বিলকিস নাহার মিতু
Advertisement
বিচিত্র এই পৃথিবীতে রয়েছে বিচিত্র ধরনের গাছ, ফুল ও ফল। এর মধ্যে বিচিত্র একটি ফল হলো খৈ ফল। স্থানভেদে কেউ কেউ একে খইয়া বাবলা, দখিনী বাবুল বলে থাকে। আবার জিলাপির মতো দেখতে হওয়ায় কোনো কোনো অঞ্চলে জিলাপি ফল নামেও ডাকা হয়।
বৈশাখ বা জ্যৈষ্ঠ মাসে এই ফল পাকে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা এই ফল প্রচুর খেয়ে থাকে। ফল পাকলে গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি বসে। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Pithecellobium Dulce, গ্রিক ভাষায় Pithecellobium; যার অর্থ বানরের ফল। আর ল্যাটিন Dulce মানে মিষ্টি এবং এটি Fabaceae পরিবারের উদ্ভিদ।
মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার নিজস্ব এই উদ্ভিদ ৩০-৫০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। খৈ ফল কয়েক ধরনের হয়। ভেতরে সাদা ও সবুজ, সাদা ও গোলাপি বা গাঢ় লাল রঙের হয়ে থাকে। খেতে অনেক সুস্বাদু, মিষ্টি স্বাদযুক্ত আবার কিছুটা কষযুক্ত। এর গাছের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা লম্বা ও এলোমেলো। গাছে প্রচুর কাঁটা থাকে এবং বাকল ধূসর রঙের হয়ে থাকে। কাঞ্চনের পাতার মতো খৈ গাছের পাতা এবং রং সবুজ ও জোড়ায় জোড়ায় সংযুক্ত।
Advertisement
ফাল্গুন মাসে খৈ ফুল ফোটে। হালকা হলুদাভ ও ছোট ছোট ফুল হয়। এর কলি থোকা থোকা হয়ে থাকে। খৈ ফলের বীজ গোলাকৃতি ও কালো রঙের। খৈ গাছের বাকল ডায়রিয়া, আমাশয় ও যক্ষ্মা রোগের জন্য উপকারী। খৈ ফলের বীজ আলসারে আরাম দেয় এবং এর পাতা কাশি নিঃসরণ ও পিত্তাশয়ের রোগে ব্যবহৃত হয়। অনেকে খৈ ফল ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খান।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের আনাচে-কানাচে এই গাছের জন্ম হয় এবং বাণিজ্যিকভাবে এর কোনো চাষ হয় না। তবে শহরে মাঝেমধ্যে এই ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু ফিলিপাইনে এই গাছ ফলের জন্য চাষ করা হয়। সাধারণত ফলের বীজ থেকেই চারা উৎপন্ন হয় আবার ডাল কেটে লাগালেও গাছ হয়। এই গাছ গোড়া থেকে কেটে দিলেও পাশ থেকে নতুন করে চারা গজিয়ে গাছ হয়।
গ্রামাঞ্চলে অনেকে এটি বাড়ির বেড়া হিসেবে দিয়ে থাকে। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলায় এই গাছ দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে এই গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গাছটি টিকিয়ে রাখতে হলে চাষের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই দেশীয় বৃক্ষ রক্ষা পাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
Advertisement
এসইউ/জিকেএস