বিনোদন

একদিন ফার্নিচারের মতো শক্ত হয়ে যাব: সাদিয়া আয়মান

একদিন ফার্নিচারের মতো শক্ত হয়ে যাব: সাদিয়া আয়মান

ইমরুল রাফাতের নাটক ‘টু বি ওয়াইফ’ দিয়ে পর্দায় অভিষেক হয় সাদিয়া আয়মানের। তাকে দেখা গেছে মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত নাটক ‘ফুলের নামে নাম’, গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘কাজলরেখা’ ও শিহাব শাহীন পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘মায়া শালিক’ প্রভৃতিতে। ঈদ উপলক্ষে তিনি হাজির হয়েছিলেন জাগো তারকায়। সেখানে তিনি নিজের জানা-অজানা অনেক গল্প শোনালেন। তারই চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।

Advertisement

জাগো নিউজ: ঈদে কাজের ব্যস্ততা কেমন ছিল? সাদিয়া আয়মান : অনেক বিজি ছিলাম। বছরজুড়েই অনেক কাজ থাকে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। সেগুলো প্রচার হবে ঈদে। পাশাপাশি একটা ওয়েব সিরিজেও কাজ করেছি এবার। সেটার শুটিং, ডাবিং নিয়েও বেশ ব্যস্ততা ছিল।

জাগো নিউজ: আপনি ছোটপর্দাতেই নিয়মিত। টিভি, ওটিটি এবং ইউটিউব, কোন জায়গায় নিজেকে দেখতে বেশি ভালো লাগে আপনার? সাদিয়া আয়মান: আমি অভিনেত্রী, অভিনয় করে মজা পাই। অভিনয় ভালোবেসে কাজটা করতে এসেছি, সেটা যে প্লাটফর্মেই হোক। টিভি, ওটিটি ও ইউটিউব, তিন মাধ্যমের জন্যই আমি কাজ করেছি। দর্শকের রেসপন্স পেয়েছি। এটা উপভোগ করে যেতে চাই।

জাগো নিউজ: অনেকে বলে যে ওটিটিতে কাজ করে আরাম বেশি। আপনি কি মনে করেন? সাদিয়া আয়মান : ওয়েবে বা ওটিটিতে কাজ করে আরাম বলতে এখানে কাজের অনেক সময় পাওয়া যায়। নাটকের মতো দুদিন-তিন দিনেই শেষ এমনটা নয়। ওটিটিতে অনেক সময় ধরে গল্প তৈরি হয়। বড় পরিসরের আয়োজন, তাই প্রিপারেশন নেওয়ার অনেক সময় পাওয়া যায়। কস্টিউম চয়েজ, লোকেশন, স্ক্রিপ্ট, রিহার্সাল চলে অনেক সময় নিয়ে। শুটিংয়েও অতো তাড়াহুড়ো থাকে না। রিলাক্সে কাজটা করা যায়। আর নাটকে যেটা হয়, খুব দ্রুত কাজ শেষ করার তাড়া থাকে। অভিনয়টা কীভাবে করবো, কস্টিউম কী হবে, সেগুলো নিজেকেই ভাবতে হয়। কিন্তু ওটাও এনজয় করার মতো। মনে হয় যে, আমরা কজন মিলে যুদ্ধে নেমেছি। এটা একটা অন্যরকম মজা।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার ফেস কিছুটা কিশোরীদের মতো। ম্যাচিউর চরিত্রে অভিনয় করেন কীভাবে? এমন কি কখনো হয়েছে যে মেকাপ করেছেন কিন্তু সেটা চরিত্রের সঙ্গে যাচ্ছে না?সাদিয়া আয়মান : না তেমনটা হয়নি কখনো। বরং উল্টোটা হয়েছে, চরিত্র অনুযায়ী কস্টিউম ও মেকাপ নিয়ে আমি হয়তো কনফিউশনে ছিলাম। কিন্তু পরিচালক প্যানেল থেকে কল দিয়ে বলেছেন যে, পারফেক্ট হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ‘মমতা’ নাটকটির কথা বলতে পারি। এটি পরিচালক তপু খান ভাই যখন এডিটিংয়ে বসলেন, প্যানেল থেকে কল দিয়ে বললেন, ‘টেনশানে ছিলাম এমন ভারী একটা চরিত্রে তোমাকে কেমন দেখাবে, কতটা মানাবে। খুব ভালো কাজ করছো তুমি। মেকাপ, কস্টিউম ও অভিনয়ে একদম পারফেক্ট।’ নাটকটি বেশ সাড়া পেয়েছে। জোভান ভাইয়ার সঙ্গে করেছিলাম কাজটা। যেটা হয়, পরিচালকদের এমন প্রশংসা আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়, ম্যাচুরিটি আনে। অনেকেই বলেন, যখন কোনো বিয়ে বা অনুষ্ঠানে যাই, আমাকে সামনে থেকে দেখতে বাচ্চা লাগে। তাহলে নাটকে এত ভারি ক্যারেক্টার করি কী করে। আমার মনে হয়, অভিনয় দিয়ে উৎরে যাই। আর ক্রেডিট দিতে হবে আমার সব পরিচালকদের, যারা আমাকে সেভাবে প্রেজেন্ট করেন। মেকাপ বলতে, যখন কোনো ভারী চরিত্র করি, তখন আমি চোখে একটু কাজল পরি। রোমান্টিক বা অন্যসব চরিত্র হলে কাজলটা দিই না।

