রমজান মাসে ইফতারে খেজুর খাওয়ার রীতি বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। এ প্রথা শুধু ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে মানা হয়, এমন নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে নানান বৈজ্ঞানিক, স্বাস্থ্যগত, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কারণ। জেনে নিন খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙার কারণগুলো-
Advertisement
দীর্ঘ সময় রোজা রাখার পর খেজুর দেহকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে, এটি একটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস। রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার কারণে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়, যা ক্লান্তি এবং অবসাদের কারণ হতে পারে। খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক সুগার (যেমন ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ) রক্তে দ্রুত শোষিত হয়ে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়। এতে হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং রোজাদারকে সতেজ রাখে।
খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রোজার সময় অনেকেরই হজমের সমস্যা দেখা দেয়, বিশেষ করে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। খেজুরে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এছাড়া, খেজুরে থাকা পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কপারের মতো খনিজ উপাদান হৃদপিণ্ড ভালো রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
খেজুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানও রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি দেহের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, খেজুরে থাকা ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
Advertisement
শুধু স্বাস্থ্যগত কারণেই খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙা হয়, এমন নয়। একই সঙ্গে এই চর্চার মধ্যে আছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীও মূল্যবোধের প্রভাব। রমজান মাসে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করা একটি সামাজিক ঐতিহ্য, আর খেজুর এই ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু একটি খাবারই নয়, বরং সম্প্রীতির প্রতীক।
ইতিহাসে দেখা যায়, ভৌগলিক কারণে মরুভূমিতে অন্যান্য ফলমূল পাওয়া খুব কঠিন বিষয় ছিলো। তাই সেখানে খেজুরই ছিল প্রধান খাদ্য। ওই এলাকায় এটি সহজলভ্য এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তাই প্রাচীনকাল থেকেই খেজুরকে রোজা ভাঙার জন্য আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও খেজুরের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দেয়।
৩. খেজুরের পুষ্টিগুণখেজুর একটি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। এটি শক্তি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল সরবরাহ করে। খেজুরে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য ভালো এবং এটি অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
খেজুরে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশির শিথিলতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে। এটি রোজার সময় শরীরের পানিশূন্যতা পূরণেও সাহায্য করে। খেজুরে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
Advertisement
এই রমজানেও ইফতারের সময় খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙুন, সুস্থ থাকুন। খেজুরের বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা উপভোগ করুন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে লালন করুন।
এএমপি/এমএস