মাহমুদ নোমান
Advertisement
‘জিওগ্রাফিকা’ এরই মধ্যে দুটি সংখ্যায় ভ্রমণের পরিবেশ উপস্থাপনা আলাদা করে তুলেছে বিষয় বৈচিত্র্যে এবং তৃতীয় সংখ্যায় এসে এই বৈচিত্র্যকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। ‘জিওগ্রাফিকা’র প্রথম সংখ্যা ছিল ম্রো সম্প্রদায়ের অন্দর-বাহির নাড়ি-নক্ষত্র নিয়ে। এরপর চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের কীর্তিমান পর্বতারোহী বাবর আলীকে কেন্দ্র করে এবং চলতি সংখ্যাটি বিশ্বপর্যটক, বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতি পর্যটনের অগ্রগণ্য পথিকৃৎ এলিজা বিনতে এলাহীর কর্মযজ্ঞ তুলে ধরার প্রয়াস-প্রকল্প।
এই সংখ্যায় প্রচ্ছদ নিবন্ধে হেরিটেজ ট্যুরিজমে বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রস্তাব কিংবা বিবিধ করণীয় এবং সম্ভাবনার ক্ষেত্রে বাধার কারণগুলো সরল প্রবাহে তুলে ধরেছেন। প্রস্তাবে এসব কিছু তো দেশের কল্যাণে নিবেদন। এলিজা বিনতে এলাহী বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে ৬০টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি থেকে উপলব্ধ জ্ঞানে ‘অ্যা হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’ সংক্ষেপে ‘কোয়েস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের সরকারের সদিচ্ছার গুরুত্ব অনেক। কেননা দিনশেষে একজন নারী পর্যটক বিশ্বভ্রমণে একজন মানুষের চোখে নিজের ভূখণ্ডের সমৃদ্ধিকল্পে বাস্তবতার ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাস মনে হবে। এ দেশের মানুষের মাঝে বিভিন্ন আঙ্গিকের গোঁড়ামি উল্লেখ্য; এ জন্যই এলিজা বিনতে এলাহীর হেরিটেজ ট্যুরিজম নিয়ে ভাবনা এ দেশের ভ্রমণশিল্পে মাইলফলক বটে।
বলার ক্ষেত্রে বলি, এলিজা বিনতে এলাহীকে প্রথম জানি আমার এলাকায় ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণে আসার সুবাদে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টকৃত ছবি দেখার মাধ্যমে। উল্লেখ্য যে, দেশের এমন পরিস্থিতিতে এসব কল্পনা করে একজন নারী দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণে ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে মমত্বে অবলোকন করেছেন; ব্যাপারটাই তো মুখের কথা শুধু নয়। পর্যটক মানে পর্যটকই। নারী বলা শুধু এ দেশের মানুষের দেখা ও ভাবনার নিরীখে বলা। বিশ্বভ্রমণের বিপরীতে পুরো দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা ভ্রমণে বিশদভাবে ব্যাপারগুলো জানতে এলিজা বিনতে এলাহী রোল মডেল এবং তার মস্তিস্ককে দেশের পর্যটনশিল্পে যত কাজে লাগানো যায়; ততই মঙ্গল হবে মনে করি।
Advertisement
‘জিওগ্রাফিকা’র চলতি সংখ্যায় প্রচ্ছদ নিবন্ধের পরে আরও দুটি লেখা লিখেছেন এলিজা বিনতে এলাহী। এসবও ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে—দেশের মধ্যে ১২টি উল্লেখযোগ্য প্রত্নস্থল দেখার সমূহ বোধ এবং আমেরিকায় হাইওয়া নগর কথন। এই ভ্রমণ কথনে হাইওয়া নগরে ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের আবেদন একীভূত করেছেন। এই নগরে কবিগুরু থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এমনকি শঙ্খ ঘোষের পদচারণায় মুখর নগরকে প্রেমের নগর নাকি সাহিত্যের নগর—এই উদ্ভূত প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘হাইওয়া নগর প্রেমে মোড়ানো সাহিত্যের নগর...’
