দেশজুড়ে

রেশম পল্লিতে দুই বছরে বন্ধ হয়েছে এক হাজার তাঁতঘর

রেশম পল্লিতে দুই বছরে বন্ধ হয়েছে এক হাজার তাঁতঘর

ঈদ ঘিরে খট খট শব্দে মুখর থাকার কথা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের হরিনগর রেশম পল্লি। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তেমন কোনো কর্মচঞ্চলতা নেই সেখানে।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃষ্ঠপোষকতা না বাড়ালে এ ব্যবসার মন্দাভাব কাটবে না। এমনকি একই গ্রামে দুই বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় ১ হাজার তাঁত ঘর। এতে হতাশায় দিন কাটছে তাঁত মালিকদের।

শিবগঞ্জের হরিনগর তাঁতিপাড়া গ্রামের গৌরর চন্দ্র দাস বলেন, রেশম পল্লির সুতো চিন থেকে আসে। দাম অনেক চড়া। কেজি প্রতি আমাদের এ সূতো কিনতে হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা দরে। এক কেজি সুতোয় তিনটি শাড়ি বানানো সম্ভব। আর শ্রমিক খরচতো আছেই। এতে একটি শাড়ির খরচ পড়ে যাচ্ছে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজারে বিক্রি নেই। এতে আমরা সুবিধা করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হচ্ছে কারখানা।

আরও পড়ুন- মানিকগঞ্জের তাঁতপল্লিতে ভরা মৌসুমেও হাহাকার ১৪৪ কোটি টাকাই পানিতে, কমেছে রেশম উৎপাদন সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিতে নেই দম ফেলার ফুরসত

তাঁতি পল্লিতে কাজ করেন একই এলাকার শফিল আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার তেমন চাপ নেই। অর্ডার অনেকটা কম।

Advertisement

তিনি বলেন, এক গজ কাপড় বুনলে আমরা ৯০ টাকা পাই। সারাদিনে অন্তত ৪-৫ গজ কাপড় বুনানো যায়। এতে দিনে ৪০০-৪৫০ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই চলে আমার সংসার।

আলি হাসান নামে আরও এক তাঁত শ্রমিক বলেন, এখানকার রেশম সিল্কের তৈরি শাড়ি, পাঞ্জাবির, বেনারশী, গরদের কাপড়, মটকা, ওড়না, সালোয়ার কামিজ মূলত মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তদের পোশাকের চাহিদা মেটায়। কিন্তু এখন সেদিন পাল্টেছে। এখন আর কেউ বেশি দাম দিয়ে এসব পোশাক কিনতে চাচ্ছে না।

তাঁত মালিক তরুণ কুমার দাসের ছেলে পলাশ দাস বলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। সুতাসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়লেও কাপড়ের দাম সেভাবে বাড়েনি। এজন্য আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। বংশ পরম্পরায় এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রাখা হয়েছে। দোকানিরা অর্ডার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, কীভাবে ব্যবসা চালাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।

তিনি বলেন, গত দুই বছরে আমাদের গ্রামেই বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার তাঁতঘর।

Advertisement

দি চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ জাগো নিউজকে বলেন, আগে দেশের যে রেশম সূতো দিয়ে কাপড় তৈরি হতো, তা উঠে গেছে ৩০ বছর আগেই। এখন চিন থেকে আসা সূতো দিয়ে কাপড় তৈরি করছেন তাঁত মালিকরা। বর্তমান সময়ে দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা কমে গেছে রেশম শিল্পের। এতে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁত পল্লিগুলো।

এফএ/এএসএম