কৃষি ও প্রকৃতি

ঝিনাইদহে বিদেশি ফল চাষে সম্ভাবনা, আগ্রহী কৃষকেরা

ঝিনাইদহে বিদেশি ফল চাষে সম্ভাবনা, আগ্রহী কৃষকেরা

অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান কিংবা আঙুর চাষের কথা ভাবলেই বিদেশি ফলের কথা মনে ভেসে ওঠে। দেশের বাজারের চাহিদা পূরণে মূল্যবান এসব ফল সারাবছর আমদানি করা হয়। কিন্তু অবাক করা তথ্য, পলিমাটির বাংলাদেশেও এখন চাষ হচ্ছে বাহারি সব বিদেশি ফল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর জনপদ ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হচ্ছে রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও আঙুরের মতো ভিনদেশি ফল। এসব ফল স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য শহরে।

Advertisement

জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলায় এ বছর আঙুরের চাষ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। শখের বশে আঙুর চাষ করলেও ভালো ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিক আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। পতিত জমিতেও আঙুর, অ্যাভোকাডোর বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষিরা। কৃষকেরা জানান, পরীক্ষামূলক এসব বিদেশি ফলের আবাদ করেন তারা। তবে বছর ঘুরতেই দারুণ ফলন পাওয়ায় বিদেশি এসব ফল চাষে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

কালীগঞ্জ উপজেলার চাচড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শাহিনুর রহমান ৩ বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো। চারা রোপণের প্রায় ৫ বছর পর পেয়েছেন দারুণ ফলন। তার লাগানো গাছে গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে অ্যাভোকাডো।

কৃষক শাহিনুর রহমান বলেন, ‘২০১৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে একজন কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে অ্যাভোকাডোর চারা নিয়ে আসি। এরপর সেটি বাগানে রোপণ করি। প্রথমদিকে মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। কিন্তু ৫ বছর পর আমার গাছে প্রথম ফল আসে। প্রথম বছর ফলের উৎপাদন কম ছিল। এ বছর দারুণ ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর অ্যাভোকাডো ধরেছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে অ্যাভোকাডোর চাহিদা বেশি না হলেও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে অ্যাভোকাডোর চাহিদা ব্যাপক। স্থানীয় বাজারে কেজিপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হয়। তবে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে ঝিনাইদহের অ্যাভোকাডো কেজিপ্রতি গড়ে ৮০০ টাকা বিক্রি করা যায়।’

কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা ও স্কুলশিক্ষক হাফিজুর রহমান লাগিয়েছেন লংগান (কাঠলিচু)। পেয়েছেন দারুণ সাফল্য। এ বছর তিনি লংগান বিক্রি করে বেশ আয় করেছেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘লংগান বিদেশি ফল। এটি চাষে তেমন খরচ নেই। পরিচর্যা করলেই হয়। রাসায়নিক কিংবা কীটনাশকের ব্যবহার বেশি লাগে না। আগামীতে রাম্বুটানসহ আরও কয়েকটি বিদেশি ফল চাষের পরিকল্পনা নিয়েছি।’

আরও পড়ুন বিদেশি আঙুরসহ মিশ্র ফল বাগানে স্বপ্ন দেখছেন জিল্লু  তরুণ উদ্যোক্তা শরীফের বাগানে বিদেশি পিচফল 

এদিকে জেলার মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলায় বেড়েছে আঙুর চাষ। সবুজ আঙুরের পাশপাশি এসব উপজেলায় রঙিন আঙুরের চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলার বেতাই গ্রামের আঙুর চাষি আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আগামী বছর তিনি আঙুরের আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন।

মহেশপুর উপজেলার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে আঙুর চাষ করেছিলাম। বিদেশি আঙুরের অন্তত ১২টি জাতের চারা রোপণ করে বাগান গড়েছি। জাতের ভিন্নতা থাকায় আমার বাগানে খয়েরি, লাল ও সবুজ আঙুরের ভালো ফলন পেয়েছি। আঙুরের দামও ভালো পাওয়া গেছে। আঙুর চাষের পাশাপাশি মানসম্মত চারা উৎপাদনের লক্ষ্য আছে।’

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ মৌসুমে জেলায় ১ হেক্টর জমিতে রাম্বুটান আবাদ হয়েছে। কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় এ ফলের পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া জেলায় ২ হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জে ১.৭৫ হেক্টর, কোটচাঁদুপরে ১ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ০.২৪ হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো আবাদ করেছেন কৃষক।

জেলার সদর উপজেলা, হরিণাকুণ্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদুপর ও মহেশপুর উপজেলায় ২ দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে আঙুরের পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ০.৪৪ হেক্টর, কালীগঞ্জে ০.৫৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ০.৩১ হেক্টর, মহেশপুরে ০.৬৬ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ০.২৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বিদেশি আঙুর আবাদ করেছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঝিনাইদহ জেলার প্রতিটি উপজেলার মাটির একটি বিশেষ গুণ আছে। এ মাটিতে নানা রকম বিদেশি ফলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকেরা চাষাবাদ শুরু করলেও সফলতা আসার পরে তা বাণিজ্যিক আবাদে রূপান্তরিত হচ্ছে। এটি আমাদের কৃষিতে এক দারুণ বিপ্লব বলা যায়। বিদেশি ফলের আবাদ বাড়লে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। বাঁচবে কৃষক, সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।’

শাহজাহান নবীন/এসইউ/জিকেএস