লাইফস্টাইল

গরমে বাড়ে আখের রসের চাহিদা

গরমে বাড়ে আখের রসের চাহিদা

ঝলসানো রোদেলা দুপুরে ক্লান্ত দেহে যখন তৃষ্ণার্ত মন একটু প্রশান্তির খোঁজে থাকে, তখন এক গ্লাস ঠান্ডা আখের রস যেন পরম শান্তি এনে দেয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গরম যত বাড়ে, আখের রসের প্রতি মানুষের আকর্ষণও ততটাই বাড়তে থাকে।

Advertisement

রাস্তার ধারে, হাট-বাজারে কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দেখা যায় সারি সারি আখ চিপে রস বের করার মেশিন আর কাঁচের গ্লাস কিংবা ওয়ান টাইমে হাতে অপেক্ষমাণ ক্রেতা।

বাংলাদেশে আখের রস বরাবরই একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক পানীয়। আখের রস শুধু স্বাদে ঠান্ডা নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এতে থাকে প্রাকৃতিক চিনি, পানি, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে ও তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়। বিশেষ করে গরমকালে যখন দেহ থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়, তখন এক গ্লাস আখের রস তা পূরণে দারুণ কাজ করে।

আরও পড়ুন

Advertisement

সকালে খালি পেটে ফল খেলে কী হবে মাইক্রোচিটিং কি সম্পর্কের নতুন সমস্যা

ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় আখের রস বিক্রি করেন রহমত আলী। সিজনাল পেশা হিসেবে এই কর্মে যুক্ত তিনি। তার মতে, ‘চৈত্রের শুরু থেকেই বিক্রি বাড়তে থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে দিনে ২০০-২৫০ গ্লাস রস বিক্রি কোনো বিষয়ই নয়। রোজার সময় আরও চাহিদা বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচেতনরা কোমল পানীয়র বদলে প্রাকৃতিক জিনিস খোঁজে। আর আখের রস প্রাকৃতিক, কোনো প্রিজারভেটিভ ছাড়াই মানুষ পান করতে পারে।’

আখের রস মূলত হাতেচালিত বা ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে আখ চিপে তৈরি করা হয়। সাধারণত ঠান্ডা রাখতে বরফ দেওয়া হয় এবং লেবু, আদা, পুদিনা পাতাও মেশানো হয় অনেক ক্ষেত্রে, যা স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে বরফ ব্যবহারে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় সচেতন ক্রেতারা এখন নিজের বোতল নিয়ে এসে রস নেন বা দেখে-শুনে বরফহীন রস পছন্দ করেন।

অনেক স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষকের মতে, আখের রস দেহে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে। এটি যকৃতকে সুস্থ রাখে, হজমে সাহায্য করে। এমনকি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও পরিমিত পরিমাণে, চিকিৎসকের পরামর্শে, এটি উপকারী হতে পারে। যদিও অত্যধিক পরিমাণ গ্রহণ করলে রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে আখের রসের বিশুদ্ধতা নিয়েও কিছু প্রশ্ন থাকে। অনেক বিক্রেতা খোলা রাস্তায়, ধুলাবালি ও ময়লার মধ্যে রস তৈরি করেন, যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি আখের রসই কেবল গ্রহণ করা উচিত।

Advertisement

এই গরমে সামাজিক মাধ্যমেও আখের রসের চাহিদা স্পষ্ট। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে অনেকেই ‘সুম্মা আখের রস’ বা ‘গরমের দিন মানেই আখের রস’ হ্যাশট্যাগে ছবি বা রিলস শেয়ার করেন। কেউ কেউ নিজেদের বাসায় ব্লেন্ডার বা জুসার ব্যবহার করে রস তৈরি করছেন এবং তা ভাগাভাগি করছেন আপনজনের সঙ্গে।

গ্রামবাংলার চিত্রে দৃশ্য কিছুটা ভিন্ন। গ্রামের হাটবাজারে অথবা মেঠোপথে চলা আখ বিক্রেতার থেকে আঁটি ধরে আখ কেনেন অনেকে। নিজের দাঁত দিয়েই খাওয়া শুরু করেন মজাদার এই খাবার।

পরিশেষে বলা যায়, গ্রীষ্মের তাপদাহে আখের রস শুধু এক গ্লাস পানীয় নয়, এটি যেন একফোঁটা প্রশান্তি। স্বাস্থ্য ও স্বাদের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ এই রস শহর ও গ্রাম দুই জায়গায়ই গ্রীষ্মকালে প্রাণ জোগানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

কেএসকে/এমএস