সুনিল ছেত্রির যখন ভারত জাতীয় দলে অভিষেক হয়, তখন হামজা চৌধুরীর বয়স মাত্র ৮ বছর। সুনিল ছেত্রি তখন মোহনবাগানের আক্রমণভাগের প্রধান অস্ত্র, হামজা চৌধুরী ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির যুব দলের সাথে। দুইজনের বয়সের পার্থক্য ১৩ বছর। সুনিল ছেত্রির ৪০, হামজার ২৭।
Advertisement
সুনিল এরই মধ্যে ভারতের জার্সিতে খেলে ফেলেছেন ১৫২ ম্যাচ। তার নামের পাশে গোল ৯৫টি। জাতীয় দলের হয়ে গোল করায় বিশ্বের সেরা চারে আছেন ভারতীয় এই সুপারস্টার। অন্যদিকে বাংলাদেশের সুপারস্টার হামজা চৌধুরী জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলার অপেক্ষায়।
অভিজ্ঞতা ও অর্জনে ভরপুর ক্যারিয়ারের সুনিল ছেত্রি আর অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা হামজা চৌধুরীই এখন দুই দেশের ফুটবল অঙ্গনের বড় আলোচনার খবর।
আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশ ও ভারত মুখোমুখি হবে শিলংয়ে। সুনিল আক্রমণভাগের খেলোয়াড়, হামজা রক্ষণের। দুই দেশের কোচ তাদেরকে প্রথাগত পজিশনে খেলালে তাদের বুটেবুটে টক্কর হবে। সেই টক্কর দেখতেই মুখিয়ে আছেন দুই দেশের ফুটবলভক্তরা।
Advertisement
বাংলাদেশ ও ভারত ম্যাচ সামনে রেখে যে দুই ফুটবলার আলোচনার শীর্ষে, তাদের কারোরই এ ম্যাচে থাকার কথা ছিল না। সুনিল ছেত্রিরতো নয়ই, মহা অনিশ্চয়তায় ছিল হামজার খেলাও।
গত বছরের শেষ দিকে হামজা পেয়েছেন বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার জন্য ফিফার ছাড়পত্র, কয়েকদিন আগে অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরেছেন সুনিল ছেত্রি। এখন এই দুইজনই ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
দুই প্রজন্মের দুই ফুটবলারের লড়াই দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন সবাই। এই ম্যাচ খেলার জন্য ১৭ মার্চ বাংলাদেশে এসেছেন ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের শেফিল্ড ইউনাইটেডের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। তারও তিনদিন আগে ম্যাচ শহর শিলংয়ে পৌঁছেছেন সুনিল ছেত্রিরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে সুনিলরা ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেছে মালদ্বীপের বিপক্ষে। বুধবার শিলংয়ে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ভারত জিতেছে ৩-০ গোলে। সুনিল ছেত্রি একটি গোলও করেছেন ওই ম্যাচে।
সুনিলের জাতীয় দলের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ হলেও হামজার চেয়ে পিছিয়ে ক্লাব ক্যারিয়ারে। বিশ্বের সেরা ও আকর্ষণীয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির ফুটবলার হামজা চৌধুরী। এই ক্লাবের যুব দল থেকেই আছেন তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটিতে অবশ্য এখন নেই হামজা। কিছুদিন আগে ধারে যোগ দিয়েছেন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল শেফিল্ড ইউনাইটেডে।
Advertisement
হামজা জাতীয় দলে না খেললেও ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। তিনি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড যুব দলের জার্সিতে ৭ ম্যাচ খেলেছেন। অন্যদিকে সুনিল ছেত্রি ভারত যুব দলের জার্সি প্রথম গায়ে পরেছিলেন ২০০৪ সালে। অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে ৩ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে খেলেছেন ৬ ম্যাচ।
ক্লাব ফুটবলে সুনিল ছেত্রি নিজ দেশের বেঙ্গালুরু এফসিতে খেলছেন টানা ৯ বছর ধরে। এ ছাড়াও তিনি মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মুম্বাই সিটি, চার্চিল ব্রাদার্সসহ বড় বড় ক্লাবে খেলেছেন। তার ক্লাব ফুটবলের ক্যারিয়ার ২৩ বছরের। হামজা চৌধুরীর মূল দল লেস্টার সিটি হলেও ধারে কয়েকটি ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সবচেয়ে বেশি ৯১ ম্যাচ খেলেছেন লেস্টারের জার্সিতেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ ম্যাচ খেলেছেন ওয়াটফোর্ডে। ক্লাব ক্যারিয়ারে সুনীলের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও গোল বেঙ্গালুরু এফসির জার্সিতে।
ইংল্যান্ড ও ভারতের ফুটবলের মানদন্ডের পার্থক্য যোজন-যোজন। দুই দেশের লিগের পার্থক্যও ঠিক তাই। যে কারণে সুনিল ক্যারিয়ারে যত ম্যাচ খেলুক আর শত গোলই করুক না কেন, দুইজনের মান তুলনায় হামজাই যোজন-যোজন এগিয়ে থাকবেন। হামজার বাজার মূল্য পুরো ভারতীয় দলের কাছাকাছি।
আরআই/এমএমআর/