জাপানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে, এবং এটি আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে। এই দাবানলে এখন পর্যন্ত বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১ হাজার ২০০ এর বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
উত্তর-পূর্ব জাপানের অফুনাতো শহরে প্রায় এক সপ্তাহ আগে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। আবহাওয়াবিদদের মতে, অস্বাভাবিক শুষ্ক শীত ও প্রবল বাতাস এই আগুনের মূল কারণ। সোমবার পর্যন্ত দাবানল ২ হাজার ১০০ হেক্টর ভূমি ধ্বংস করেছে এবং ৮৪টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া আরও ২ হাজার মানুষ আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন ধারণা করছে, এই দাবানলের কারণে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত সপ্তাহে শহরের একটি সড়কে এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যায়।
২ হাজারের বেশি আত্মরক্ষা বাহিনীর (এসডিএফ) সদস্য ও দমকল কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে ঘন বন ও খাড়া পার্বত্য ভূমির কারণে আগুন নেভানোর কাজ কঠিন হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলটি ২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে বিধ্বস্ত হওয়া শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম।
Advertisement
অফুনাতোর মেয়র কিওশি ফুচিগামি বলেছেন, আগুনের শক্তি অনেক বেশি। এটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আমরা শঙ্কিত।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দমকল বাহিনী ও আত্মরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সংখ্যায় মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগুন কিছুটা ছড়িয়ে পড়া অবশ্যম্ভাবী, তবে আমরা নিশ্চিত করব যাতে মানুষের ঘরবাড়ি আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তবে কিছুটা স্বস্তির খবরও রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, বুধবার সকালে তুষারপাত শুরু হতে পারে এবং দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগুন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
জাপানের দাবানল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৮০ এর দশকের পর এটিই সবচেয়ে বড় দাবানল। সম্প্রতি নাগানো প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে আরও কিছু দাবানল দেখা দিলেও সেগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
Advertisement
উত্তর-পূর্ব জাপানে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ শুষ্ক শীত দেখা গেছে। আবহাওয়া সংস্থার মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে অফুনাতোতে মাত্র ২ দশমিক ৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে এই সময়ের গড় বৃষ্টিপাত ৪১ মিমি।
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি সম্পদ গবেষক ইয়োশিয়া টোগে বলেছেন, শুষ্ক আবহাওয়া, প্রবল বাতাস এবং খাড়া পার্বত্য ভূমি দাবানল ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ। এছাড়া, এখানকার শঙ্কু জাতীয় গাছ অত্যন্ত দাহ্য, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৭০ এর দশকে জাপানে দাবানলের সংখ্যা সর্বোচ্চ ছিল, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা কমে এসেছে। তবুও ২০২৩ সালে প্রায় ১,৩০০ দাবানল রেকর্ড করা হয়, যার বেশিরভাগই ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ঘটে, যখন বাতাস প্রবল ও আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএএইচ