স্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি। এসময় আপন ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগও তোলেন তিনি। ভাই তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে প্ররোচনা দিয়ে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীর। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আমার তালাকপ্রাপ্ত সাবেক স্ত্রী জান্নাতি খাতুন মিতু আমার পরিবারের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। আমাদের সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে আমার বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুদের প্ররোচনায় তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনটি করেন। সংবাদ সম্মেলনে জান্নাতি খাতুন মিতুর দেওয়া সকল তথ্য মিথ্যা। যার তথ্য ও প্রমাণ আমার কাছে আছে।
তিনি বলেন, জান্নাতি খাতুন মিতু খালিশপুর হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন। তারা বাবার নাম মইনুল ইসলাম। খুলনা রেলওয়ে মার্কেটে তার একটি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান ছিল। ২০০৮ সালে পারিবারিকভাবে আমি তাকে বিয়ে করি। বিয়ের শুরু থেকেই উগ্র, উচ্ছৃঙ্খল এবং অবাধ্যতার কারণে পারিবারিক অশান্তি লেগেছিল। ২০১৭ সালে আমি তাকে তালাক প্রদান করি। পরে পারিবারিকভাবে মীমাংসা হলে আমি তালাক বাতিল করি। কিছুদিন পর তার আবার উগ্র আচরণ শুরু হয়। তিনি আমার বাড়ি থেকে উচ্ছৃঙ্খলতা করে তার বাবার বাড়ি খালিশপুরে চলে যান। বাবার বাড়িতে ইয়াবা ব্যবসায়ী আপন চাচার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। বাবার বাড়িতে বসে আমার নামে যৌতুকের ০৩ (তিন) ধারার মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এই মামলা চলাকালে আদালত তাকে মামলা প্রত্যাহার করে সংসার করার জন্য ঘরে উঠতে বলেন। কিন্তু তিনি আদালত থেকে বের হয়ে এসে আমার ও আমার বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১ এর (গ) ধারায় আরেকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত তার আদেশে স্পষ্ট লিখে দেন এই মামলা চলাকালীন আরেকটি মামলা করায় আপস মীমাংসা সম্ভব নয়। অতঃপর আমি তাকে বাধ্য হয়ে তালাক প্রদান করি। তিন মাস পর তা কার্যকরী হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাটি পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অতঃপর তিনি দেনমোহর ও খোরপোশ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি চলমান। মামলাগুলো পরিচালনাকালে আমি আর চাকরি কন্টিনিউ করতে পারিনি এবং অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি।
Advertisement
তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তিনি আমার বোন ও তার স্বামী নুরুল করিম ভুইয়া সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন। আমার বোন বর্তমানে উপসচিব পর্যায়ে কর্মরত। আমার বোন সম্পর্কে এবং তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও মিথ্যাচার করছেন তিনি। শ্বশুরালয়ে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সারাদেশে ডিসি মহোদয়গণের নিয়োগের যে বিষয়টি মিথ্যাবাদী জান্নাতি খাতুন উপস্থাপন করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই। উনি যদি এটির মাস্টারমাইন্ড হতেন তাহলে উনি নিজেই ডিসি হয়ে যেতে পারতেন। বর্তমানে আমার বোন পরিসংখ্যান ব্যুরোর দায়িত্বে আছেন। মূলত আমার বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুদের প্ররোচনায় আমার তালাকপ্রাপ্তা, মামলাবাজ, পরসম্পদ লোভী সাবেক স্ত্রী জান্নাতী খাতুন মিতু এসব মিথ্যাচার করছেন।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, আমার ২০২১ সালের বিয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক। আমার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আমার ভগ্নিপতির কোনো সম্পর্ক বা আত্মীয়তা নেই। আমার বাচ্চাদেরকে সে নিজের হাতে নিয়ে ব্যবহার করছে। তার এই নোংরা মন-মানসিকতার কারণে বাচ্চাদের সঙ্গে আমার দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। বাচ্চাদের দিয়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করায় আমার সন্তান কখনোই প্রয়োজন ছাড়া আমার কাছে আসতে চাইত না। তাদের মা ছোটবেলা থেকে এমন করেই বড় করেছে। এছাড়া আমার নামে মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দাখিলের পর থেকে আমার কর্মক্ষেত্রে অর্থাৎ বিদেশে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আমি দেশে জীবন যাপন করি।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার তালাকপ্রাপ্তা, মামলাবাজ, উগ্র, উচ্ছৃঙ্খল সাবেক স্ত্রীর মিথ্যা তথ্যের দাবিতে দাখিল করা দেনমোহর খোরপোশ আদায়ের মামলায় গত ১১-১১-২৪ তারিখে বিবাদী অর্থাৎ আমার পক্ষের জেরার উত্তর সঠিকভাবে প্রদান করতে না পারায় এবং নিজের মামলা প্রমাণের ব্যর্থতার ধারণায় দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং আমার বড় ভাই কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে ষড়যন্ত্র করে পরবর্তী দিন ১২-১১-২৪ তারিখে আমার বাসগৃহে উপস্থিত হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সম্পূর্ণ ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত। আদালতে সিডি আকারে পেশ করেছি। আমার কাছেও সংরক্ষিত আছে। উক্ত ঘটনার জেরে আমার বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এর অর্থায়ন ও পরামর্শে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মূলক ২০(১১)২৪ (খুলনা) নং মামলা দাখিল করেন।