জাগো নিউজ: মেহজাবীনের বিয়েতে বেশ মজা করতে দেখা গেছে আপনাকে। আপনার বিয়ের ফুল কবে ফুটবে? সাদিয়া আয়মান: জানি না। এটা বলা তো মুশকিল। বিয়ে নিয়ে কিছুই ভাবি না এখন। কাজ করছি, মন দিয়ে করতে চাই।

জাগো নিউজ: বিয়ের আগে অনেকে হৃদয়ঘটিত সম্পর্কে যুক্ত হয়। এক জনপ্রিয় নির্মাতাকে ঘিরে আপনারও এমন সম্পর্কের রিউমার শোনা যায়।সাদিয়া আয়মান: এটা আসলে … আমি কিছুই জানি না। আমি প্রেম করলে জানিয়েই করব।

জাগো নিউজ: তারকা হওয়ার আগে ও পরে ঈদ উদযাপনে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?সাদিয়া আয়মান: কোনো পরিবর্তনই আসেনি। আমি সবসময়ই পরিবারকেন্দ্রিক একটা মেয়ে। বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। দাদা-দাদি, বাবা-মা, কাকা-ফুফু, কাজিনরা সব একসঙ্গে থেকেছি। বরিশালে আমার বাড়ি, সেখানকার স্থানীয় আমরা। যে বাড়িতে আমার বাবা-চাচারা বড় হয়েছেন, সেই বাড়িতেই আমি বড় হয়েছি। একটা পারিবারিক বন্ধন কাজ করে মনের মধ্যে। তাই কারণে অকারণে বাড়িতে যাই। কিছুদিন আগেও আমি ঘুরে এসেছি। আমাদের পরিবারে যখন বিয়ে হয়, তখন যে যেখানেই থাকুক বিয়েতে সবাইকে আসতেই হবে। এমনকি বিদেশ থেকেও আমার চাচারা, কাজিনরা চলে আসে। পারিবারিক কোনো দায়িত্ব এড়াই না কেউ। যখন আমার ‘মায়া শালিক’-এর প্রিমিয়ার হলো, বিদেশ থেকে আমার চাচা চলে এসেছিলেন। যৌথ পরিবারের এটাই মজা, আপনি কখনো একা থাকবেন না। ঈদ এলেও তেমনটা হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ করতে হয়। সাদিয়া আয়মান এখন তারকা, এ জন্য আলাদা কোনো ব্যাপার নেই, কোনো পরিবর্তনও নেই।

