চীনের কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সুপার স্পেশালাইজ হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে ইউনান-বাংলাদেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতামূলক প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Advertisement
কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) সমঝোতা স্মারক সইয়ের (এমওইউ) পর এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর জিয়া জুয়েশান। সভাপতিত্ব করেন বিএমইউয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
এতে কুনমিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অব টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন ঝুইজুন (Mr. Pan Xuejun), ইউনান ইউনিভার্সিটি অব চায়নিজ মেডিসিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জু জি (Ms. Yu Jie), কুনমিং মেডিকেল ইউনিভর্সিটির ডিরেক্টর জিও হাইয়ুন (Ms. Guo Haiyun), ইউনান ভোকেশনাল কলেজ অব ফিন্যান্স অ্যান্ড ইকোনোমিক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট সেন ইউকিয়ং (Ms. Shen Yuqiong) এবং বিএমইউয়ের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও অফিস প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
প্রধান অতিথি প্রফেসর জিয়া জুয়েশান কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম, চীনের ট্রাডিশনাল মেডিসিন সেবাসহ বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে সম্প্রতি যে বৈঠক হয়েছে তা দুই দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিএমইউয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি দেশের উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান ও গবেষণায় প্রধানতম প্রতিষ্ঠান। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনের কুনমিং ইউনিভার্সিটিসহ ইউনান প্রদেশে বিদ্যমান চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উন্নত প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগকে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে কাজে লাগানোর নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। রোবটিক সার্জারি চালু, সফলভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন চালুসহ বিভিন্ন জটিল চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার তার বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও কুনমিং ইউভার্সিটির মধ্যে যৌথ গবেষণা, প্রশিক্ষণ, নলেজ শেয়ারিং, টেকনোলজি ট্রান্সফার, ফ্যাকাল্টি এক্সচেঞ্জ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
Advertisement
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, আজকের অনুষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিসহ দেশের মেডিকেল শিক্ষা ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যখাতের জন্য নতুন এক মাইলস্টোনের শুভ সূচনা করেছে। চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ দেবে। যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় চীনের সহযোগিতার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল রোববার (২০ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনের ইউনান প্রদেশের গর্ভনর ওয়াং ইউবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন ‘চীন-বাংলাদেশ পিপল-টু-পিপল এক্সচেঞ্জ ইয়ার: ইউনান এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
এই সমঝোতা স্মারক সই হওয়ায় চীন-বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে নতুন অধ্যায়ের শুরু হলো। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) এক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যৌথ গবেষণা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বিনিময়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি শেয়ার এবং স্কলারশিপ প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হবে ওই এমওইউ-এর মাধ্যমে।
এ উদ্যোগ বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষত জনস্বাস্থ্য, সংক্রামক রোগ এবং চিকিৎসা প্রশিক্ষণ বিষয়ে চীনের অগ্রগতি বাংলাদেশকে কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারবে। রোগ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা ও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, টেকনিক্যাল ট্রেনিং, যৌথ গবেষণা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে। চীনের ইউনান প্রদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পারস্পরিক উন্নয়ন ও বোঝাপড়া গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে এমওইউ।
এসইউজে/এমকেআর/জিকেএস