মাচায় ঝুলছে সবুজ করলা। এ দৃশ্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের পাড়ের টং গ্রামের নিত্যদিনের চিত্র। এখানে শতভাগ পরিবার কোনো না কোনোভাবে যুক্ত করলা চাষের সঙ্গে। বছরের বড় সময়জুড়ে মাটি, মানুষ আর প্রকৃতি কথা বলে করলা নিয়ে।
Advertisement
মানুষ এ গ্রামকে চেনে ‘করলা গ্রাম’ নামে। অধিকাংশ কৃষক বাণিজ্যিক ভাবে করলা চাষ করেন। হাইব্রিড জাত ‘টিয়া সুপার’ করলার উৎপাদন হয় ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে। সময় কম, ফলন বেশি এ হিসাবেই লাভবান হচ্ছেন সবাই।
বিষমুক্ত করলা চাষে বদলে গেছে গ্রামের কৃষকদের ভাগ্য। উৎপাদিত করলা যাচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন গ্রামে। এখানকার করলা যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বড় শহরগুলোতে। একদিকে যেমন কৃষকের মুখে হাসি, অন্যদিকে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের।
করলা চাষি ওয়াসিম মিয়া বলেন, ‘সিজন অনুযায়ী টিয়া সুপারের করলা চাষ করে আমরা লাভবান হয়েছি। বেকারদের কর্মসংস্থানের জায়গা হয়েছে। দেশের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। প্রতি বছর আমি ১০-১২ লাখ টাকার করলা বিক্রি করি। আমরা অনেক লাভবান হয়েছি।’
Advertisement
আরও পড়ুন
ঝালকাঠিতে মুগ ডালে কৃষকের মুখে হাসি মিরসরাইয়ে ঢ্যাঁড়শ চাষে স্বাবলম্বী কৃষকেরাকরলা চাষি বেলাল মিয়া বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে করলা চাষ করছি। টিয়া সুপার খুব ভালো জাতের করলা। এ করলা চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। কোনো ক্ষতি হয় না। এগুলোর ফসলও ভালো। করলার ওজন অনেক বেশি হয়। কিছু বিক্রি করেছি, কিছু বিক্রি করা বাকি আছে।’
হবিগঞ্জের বাহুবল থেকে আসা পাইকার মো. রহিম মিয়া বলেন, ‘ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো। বাজারদরও ভালো আছে। বর্তমানে ভালো দামেই বিক্রি হয়। আশা করি আরও ৮-১০ লাখ টাকার করলা বিক্রি করতে পারবো।’
লাল তীর সীড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, ‘গ্রামটি মূলত কৃষি অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার চাষিরা ১০-১২ বছর ধরে লাল তীরের হাইব্রিড টিয়া এবং টিয়া সুপার চাষ করছেন। ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফলন সংগ্রহ করা যায়। ফলে বেশি আগ্রহ কৃষকদের। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন। বিভিন্ন আড়তদার এসে করলা সংগ্রহ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে যান।’
Advertisement
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে করলা চাষ হয়েছে। প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকার করলা বিক্রি করা যেতে পারে। করলা চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর উৎপাদন বাড়ছে।’
ওমর ফারুক নাঈম/এসইউ/এমএস