Advertisement

জাগো নিউজ: একটা আলোচনায় বলছিলেন, বরিশালের মেয়েরা নবাবজাদী হয়। আপনি আসলে কতটুকু নবাবজাদী?সাদিয়া আয়মান: হা হা হা.... মজা করে বলেছিলাম। তবে বরিশালের মেয়েরা একটু এমনই। কিন্তু অলস নয়। যেমন ধরুন, আমি যখন পরিশ্রম করি, তখন একটানা কাজ করতে পারি। এমনও হয়েছে যে, তিনদিন পাবনায় কাজ করে রাত ৯টায় বাসায় ঢুকে আবার ১১টায় মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছি। অভিনেতা ফারহান ভাই একবার বললেন, আমি যেভাবে ছুটে ছুটে কাজ করি, একদিন ফার্নিচারের মতো শক্ত হয়ে যাব। এটা হচ্ছে আমি, যখন পরিশ্রম করি তখনকার অবস্থা। এই আমিই যখন আবার অলস সময় কাটাই, তখন পুরোটাই নবাবজাদী। ঘুমাবো, খাবো, টিভি-ওটিটি দেখবো, ‍কুকুরকে খাওয়াবো, কিন্তু কোনো কাজ করব না। মাঝেমাঝে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই। ওদের বাসায় ডাকি, রান্না করে খাওয়াই।

জাগো নিউজ: বন্ধুদের কথা বলছিলেন। মিডিয়াতে আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু কে? সাদিয়া আয়মান : মিডিয়াতে আমার বন্ধু আছে। কিন্তু স্পেশালি উল্লেখ করার মতো বা ‘সবচেয়ে ভালো’ কোনো বন্ধু নেই।

জাগো নিউজ: আপনার এমন কোনো প্রিয় চরিত্র আছে যেটায় আপনি অভিনয় করতে চান? সাদিয়া আয়মান: দেশের মধ্যে হলে বলবো ‘মনপুরা’ সিনেমার নায়িকা চরিত্রটি করতে চাই। ফারহানা মিলি আপু চরিত্রটি এত অসাধারণ ফুটিয়ে তুলেছেন যে, বারবার মুগ্ধ হয়েছি দেখে। ওই ছবির ‘সোনার ময়না পাখি’ গানটার যে দৃশ্য, সম্ভব হলে সেটার আদলে একটা কিছুতে অভিনয় করতে চাই। ‘মনপুরা’ ছবিটা আমার খুব প্রিয় এবং ‘সোনার ময়না পাখি’ গানটাও আমার খুব প্রিয়। দেশের বাইরের কথা যদি বলি তবে দেবদাসের পারু হতে চাই।

জাগো নিউজ: আপনার প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী কারা? সাদিয়া আয়মান: সুবর্ণা মুস্তাফা, অপি করিম, শিলা আহমেদ আমার প্রিয় অভিনেত্রী। প্রিয় অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি, মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরী। আরও অনেকে আছেন। যেমন আসাদুজ্জামান নূর স্যারের অভিনয় খুব ভালো লাগে।

আরও পড়ুন:

ফেসবুকে ফিরলেন সাদিয়া, দায় চাপালেন চ্যানেলের কাঁধে সাদিয়া আয়মানের লাইভ-কাণ্ড, বর্জনের ডাক, শাস্তি দাবি

জাগো নিউজ: জুলাই বিপ্লবে আপনি সরব ছিলেন। নতুন বাংলাদেশে আপনার প্রত্যাশা কেমন? সাদিয়া আয়মান: জুলাই আন্দোলন দিয়ে আমরা, বলা যায় যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু দেশে এখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি একটা নিরাপদ দেশ চাই যেখানে ধর্ষণ থাকবে না, অন্যায় থাকবে না, ক্রাইম থাকবে। সবাই মিলেমিশে সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারব।

এলআইএ/এমএমএফ/এমএস