আন্তর্জাতিক

ভারতে হোলি উৎসবের আগে ত্রিপলে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে মসজিদ

ভারতে হোলি উৎসব শুক্রবার (১৪ মার্চ)। এদিন আবার মুসলমানদের জন্য পবিত্র জুম্মার দিন। এমন পরিস্থিতিতে হোলি শোভাযাত্রার পথে পড়ে এমন জায়গার মসজিদগুলো ঢেকে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির বিভিন্ন রাজ্য কর্তৃপক্ষ। উৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

জানা গেছে, বুধবার (১২ মার্চ) উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলার মসজিদগুলি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময়ও বদল করেছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। উত্তরপ্রদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনেরা জানিয়েছেন, শুক্রবারের নামাজের সময় বদল করে দুপুর ২টা করা হয়েছে।

হোলির দিন ধর্মীয় অশান্তি এড়াতে এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের সব মহলকে সতর্ক করেছেন ডিজিপি প্রশান্ত কুমার। সব জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে পুলিশ কমিশনারেট, পুলিশ জোনের প্রধানদের এই মর্মে চিঠিও পাঠিয়েছেন ডিজিপি।

২০টি নির্দেশিকা সেখানে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জেলায় জেলায় স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে বাড়তি পুলিশ ও বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে এব্যাপারে বৈঠকও সেরেছেন ডিজিপি।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে হোলিতে সবথেকে বেশি স্পর্শকাতর তালিকায় রয়েছে সম্ভল জেলা। যে জেলা ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ছবি বারবার খবরের শিরোনামে এসেছিল। শীর্ষ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল মামলা। শাহি জামা মসজিদে কোর্টের নির্দেশে সমীক্ষা ঘিরে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেখানেও একাধিক মসজিদ ত্রিপলে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা নজরদারির জন্য সেখানে বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।

এদিকে, হোলি উৎসবের কারণে শুক্রবারের নমাজের সময় পিছিয়ে বেলা আড়াইটের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সম্ভলের শাহি জামা মসজিদের প্রেসিডেন্ট জাফর আলি। মসজিদ ঢেকে দেওয়ার রীতিকে স্বাগত জানিয়ে যোগীর সরকারের প্রশংসাও করেন তিনি।

শুধু শাহজাহানপুর জেলাতেই ৭৫টিরও বেশি মসজিদ ত্রিপল ও কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই জেলাতে জুতো ছুড়ে হোলি খেলার রীতি রয়েছে। প্রাচীন রীতি ঘিরে হবে শোভাযাত্রাও। কড়া পুলিশি ঘেরোটোপে হবে সেই শোভাযাত্রা।

সম্ভলের সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট বন্দনা মিশ্র জানিয়েছেন, বিভিন্ন মসজিদে নিরাপত্তার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং পুরো জেলাকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। হোলি উপলক্ষে আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে এবং আমরা নিশ্চিত করব যে এটি শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে। প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর থেকে সম্ভলে উত্তেজনা চলছে, যখন আদালতের নির্দেশে জামা মসজিদ নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু হয়। যেখানে দাবি করা হয়েছিল, মসজিদটি একটি হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত। এই সমীক্ষা ঘিরে বিক্ষোভ ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়।

Advertisement

এছাড়া, সম্প্রতি অনুজ কুমার চৌধুরী নামে সম্ভলের একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হোলির সময় মুসলিমদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়ে বিতর্কে জড়ান। তার বক্তব্যে আবার সমর্থন দেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

অনুজ বলেছিলেন, হোলির উৎসব বছরে একবার আসে, আর শুক্রবারের নামাজ (জুম্মা) বছরে ৫২ বার আসে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, যখন মানুষ হোলি খেলবে, আর যদি তারা (মুসলিমরা) না চায় তাদের ওপর রঙ পড়ুক, তবে তাদের বাড়িতে থাকা উচিত। এ নিয়ে একাধিক নেতার মন্তব্যও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিজেপি নেতা রঘুরাজ সিং মুসলিম পুরুষদের হোলির সময় রঙের সমস্যা এড়াতে ত্রিপল দিয়ে তৈরি হিজাব পরার পরামর্শ দিয়েছেন। বিহারের দারভাঙ্গার মেয়রও বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি হোলি উদযাপনের সময় জুমার নামাজের জন্য দুই ঘণ্টার বিরতি রাখার প্রস্তাব দেন। সূত্র: আজকাল

এসএএইচ