রোজ একই রুটিনে কাজ করতে করতে আপনার কি কখনও মনে হয় যে, একটু সময় পেলে ছবি আঁকার পুরোনো শখটিকে আবার বাঁচিয়ে তুলতাম? অথবা ছোটবেলার মতো গলা ছেড়ে গান গাইতে বসতাম, বাসার ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিয়ে মজার কোনো ক্র্যাফট তৈরি করতাম, একটা কবিতা লিখতাম, কিংবা নতুন কোনো রেসিপি তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিতাম?
Advertisement
জীবনে দায়িত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেকেই এসব সৃজনশীল কাজ ও শখ থেকে দূরে সরে যাই। তারপর একসময় গিয়ে আফসোস হয় যে আরেকটু চেষ্টা করলে হয়তো সময় বের করা যেত। আজ সেসব ঘুমন্ত সৃজনশীল মনগুলোকে একটু জাগিয়ে দেওয়ার দিন।
আজ বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস। ২০০২ সালে কানাডার লেখক ও সৃজনশীলতা বিশেষজ্ঞ মার্সি সেগাল প্রথম এই দিবসের ধারণা প্রস্তাব করেন। পরে, ২০১৭ সালে মানব বিকাশের সব ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের ভূমিকার সচেতনতা বাড়াতে জাতিসংঘ ২১ এপ্রিলকে বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস হিসেবে মনোনীত করেছে।
একান্তই ব্যক্তিগত কিছু সৃজনশীল শখের কথা বলেছি শুরুতেই। কিন্তু কাজের যেকোনো ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা আমাদের জীবনকে যে কতোটা প্রভাবিত ও পরিবর্তিত করে চলেছে তা ভেবে দেখেছেন কী?
Advertisement
সাম্প্রতিক যেসব উদ্ভাবন যেভাবে আমাদের জীবনকে আমূল বদলে দিলো-
১. অর্থনৈতিক উন্নয়নউবার, এয়ার বিএনবি-র মতো স্টার্টআপ ব্যবসাগুলো আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরাকে একেবারে গোঁড়া থেকে বদলে দিয়েছে গত কয়েক বছরে। সেই সঙ্গে নতুন পণ্য ও সেবা বাজারে এনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে হাজারো মানুষের।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি বা ফিনটেক মানুষের জীবনে টাকা-পয়সার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকেই পাল্টে দিয়েছে।
২. প্রযুক্তির অগ্রগতিমোবাইল অ্যাপস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, রোবোটিক্স আমাদের জীবনকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। যে কাজ করতে আগে দিনের পর দিন পার হয়ে যেত, তা এখন দশ মিনিটেই হয়ে যাচ্ছে।
Advertisement
৩. স্বাস্থ্য ও পরিবেশকোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্রুত উদ্ভাবন সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের উজ্জ্বল একটি উদাহরণ। এছাড়া সৌরশক্তির ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করছে।
৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতিকোর্সেরা-র মতো ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম শিক্ষাকে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের দেশেও এমন কিছু প্ল্যাটফর্ম সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া ডিজিটাল আর্ট ও সঙ্গীতের মতো শিল্পের চর্চাও বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি।
৫. অফলাইন সৃজনশীলতাসৃজনশীলতার সুযোগ যে শুধু প্রযুক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ পাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী একই রকম শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যপুস্তকের মান্ধাত্মা গঠন ও শিক্ষণ পদ্ধতি থেকেও মানুষ বের হয়ে আসছে সৃজনশীল বা নতুন চিন্তার মধ্য দিয়ে। এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে।
বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যেই অনন্য সৃষ্টিশীলতা রয়েছে। এটি শুধু একটি দিনের উদযাপন নয়, বরং একটি আন্দোলন। তাই আপনার শুপ্ত সৃজনশীলতাকে আজ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে দিন। সেই সঙ্গে প্রতিদিনের জীবনে রুটিন কাজগুলোতে উদ্ভাবনের ছোঁয়া নিয়ে আসুন।
এএমপি/এএসএম