তিনি বলেন, আমার চিকিৎসাধীন মা হোসনেয়ারা বেগমের নিকট আমি ঢাকায় গেলে প্রচণ্ড উগ্র উচ্ছৃঙ্খল জান্নাতি খাতুন মিতু ১৭-১১-২৪ তারিখ মিথ্যা অপহরণের নাটক সাজিয়ে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, জান্নাতি খাতুন মিতু ও তার ভাই রাইসুল ইসলাম অনিকসহ অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী আমার বাসায় আক্রমণ করে আমার ছোট ভাই পিয়াস ও দারোয়ানকে বেধড়ক মারধর করে। মূলত পিয়াস হোসেন জালিয়াতি মামলার সাক্ষী থাকার কারণে জেল হাজত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আমার বড় ভাই মাসুদ পরিকল্পনা করে নিজ হাতে পিয়াসকে মারপিট করে জখম করে। এই ঘটনাটি ঘটানোর জন্য বাড়ির সমস্ত সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলে। বিষয়টি আমরা থানায় উপস্থাপন করেছি। সেনাবাহিনীকে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে আমার বাড়িতে যায়। অবৈধভাবে আমার ঘরে প্রবেশ করে। অতঃপর ব্যাংকের চেক বই, মূল্যবান ইলেকট্রনিক্স পণ্য, নগদ টাকা, পাসপোর্ট, স্বর্ণালঙ্কার, ব্যাংকের এটিএম কার্ড চুরি করে। আমি আদালতে মামলা করেছি। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছেন। উক্ত মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪৪৮/৩২৪/৩৮০/৫০৬ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে।
Advertisement
ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, এর আগে আমার সন্তানরা কখনোই আমার বাড়িতে আসেনি। এটি আমার সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত আছে। একজন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর স্বামীর বাড়িতে প্রবেশ আইনগত দণ্ডনীয়। আমার বড় ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী ফারা আজাদের সহায়তায় তারা এই কাজটি করে। পরবর্তীতে খুলনা থানার ওসি সাহেবের সামনে আমি সব প্রমাণাদি উপস্থাপন করলে ওসি সাহেব আমার মামলাটি নিতে রাজি হন। পরবর্তীতে জান্নাতি খাতুন তার ভাইকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি কাউন্টার মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি ডিভোর্সের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। আমার সন্তানদের নিজের হাতে নিয়ে অন্যের প্ররোচনায় ও মিথ্যা প্রলোভনে আমার ও আমার ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার একটি মামলাও মিথ্যা নয়। মামলাবাজ জান্নাতি খাতুন মিথ্যা মামলা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আদালত এবং পুলিশের প্রায় সবাই তাকে চেনে। কোনো মামলায় হেরে গেলে সে বলে প্রভাব খাটিয়ে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ভগ্নিপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তিনি এক রত্নগর্ভার ছেলে, তার মা তিনবার রত্না গর্ভার উপাধি পেয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের বিষয়ে যে কথাগুলো আমার তালাকপ্রাপ্তা, মামলাবাজ সাবেক স্ত্রী জান্নাতী খাতুন মিতু বলেছেন সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
প্রকৃত অর্থে আমার মা হোসনে আরা বেগমের দায়ের করা জালিয়াতি মামলায় বড় ভাই মাসুদ জেল হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে জান্নাতি খাতুন মিতুকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এই মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে। জালিয়াতি মামলাটির চার্জশিট হয়েছে। এক্সপার্ট ওপেনিয়নে সবগুলো স্বাক্ষর জাল প্রমাণিত হয়েছে। ট্যাংক রোডস্থ বাড়িটি আমার নয়, আমার মায়ের নামে। উক্ত বাড়িটি আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন বড় ভাই মাসুদ।
মূলত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে সমাজে আমাদের পরিবারকে ছোট করে এই সংবাদ নিয়ে বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বিভিন্ন দফতরে দিয়ে তার নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করছেন ও এককভাবে সম্পূর্ণ প্রোপার্টি ভোগদখল করছে এবং ভবিষ্যতে করতে চান।
এদিকে প্রেস কনফারেন্স চলাকালে জান্নাতি খাতুন মিতু উপস্থিত হওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিকদের অনুরোধে জান্নাতি খাতুন মিতু স্থান ত্যাগ করেন।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
জান্নাতি খাতুন মিতু জানান, ২০২১ সালে তাকে বের করে দেওয়ার পর থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই তার। আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং আব্দুল্লাহ মাসুদের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সরদার বলেন, আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে তার সাবেক স্ত্রী জান্নাতি খাতুন মিতুর দায়ের করা মামলাগুলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। মামলার পক্ষে বাদী কোনো যথাযথ সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে দাখিল করতে পারেননি। আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বাচ্চাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। টাকা দেন। কিন্তু ডকুমেন্টারি টাকা পাঠালে তা ফেরত দেন জান্নাতি খাতুন মিতু।
তিনি আরও বলেন, আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা যে মিথ্যা, তার সিসিটিভি ফুটেজসহ একাধিক প্রমাণ রয়েছে। আদালত ন্যায়বিচার করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
মো. আরিফুর রহমান/এফএ/এএসএম