দেশজুড়ে

পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ

পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ

সিলেটে বিয়ের প্রলোভনে স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এছাড়াও নানা প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

Advertisement

এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী। পরে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। গত ১৭ মার্চ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দেন তিনি।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের নাম আবু সাঈদ (৩০)। তিনি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার আওতাধীন একটি পুলিশ ক্যাম্পে কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। সম্প্রতি একটি অভিযানে আহত হওয়ায় বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী নারী সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার এলাকার বাসিন্দা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় পুলিশ কনস্টেবল আবু সাঈদের। ওই নারী স্বামী পরিত্যাক্তা ও তিন সন্তানের মা জেনেও সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন লোভ-লালসার ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীর বাসায় আসা-যাওয়া শুরু করেন সাঈদ। সেই সুযোগে তাকে ধর্ষণ করেন ওই পুলিশ সদস্য। একপর্যায়ে বিয়ে করে বিদেশ যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যান। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী নারীর সহায়তায় একটি পাসপোর্টও তৈরি করেন আবু সাঈদ।

Advertisement

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্রোয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ভিসার অনুমতি পেরে আবু সাঈদ ভুক্তভোগীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা শুরু করেন। এসময় ভুক্তভোগী নারী বিয়ের জন্য চাপ দিলে নানা টালবাহানা শুরু করেন সাঈদ। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করার কথা বললে গত ১৪ মার্চ বিকেলে ভুক্তভোগীর বাসায় গিয়ে বিয়ের আশ্বাস দেন আবু সাঈদ। কিন্তু পরদিন ১৫ মার্চ রাতে মুঠোফোনে কল দিয়ে বিয়ে করবেন না বলে জানান। এতে ভুক্তভোগী নারী থানায় অভিযোগ দেওয়ার কথা বললে গালিগালাজ করেন ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী নারীর কিছু আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে ভাইরাল করার হুমকি দেন সাঈদ। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী নারী।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, এ ঘটনার পর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা। পরে তিনি গত ১৭ মার্চ সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করছেন অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল আবু সাঈদ। রোববার (৬ এপ্রিল) রাতে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এটি সাজানো অভিযোগ। আমার সঙ্গে এ ধরনের কিছুই হয়নি। তার (ভুক্তভোগী) সঙ্গে আমার ধর্মের (পাতানো) ভাই-বোন সম্পর্ক। পরে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ২০ দিন পরও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

থানায় মামলা না নেওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, তাৎক্ষণিক ঘটনা হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে মামলা রুজু করি। আর অভিযোগ পুরোনো হলে যাচাইবাছাই করে দেখা হয়। উনার (ভুক্তভোগী নারীর) অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখানে বিদেশ যাওয়ার জন্য আর্থিক লেনদেন ও বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক দুটি বিষয় রয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. সম্রাট তালুকদার বলেন, এ ধরনের একটা অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহমেদ জামিল/এমএন/এএসএম