জাতীয়

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পদ্মা ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ‘টাইম লোন’ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তা অপব্যবহার ও আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফতসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Advertisement

রোববার (১৩ এপ্রিল) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ রাকিব উদ্দিন মিনহাজ। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার অপর তিন আসামি হলেন— ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মঈনউদ্দীন মোনেম, পরিচালক ফারহানা মোনেম এবং পদ্মা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান করপোরেট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সাব্বির মোহাম্মদ সায়েম।

এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালে পদ্মা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের নামে ছয় মাস মেয়াদি ৫ কোটি টাকার একটি টাইম লোন অনুমোদন করা হয়। কিন্তু আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে এ অর্থ ব্যবসার মূলধন হিসেবে ব্যবহার না করে অন্য ঋণের দায় মেটাতে ব্যয় করেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

Advertisement

এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯, ৪২০ ও ৫১১ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, আব্দুল মোনেম লিমিটেড ২০২২ সালের ২৯ মার্চ পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় একটি শর্ট নোটিশ ডিপোজিট (SND) হিসাব খুলে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। অথচ এর আগেই ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ২৫ কোটি টাকার কম্পোজিট ঋণের জন্য আবেদন করেন। ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৮৪তম সভায় এ ঋণ অনুমোদন পায়। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ২০ কোটি টাকার এলসি ও ৫ কোটি টাকার টাইম লোনসহ মোট ২৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়।

এরপর, ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর আরও একবার ৫ কোটি টাকার ছয় মাস মেয়াদি টাইম লোনের জন্য আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের ৫৫তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় (২৭ ডিসেম্বর) তা অনুমোদিত হয় এবং ২৮ ডিসেম্বর তা বিতরণ করা হয়।

ঋণের শর্তানুযায়ী, অর্থটি দুধ গুঁড়া, কাঁচামাল, প্যাকেজিং উপকরণ ও যন্ত্রাংশ কেনার মাধ্যমে আইসক্রিম ইউনিট চালু রাখতে ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অর্থটি অন্য খাতে স্থানান্তর করে অন্য ঋণের দায় পরিশোধে ব্যবহার করা হয়। ঋণের নির্ধারিত পরিশোধের সময়সীমা ছিল ২০২৪ সালের জুন, তবে গ্রাহক তা সময়মতো পরিশোধ করেননি এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।

Advertisement

দুদকের অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর, ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনটি সন্দেহজনক নগদ লেনদেনের মাধ্যমে ঋণের অর্থ পরিশোধ করে ঋণটি সমন্বয় করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু না হলে এই অর্থ আত্মসাতের প্রকৃত সম্ভাবনা ছিল। এছাড়া ঋণ মঞ্জুরির সময় পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আসামি চৌধুরী নাফিজ সরাফত। প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় যে, তিনি একই সঙ্গে ঋণদাতা ও ঋণের সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং এ অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে লোনের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।

এসএম/এমএএইচ/জিকেএস