খেলাধুলা

টাকা পেয়েছি প্রমাণ করতে পারলে সব দিয়ে দেবো

টাকা পেয়েছি প্রমাণ করতে পারলে সব দিয়ে দেবো

ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান ছিলেন অবিসংবাদিত। কিন্তু ব্যবসায় নাম লিখিয়ে তারকা অলরাউন্ডার জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। এর মধ্যে শেয়ার বাজার কারসাজি ও কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ব্যাপক আলোচিত।

Advertisement

শেয়ার বাজারে অনিয়ম নিয়ে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি করেছেন সাকিব। শেখ হাসিনা সরকারের সময় কোনো ব্যবস্থা না নিলেও ৫ আগস্টের পর সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এছাড়াও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। গত ৬ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাকিব। সেখানে নিজের বিরুদ্ধে করা মামলা ও আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

Advertisement

সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মামলাগুলো পূর্বপরিকল্পিত কি না?

টাইগার ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন এই মামলাগুলো স্বাভাবিক গতিতে নয় বরং অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত এগোচ্ছে। দেখুন, আমি ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছুতে খুব বেশি সময় দিইনি। স্বাভাবিকভাবেই, আমি ব্যবসা বা লাভের দিকেও মনোযোগ দিতে পারিনি। আমি মূলত দুইটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত—একটা হলো আমার কাঁকড়া খামার, আরেকটা শেয়ার বাজার সংক্রান্ত।’

সাকিব বলেন, ‘২০১৯ সাল পর্যন্ত কোভিডের আগ পর্যন্ত কাঁকড়া খামারটা ভালোই চলছিল। কিস্তি পরিশোধ বাকি ছিল না। কিন্তু কোভিডের কারণে প্রজেক্টটি স্থবির হয়ে পড়ে এবং কিছু পণ্য নষ্ট হয়। যার ফলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। আমরা তখনো ব্যাপারটা সামাল দিতে পারতাম, কিন্তু ভেতরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কয়েকজন পার্টনার টাকা নিয়ে চলে যায়। ব্যাপারটা হলো, আমি ঐ ফার্মের ৩৫% মালিক, বাকি ৬৫% অন্যদের। কিন্তু কেন জানি সবাই শুধু সাকিব আল হাসানের নামটাই জানে। অন্য কেউ এই খামার নিয়ে কিছু বলেনি। অথচ তারা কিছু ভুল করেনি, আর আমি নিজে মাত্র একবার কয়েক ঘণ্টার জন্য গিয়েছিলাম। আমি নিয়মিত যেতাম না বা খোঁজও রাখতাম না। কিন্তু যখন শুনলাম সমস্যা হয়েছে, তখন নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম যেন প্রজেক্টটা বন্ধ না হয়।’

‘যিনি প্রকল্পটির দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পার্টনারদের সঙ্গে কথা বলে আসল সমস্যা বোঝার চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে, কারণ কোম্পানিতে আমার নাম আছে। আমি আরও খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু পারিনি—ক্রিকেটে ফোকাস করার কারণে। যদি মাসে কয়েকদিন সময় দিয়ে সেখানে গিয়ে থাকতাম, হয়তো ব্যবসাটা ঠিক থাকতো।’

Advertisement

ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিলে আবারও ব্যবসা শুরু করতে চান সাকিব। কিন্তু ঋণ খেলাপির অভিযোগে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিক মনে করছেন না তিনি।

সাকিব বলেন, ‘এখনো আমি ঋন পুনঃতফসিল করে আবার ব্যবসাটা শুরু করতে চাই। কারণ এই সেক্টরের ভালো সম্ভাবনা আছে, বিদেশি মুদ্রাও আয় করা সম্ভব। সরকারও এই খাতে ভালো ইনসেনটিভ দেয়। আমি ঋন পুনঃতফসিলের চেষ্টা করছি। যদি তারা অনুমতি দেয়, তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা না। আমি টাকা নিয়েছি, আমি ফেরত দিতেই চাই। কিন্তু যদি সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে সেটা কঠিন হয়ে যায়। দেশে যেখানে কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপি আছে, সেখানে এটা মাত্র সাড়ে ৪ কোটি টাকার ঋণ। আমার ৩৫% শেয়ার অনুযায়ী, আমি মাত্র প্রায় ১.২০ কোটি টাকা পরিশোধ করলেই হয়। কিন্তু যেভাবে আমার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে—আমি মনে করি সেটা স্বাভাবিক না। যদি অন্য কেউ ভুল করে থাকে, তাহলে আমিও এই পরিস্থিতির শিকার।’

শেয়ার বাজারের কারসাজি নিয়ে সাকিব বলেন, ‘যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি নিজে একটাও ট্রেড করেছি বাংলাদেশ শেয়ার বাজারে, আমি আমার সবকিছু তাকে দিয়ে দেবো। আমি জানিই না কিভাবে ট্রেড করতে হয়, আমার ফোনে কোনো ট্রেডিং অ্যাপও নেই। হ্যাঁ, আমি একজনকে টাকা দিয়েছিলাম আমার পক্ষে ইনভেস্ট করার জন্য, কিন্তু পুরো ইনভেস্টমেন্টটাই লোকসানে পরিণত হয়েছে। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি এক টাকা পেয়েছি শেয়ার মার্কেট থেকে, আমি আমার সব দিয়ে দেবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই ব্যবসা থেকে কোনো লাভ করিনি, আমি প্রক্রিয়াতেও জড়িত ছিলাম না। আমি কোনো মিটিংয়ে যাইনি, অফিসেও যাইনি। তাহলে কীভাবে আমি দোষী হতে পারি? শুধু ইনভেস্ট করেছি বলেই কি সব দায় আমার? আমি সেখানে টাকা হারিয়েছি। কেউ যদি দেখাতে পারে আমি কীভাবে লাভ করেছি, আমি সেটাই দেখতে চাই। আমি চাই একটা সঠিক তদন্ত হোক, যাতে আমি বুঝতে পারি কোথায় কিভাবে এত ক্ষতি হলো। আমি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে মেসেজ করেছি, যদিও এখনো কোনো উত্তর পাইনি। কিন্তু আমি যে কোনো সমস্যার বিষয়ে কথা বলতে রাজি। আমি শেয়ার মার্কেট, ব্যাংকিং সেক্টর, এমনকি সরকারের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি যেন একটা সমাধান বের হয়। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। আমি এগিয়ে এসে সব ঠিক করতে চাই। আমি মনে করি আমি সেই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য, আর যদি তা দেওয়া হয়, আমি খুশি হবো।’

তদন্তে সহযোগিতার কথা জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘তারা যেকোনো তথ্য চাইলে আমি দিতে প্রস্তুত—চাই সেটা কাঁকড়া খামারের হোক বা শেয়ার মার্কেটের ব্যবসার। যদি তারা মনে করে যে আমাকে ডেকে বিস্তারিত তদন্ত করতে হবে, আমি তাতেও রাজি। আমি কিছু লুকাচ্ছি না বা কিছু চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছি না।’

এমএইচ/এমএস