সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দাপট ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে দিনেদিনে ক্রিকেটের সম্প্রচার স্বত্ব কেনায় আগ্রহ কমছে। এতে আগামী দিনে রাজস্ব আয়ে মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি হওয়া উদ্বেগের মাঝেই সমস্যা সমাধানে নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
Advertisement
প্রথমবারের মতো মোবাইল ক্রিকেট গেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে আইসিসি। যা ভবিষ্যতে সম্প্রচার স্বত্ব থেকে রাজস্বের সম্ভাব্য মন্দায় আয়ের বিকল্প উৎস হিসেবে কাজ করবে।
ক্রিকেট গেমিংয়ের ইতিহাস বহু বছর ধরে থাকলেও এবারই প্রথম আইসিসি নিজস্ব গেম তৈরি করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দ্রুত বর্ধনশীল ও লাভজনক বাজারে অংশ নিতে চায় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আজ বুধবার জিম্বাবুয়ের হারারেতে আইসিসির বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রধান নির্বাহী কমিটির (সিইসি) কাছে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তাব করবে আইসিসির ডিজিটাল টিম।
Advertisement
গেম চালুর ধারণাটি আগেই আলোচনা হয়েছে। আজ মিটিং থেকে সবুজ সংকেত আসলে আলোর মুখ দেখতে শুরু করবে এই পরিকল্পনা। এর জন্য আইসিসি পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর অনুমোদন লাগবে। সেটি পেলে গেম ডেভেলপার নিয়োগের জন্য টেন্ডার ছাড়বে আইসিসি।
এর আগে ‘ইএ স্পোর্টস’ এর ক্রিকেট সিরিজ গেমস বা ‘কোডমাস্টার্স’ এর ব্রায়ান লারা ক্রিকেট সিরিজ গেমগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এছাড়া ১৯৮০-এর দশক থেকে আরও অনেক গেম তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু মোবাইল ক্রিকেট গেম সাফল্য পেয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আইসিসির নিজস্ব গেম নির্মাণ বড় পদক্ষেপ হতে পারে। তবে আইসিসির জন্য খেলোয়াড়দের নাম, ছবি ও জনপ্রিয়তার (এনআইএল) স্বত্ব নিয়ে জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
ইএ স্পোর্টস ২০০৭ সালে তাদের ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ করে দেয়। কারণ খেলোয়াড়দের নামের লাইসেন্স সংগ্রহ করা ছিল অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। শেষ সংস্করণে কিছু দলের খেলোয়াড়দের নাম থাকলেও অনেক দেশের কাল্পনিক নাম ব্যবহার করা হয়েছিল, যেমন ভারত।
Advertisement
আইসিসি তাদের টুর্নামেন্টগুলোতে অংশগ্রহণকারী সব দলের এনআইএল অধিকার অর্জন করে। কিন্তু সেটি শুধু ওই টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ের জন্য প্রযোজ্য। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তারা এ অধিকার পায় না।
যদি গেমটিতে জাতীয় দলের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি বা ঘরোয়া দলগুলোকেও যুক্ত করতে চায়, তবে আইসিসিকে বিভিন্ন বোর্ডের (যেসব দেশে খেলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন নেই, যেমন ভারত ও পাকিস্তান) এবং বিশ্বব্যাপী খেলোয়াড়দের সংগঠন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউসিএ) সঙ্গে আলাদা করে চুক্তি করতে হবে।
২০২৪ সালের শুরুতে ডব্লিউসিএ একটি দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব চুক্তি করে ‘উইনার্স অ্যালায়েঞ্জ’ এর সঙ্গে। যা পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়দের সংগঠন পিটিপিএ’র একটি অঙ্গ সংগঠন। এখন থেকে ডব্লিউসিএ ভুক্ত দেশগুলোর (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা) খেলোয়াড়দের পক্ষে এনআইএল চুক্তির বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে উইনার অ্যালায়েঞ্জ। আইসিসির পরিকল্পনার বিষয়টি জানলেও এখনো প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি ডব্লিউসিএ।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ১০০টি কোম্পানি খেলোয়াড়দের ছবি-নাম ব্যবহার করে গেম বানাচ্ছে অনুমতি ছাড়াই। এর থেকে খেলোয়াড়রা কোনো আয়ও পাচ্ছেন না। অথচ এই আয় অনেক সময় বিশাল অঙ্কেরও হয়। এই রাজস্বের উপর খেলোয়াড়দের অধিকার নিশ্চিত করতেই কাজ করছে ডব্লিউসিএ ও উইনার অ্যালায়েঞ্জ।
আইসিসিও জানে ডব্লিউসিএর সঙ্গে কোনো না কোনো লাইসেন্সিং চুক্তিতে আসতেই হবে। কিন্তু তাদের সম্পর্কের অতীত ইতিহাস বিবেচনায় এমন কোনো চুক্তি সহজ হবে না বলেই ধরা হচ্ছে।
এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ভারতীয় খেলোয়াড়দের এনআইএল অর্জন। যেহেতু সেখানে কোনো খেলোয়াড়দের সংগঠন নেই এবং ডব্লিউসিএর সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক নেই, তাই ভারত গেম নির্মাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নামের অধিকার পাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ক্রিকেটের সবচেয়ে লাভজনক টুর্নামেন্ট। এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক আলোচনায় আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আইসিসির গেমে তাদের নাম ব্যবহার করতে দিতে অনিচ্ছুক।
২০২৪ সালে ভারতের মোবাইল গেমিং বাজারের আকার ছিল প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটিই আইসিসিকে নতুন গেম চালুর পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ করছে।
এমএইচ/