সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পুরো মাস আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রোজা রাখেন, মশগুল থাকেন ইবাদতে। রোজা রাখা অবস্থায় খাদ্য, পানি, পানীয়, ধূমপান ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকার নিয়ম আছে ইসলামে।
Advertisement
তবে শুধু ধর্মীয় রীতি অনুসারেই বরং রোজা রাখার বৈজ্ঞানিক অনেক সুফল আছে। রমজানে একমাস রোজায় শরীরে অনেক শারীরবৃত্তীয়, জৈব রাসায়নিক, বিপাকীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন ঘটে।
আসুন জেনে নিন, রোজা রাখার ফলে শরীরে কি ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, রমজানের প্রথম কয়েকদিনে রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ উভয়ই কমে যায়। শরীর পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ও প্রথম কয়েক দিন সবচেয়ে কঠিন। কারণ এ সময় সাধারণত মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও তীব্র ক্ষুধা লাগার সমস্যা দেখা দেয়।
রমজানের প্রথম সপ্তাহের পর শরীর উপবাসের সময়সূচির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে ও পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম নিতে সক্ষম হয়। পাচনতন্ত্র শরীরের শ্বেত রক্তকণিকাগুলো আরও সক্রিয় করতে সাহায্য করে।
Advertisement
একই সঙ্গে শরীরকে আরও পরিষ্কার করে, নতুন কোষ গঠন করে এবং শক্তি জোগায়। এ পর্যায়ে অঙ্গগুলোও তাদের মেরামত প্রক্রিয়া শুরু করে। অর্ধেক রমজানের পর থেকে শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এ সময় মন-মেজাজ ভালো থাকে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়তে শুরু করে। এ পর্যায়ে কোলন, লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও ত্বকের টক্সিন দূর করে ডিটক্সিং করে।
রমজানের শেষের ১০ দিনে শরীর রোজায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে আপনি আরও উদ্যমী হয়ে পড়বেন। উন্নত স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতাও থাকবে। এ সময় অঙ্গগুলো তাদের নিরাময় প্রক্রিয়া শেষ করে ও একবার সব টক্সিন অপসারণ হয়ে গেলে, শরীর তার সর্বোচ্চ ক্ষমতায় কাজ করতে সক্ষম হয়।
রমজানের রোজা লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি), শ্বেত রক্ত কণিকা (ডাব্লিউবিসি), প্লাটিলেট (পিএলটি) গণনা, উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (এইচডিএল-সি) বাড়ায়। অন্যদিকে রক্তের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস, নিম্ন ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (এলডিএল-সি) কমায় ও লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (ভিএলডিএল-সি) ঘনত্বও কমায়।
তাছাড়া এটি শরীরের ওজন, কোমরের পরিধি, বডি মাস ইনডেক্স, শরীরের চর্বি, রক্তের গ্লুকোজ, সিস্টোলিক, ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ও উদ্বেগের মাত্রা। দীর্ঘ একমাস রোজা রাখলে প্রদাহ, প্রো-ইনফ্লেমেটরি সাইটোকাইনস আইএল-১বি, আইএল-১বি, আইএল-৬, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর এ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
Advertisement
সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, হেমাটোলজিক, এন্ডোক্রাইন প্রোফাইল ও জ্ঞানীয় ফাংশনের উন্নতি ঘটে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রমজানের রোজা রাখার কোনো বিরূপ প্রভাব নেই। রোজা রাখার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো যায়, যা স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি স্বাস্থ্যকর নন-ফার্মাকোলজিক্যাল উপায়।
যদিও রমজানের রোজা সব সুস্থ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ। তবে যাদের ডায়াবেটিস মেলিটাস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, কিডনি ও চোখের রোগের মতো বিভিন্ন অসুখ আছে; তাদের উচিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই রোজা রাখা।
আরও পড়ুন
কাছের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন যেভাবে নিজের ফুলটিই যখন মাটিতে গড়ায়কেএসকে/এমএস