এই সংখ্যায় এলিজা বিনতে এলাহীর কর্মযজ্ঞ উপস্থাপনের পরে অন্য লেখকদের লেখাগুলোও অনেক সমৃদ্ধ। ‘আমাজন’ সম্পর্কে বিচিত্র অভিজ্ঞতার স্বাক্ষরিত জ্ঞানের চমৎকারভাবে সহজতর করে তুলে ধরেছেন অমরেন্দ্র চক্রবর্তী। এরপরে মহুয়া রউফের ‘খুঁজে পেয়েছি ইনকাদের হারানো শহর’ লেখাটি ভ্রমণপিপাসু পাঠকদের কাছে অতুলনীয় লেখা হিসেবে উপস্থিত। এমনকি মহুয়া রউফের কথা বলার ধরন পাঠককে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেবে। মনে হবে, মহুয়া রউফ নয় পাঠক লিখছে পাঠকের ভ্রমণের উপাখ্যান।
আরও পড়ুন বুক রিভিউ লিখে জিতুন পুরস্কার আশা-নিরাশার বইমেলাএরপর হানিয়াম মারিয়া রাকার সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার দুঃসাহসিক অভিযান, কায়াক মানে বাতাসে ফুলানো ছোট নৌকার মাধ্যমে। এই লেখায় লেখক দুইবারের চেষ্টা বিফল হওয়ার পরে তৃতীয় চেষ্টায় বাংলা চ্যানেল জয় করার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। ‘অ্যান্টার্কটিকায় চোখ ধাঁধানো কয়েক দিন’ শিরোনামে ইনাম আল হকের লেখাটি অ্যান্টার্কটিকায় পাখি দেখার বিচিত্র অভিজ্ঞতা পাঠককে এক বিস্ময়কর ঘোরে নিপতিত করবে। পাখিমন পাঠকদের দেবে অন্যরকম প্রশান্তি।
‘জিওগ্রাফিকা’র এই সংখ্যায় একেকটা লেখা একেক আঙ্গিকে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশনে-ভ্রমণে ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স অভিযানে ফরহান জামানের স্বপ্নবাজি কিংবা জাকির হোসেনের ছবির দৃশ্যকাব্যে ভ্রমণ এবং বান্দরবানে কানিজ ফাতেমা তামান্না ও মাহাদীব হাদীর লেখাটা চমৎকার। এ ছাড়া এভারেস্ট বেসক্যাম্প ট্রাকিং নিয়ে কাওছার রুপকের লেখা কিংবা বাবর আলীর পর্বতারোহণে প্রশিক্ষণ শীর্ষক লেখাটি নতুন ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে অন্যরকম অনুরণন তুলবে। বাবর আলীর লেখা নিঃসন্দেহে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এখন।
Advertisement
এলিজা বিনতে এলাহীকে নিয়ে জিওগ্রাফিকার ঐতিহ্য পর্যটনশিল্প নিয়ে জ্যোতির্ময় ধরের সম্পাদিত এই পত্রিকার সংখ্যাটি এরই মধ্যে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। পরিশেষে প্রধান সম্পাদকের কলামে বাবর আলী একটি বাক্যে বলেছেন, ‘অন্তরে বাহিরের ডাক... কাঁধে ব্যাগ নিয়ে... অথচ অনেকে কাঁধে শূন্যতা নিয়ে কোনো ব্যাগ ছাড়া এক অচেনা ডাকে বাহিরে চলে যায়, গিয়েছে এভাবে অনেকে চলে...’
জিওগ্রাফিকা, তৃতীয় সংখ্যাএলিজা বিনতে এলাহীর এতিহ্য পর্যটনসম্পাদক: জ্যোতির্ময় ধরমূল্য: ৩৫০ টাকা।
এসইউ/জিকেএস