দীদের সহায়তা-সব ক্ষেত্রেই সক্রিয় ভূমিকা রাখে তারা।
Advertisement
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে (ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা) রেড ক্রিসেন্ট-এর স্বেচ্ছাসেবক দল মাঠ পর্যায়ে গিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ, আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালনা ইত্যাদিতে সক্রিয়।
তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা এই আন্দোলনের প্রাণবিশ্ব রেড ক্রিসেন্ট দিবসে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের কথা। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পেশাজীবীরা স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছেন রেড ক্রিসেন্টের নানা কর্মসূচিতে। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই এই আন্দোলনের প্রাণশক্তি।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অধীনে পরিচালিত ইউথ রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট দেশের প্রতিটি জেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। তারা প্রথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, ব্লাড ডোনেশন, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনারেড ক্রিসেন্টের কাজ শুধু ত্রাণ বিতরণ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন ও প্রস্তুতি কার্যক্রমও এর অংশ। তবে এই কাজের পথে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ-অর্থের সংকট, রাজনৈতিক বাধা, নিরাপত্তা হুমকি, স্বেচ্ছাসেবকদের ঝুঁকি ইত্যাদি।
তবুও তারা থেমে যায় না। ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা এবং স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা খাতে বড় পরিসরে কাজ করাই তাদের লক্ষ্য।
বিশ্ব রেড ক্রিসেন্ট দিবস শুধু একটি তারিখ নয়-এটি একটি উপলক্ষ, যেখানে মানুষ মানুষের জন্য দাঁড়ানোর শপথ নেয়। এই দিনে আমাদের উচিত রেড ক্রিসেন্টের মতো সংগঠনগুলোর প্রতি সম্মান জানানো, তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের উৎসাহিত করা এবং নিজেরাও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা। কারণ মানবতা শুধু কোনো নীতির নাম নয়, এটি এক চলমান আন্দোলন, যা পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য আমাদের সবার অংশগ্রহণ দাবি করে।
আরও পড়ুন কয়লা শ্রমিকের ঘামে জ্বলে উঠে শহরের বাতি ৯০ দশকের ছেলেমেয়ের স্মৃতিতে আজও সতেজ টমটম গাড়িকেএসকে/জিকেএস