বিনোদন

মনে হয়নি এলাকার কোনো বড়ভাই আমার দিকে তাকাবেন: ন্যান্সি

আজ (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস। বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হচ্ছে। নারী দিবসে নারীদের নিরাপত্তাসহ নানান বিষয়ে কথা বলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন।

Advertisement

জাগো নিউজ: কেমন আছেন?নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি: আছি, বেশ ভালোই।

জাগো নিউজ: নারী দিবসের শুভেচ্ছা।ন্যান্সি: ধন্যবাদ।

জাগো নিউজ: নারী দিবসের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন না?ন্যান্সি: নারী দিবসের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিইনি। তবে এ দিবসে টেলিভিশনে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখবো।

Advertisement

জাগো নিউজ: দেশের বিভিন্ন অঙ্গনে নারীরা নানান ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আপনার চোখে সংগীতাঙ্গনের কোনো বৈষম্য ধরা পড়েছে?ন্যান্সি: অন্যান্য সেক্টরের কথা আমি বলতে পারবো না। তবে সংগীতাঙ্গনে নারী-পুরুষের বৈষম্য আমার চোখে ধরা পড়েনি।

জগো নিউজ: আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী এখনো অবহেলিত ও বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার। এ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাবেন তারা?ন্যান্সি: আমাদের সভ্য হতে হবে। আমরা মানুষ হিসেবে এখনো উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন হতে পারিনি। আমরা এখনো হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক মানসিকতা ধারণ করি। এমনটা কেন করি, আমি জানি না। যেখানে আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ধরে দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে শাসন করেছেন, সেখানে নারীদের অবস্থা এমন কেন, সেটা আমারও প্রশ্ন। আমি কখনো নারীদের দুর্বল ভাবি না। একজন নারী ও একজন পুরুষ সমান কি না, তা যদি শক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হয়, তাতে আমি বিশ্বাসী নই। নারী এবং পুরুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন নারী যা পারেন, তা একজন পুরুষ পারেন না। আবার একজন পুরুষকে এমন কিছু দিয়ে সৃষ্টিকর্তা তৈরি করেছেন তা আবার নারীকে দেননি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রাখতে দুজনেরই প্রয়োজন আছে। প্রকৃতিকে সুন্দর রাখতে কীটপতঙ্গেরও প্রয়োজন আছে। আমাকে আলাদা করে যখন একজন নারী হিসেবে কথা বলতে হয়, তখন খারাপই লাগে। কারণ আমরা নারীরা এত নিচু জায়গায় পড়ে আছি যে, আমাকে নারীর কথা আলাদা করে বলতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব-কৈশোরেও কি নারীদের অবস্থা এমন দেখেছেন?ন্যান্সি: আমাদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক না হলেও কোনো না কোনোভাবে মাতৃতান্ত্রিক পরিবেশেই বড় হয়েছি। আমি দেখেছি, একটি সংসারে কী বাজার লাগবে, জীবনযাপন কেমন হবে, রান্না-বান্না থেকে ছেলে-মেয়েরা কোন স্কুলে পড়বে, সবকিছু একজন নারীকে সামলাতে হয়েছে। আমাদের শৈশবেও দেখেছি, একটি সংসারে বাবা চাকরি করেন, টাকা দেন। টাকা দিলেই যদি সবকিছু হয়ে যেত, তাহলে কোনো কথা থাকতো না। আমি দেখেছি, পরিবারের খাবার তৈরি করা, সবার পুষ্টি নিশ্চিত করা, চলাফেরা, সুরক্ষা – সবকিছুই একজন মায়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। মা-ই একটা সংসারের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। যদি তা না-ই হতো তাহলে মানুষ বলতো না যে, ‘মা মারা গেলে সংসার ভেঙে যায়।’

জাগো নিউজ: আপনিও কন্যার মা। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে তাদের কীভাবে বড় করছেন?ন্যান্সি: আমি আমার শৈশব-কৈশোরে সমাজটাকে সুন্দরই পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সমাজটা অসুন্দর। এমন অসুন্দর সমাজ আমি আগে লক্ষ্য করিনি।

Advertisement

জাগো নিউজ: কেন এমন মনে হচ্ছে?ন্যান্সি: আমরা যখন হাইস্কুলে পড়েছি, দেখেছি মফস্বলের কিশোরীরা ফ্রক পরে, এখন যেটাকে বলে মেডি ফ্রক। আমরা সেসময় মেডি ফ্রক বলতাম না, ফ্রক বলতাম। তাতে কুচি দেওয়া থাকতো। সঙ্গে পরতাম একটা কটি। আমার মনে আছে, আমি ক্লাস এইট-নাইনে পড়ার সময়ও ফ্রক পরেছি। কিন্তু কোনো দিন আমার মনে হয়নি এলাকার কোনো বড়ভাই আমার দিকে তাকাবেন, আমাকে পোশাকের বিষয়ে জ্ঞান দেবেন।

