• তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির আড়াই থেকে ৩ লাখ পদ সব সময় খালি থাকে• এক মাসের মধ্যে নিয়োগ শুরু করতে সব মন্ত্রণালয়-বিভাগকে চিঠি• বিপুল সংখ্যক পদ খালি থাকায় দাপ্তরিক কাজে বিঘ্ন ঘটছে• তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের নতুন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্যোগ নেই
Advertisement
সরকারি চাকরিতে ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেড (আগের তৃতীয় শ্রেণি) এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ২ লাখ ৬৯ হাজার পদ খালি। বিপুল সংখ্যক পদ খালি থাকায় সরকারি কাজে বিঘ্ন ঘটছে। কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না জনগণ। সরাসরি নিয়োগযোগ্য এ পদগুলো দ্রুত পূরণ করতে চায় সরকার।
এসব পদে নিয়োগের এখতিয়ারাধীন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও দপ্তর-সংস্থাগুলোকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এসব শূন্যপদে নিয়োগের অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে প্রতি বছরই সাড়ে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ পদ খালি ছিল। এ শূন্যপদের বড় অংশটিই ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের। প্রতি বছরই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আড়াই থেকে তিন লাখের মতো পদ খালি থাকছে।
Advertisement
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর চরম বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে প্রশাসন। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা সব কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তাই নিয়োগ কার্যক্রমও অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে।
তারা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্ব লাঘবে নিরলসভাবে কাজ করছে। এ কাজের অংশ হিসেবে শূন্যপদ পূরণে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাগিদ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগের এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর-সংস্থার থাকলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর-সংস্থাগুলো সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে। অর্থাৎ, নিজেরাই নিয়োগ দিতে পারে, এক্ষেত্রে পিএসসিতে যেতে হয় না।- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক
Advertisement
সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবের কাছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
আরও পড়ুন সরকারি সুবিধা পায় না গেজেটভুক্ত ১৩৯৯ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কমিশনের পর কমিশন হয় প্রশাসন থাকে সেই তিমিরেই সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ঘিরে জনপ্রশাসনে ফের অসন্তোষ‘মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীন দপ্তরগুলোতে সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম আগামী এক মাসের মধ্যে শুরুকরণ সংক্রান্ত’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়, দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনা এবং জনসাধারণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীন দপ্তরগুলোতে সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম আগামী এক মাসের মধ্যে শুরু করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকা সবশেষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রশাসনে মোট চার লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ খালি ছিল। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্যপদের সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৯টি। নিয়োগ কার্যক্রম স্থবির থাকায় শূন্যপদের সংখ্যা মোটামুটি একই রকম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৩তম থেকে ১৬তম পর্যন্ত (তৃতীয় শ্রেণি) শূন্যপদ এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৪টি, ১৭তম থেকে ২০তম গ্রেডের চতুর্থ শ্রেণির শূন্যপদ এক লাখ ২৫ হাজার ২৪৫টি।
তৃতীয় শ্রেণির মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা সাত লাখ ৬৫ হাজার ৬২৬টি, এ পদে কর্মচারী রয়েছেন ছয় লাখ ২০ হাজার ৯৭২ জন। অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণির মোট পদ পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৩টি। এ পদের বিপরীতে লোকবল আছে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৮ জন।
এ বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর-সংস্থাগুলো সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে। অর্থাৎ, নিজেরাই নিয়োগ দিতে পারে, এক্ষেত্রে পিএসসিতে যেতে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনতে ও মানুষকে যথাযথ সেবা নিশ্চিতে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব পদে নিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজও শুরু করেছে। তারাও অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। আমরা আমাদের অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোকে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদগুলোতে নিয়োগ দ্রুত শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছি। কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
গত কয়েক বছরের শূন্যপদজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রশাসনে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৩৩৩টি শূন্যপদ ছিল। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিরই খালি পদ ছিল তিন লাখ ৩৪ হাজারটি।
২০২১ সালে প্রশাসনে মোট শূন্যপদ ছিল তিন লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ খালি ছিল দুই লাখ ৭৪ হাজার ২২৮টি।
আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। আমাদের অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোকে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদগুলোতে নিয়োগ দ্রুত শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছি। কার্যক্রম শুরু হয়েছে।- কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান
এর আগের বছর ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি পদ খালি ছিল প্রশাসনে। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্যপদ ছিল দুই লাখ ৯৪ হাজার ৪২২টি।
তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের নতুন ব্যবস্থা কতদূর!তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পছন্দের লোক নিয়োগ, অর্থের বিনিময়ে নিয়োগসহ প্রায়ই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সামনে আসে। কিংবা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মতো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি নির্ধারণে পিএসসিকে প্রস্তাব দিতে বলা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সেই প্রস্তাব জমা দেয় পিএসসি।
সরকারি চাকরিতে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে নতুন কোন কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া হবে, এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দেওয়া প্রস্তাব যাচাই করে সুপারিশ দিতে একটি কমিটিও করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের যাচাই কমিটির সেই প্রতিবেদন পড়ে আছে।
সেই কমিটি পিএসসির মাধ্যমে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের নিয়োগের সুপারিশ করে। গত বছরের ২৮ মে এক অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন তিন মাসের মধ্যে তাদের এই সুপারিশ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও সাংবাদিকদের জানান।
তবে এ সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে বর্তমান সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরএমএম/এএসএ/এএসএম