জাগো নিউজ: তখনকার আর কিছু মনে পড়ে?ন্যান্সি: পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় ডেক সেটে গান বাজতো। ঈদ এলে তো কথাই ছিল না। এ সময় সারা শহর পোস্টার ছেঁয়ে যেত। বিভিন্ন শিল্পীদের গানের অ্যালবামের পোস্টার। এসব পোস্টার দেখে জানা যেত, কোন শিল্পীর কোন অ্যালবাম আসছে। এই পরিমাণ প্রচার-প্রচারণা ছিল। আমাদের স্কুলের বাইরে দোকান ছিল, টাকা জামিয়ে সেখান থেকে ভিউকার্ড কিনতাম। বইয়ের মাঝখানে ভিউকার্ড রেখে দিতাম। বাবা-মা কখনো বলতেন না, কেন এসব ভিউকার্ড সংগ্রহ করেছো। শৈশব-কৈশোরে সমান তালে খেলা দেখেছি, সিনেমা দেখেছি, গান শুনেছি। আমরা ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে পড়েছি। ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে কোচিং করেছি। আমাদের ছেলেবন্ধু ছিল। আমার তো আগে নিজেকে কখনো অরক্ষিত মনে হয়নি। এখন অরক্ষিত মনে হচ্ছে।

জাগো নিউজ: এই সময়ে আমাদের দেশের নারীরা কতটা নিরাপদ?ন্যান্সি: নারী দিবসে যখন কথা বলছি, তখন বলতে হচ্ছে, এখন শুধু নারী না, সবাইকেই অরক্ষিত দেখি। দেখেন, কারো বাড়িতে হামলা হলো, পুলিশ-আর্মি দাঁড়িয়ে দেখছে। এমনটা কেন হচ্ছে? আমি এর কোনো কারণ খুঁজে পাই না! এসব দেখে আমার মনে হচ্ছে, কাল আমার বাড়িতেও হামলা হতে পারে, আপনার বাড়িতেও হামলা হতে পারে। আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। ড. মোহম্মদ ইউনূস অনেক সম্মানীয় ব্যক্তি, তিনি সত্যিই একটি খারাপ সময়ে দেশের হাল ধরেছেন। সেটার জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞও। কিন্তু সেই সঙ্গে তার কাছে দেশের মানুষ হিসেবে এতটুকুও চাই, মানুষের যে অধিকার রয়েছে, সেগুলো স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করুক।

জাগো নিউজ: সেটি কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন?ন্যান্সি: একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সম্ভব। একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে যে আবদার করতে পারি, তা কিন্তু তার কাছে করতে পারছি না।

জাগো নিউজ: কেউ কেউ বলছেন এ বছর কনসার্ট অনেকটাই কম। আপনি কি ডাক পাচ্ছেন?ন্যান্সি: কনসার্টের জন্য এটা একটা বিপদ সংকেত। অনেক শিল্পীর কাছে খবর নিলে জানতে পারবেন গত মাসে অনেক কনসার্ট বাতিল হয়েছে। আর আমার এমটিতেই গানের লিমিটেড প্রোগ্রাম, করপোরেট প্রোগ্রামই বেশি। সেই সেক্টর এখন একটু চাপে আছে। সেখানে অনুষ্ঠান তেমন হচ্ছে না। এখন দেখার বিষয় ঈদের পর সরকার এ ব্যাপারে কতটুকু দায়িত্ব নেন। কারণ বাংলাদেশ বলতে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এসব বাদ দিয়ে নয়। আমি বাংলাদেশের সৃষ্টির সময় থেকেই যদি চিন্তা করি, তখনো এদেশ শিল্প, সাহিত্য, কৃষ্টির বাইরে ছিল না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কথাও বলি, তখনো কিন্তু গান-কবিতা সবই ছিল। এগুলো বাদ দিয়ে এই দেশ না। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার এদিকে কতটুকু নজর দেবেন তা বলতে পারছি না। আমরা তো আসলে বর্তমান সরকার প্রধানের নামে কোনো সমালোচনা করতে পারছি না। আমরা পজিটিভলি অপেক্ষাই করতে চাই, তিনি ভালো কিছু করবেন। যদিও সেটা হচ্ছে না। তবে আশায় আছি, এই কারণে যে, একটা দীর্ঘ খারাপ সময় পার করার পর মনে হচ্ছে, দেখি না একটু অপেক্ষা করে।

আরও পড়ুন:

‘আধিপত্যের শিকার’ হয়েছি: ন্যান্সি মেয়ের গান গাইলেন ন্যান্সি

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।ন্যান্সি: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এমএমএফ/আরএমডি/এমএস