ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতীক্ষার রমজান মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। বছর ঘুরতে ঘুরতে গত কয়েকবার থেকে গরমকালেই রোজা রাখছেন সবাই। এবছর বসন্তকালে রমজান মাস হলেও দিনগুলো কিন্তু বেশ বড়ই আছে। প্রায় ১২ ঘণ্টার এই রোজার সময় পরিবারের সবার জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন খাবারের ব্যবস্থা করা যেকোন রোজাদার ব্যক্তির জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
Advertisement
তাই রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই কিছু খাবারের অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন। এমন অনেক খাবার আছে যা স্বাদ ও পুষ্টিগুণ রক্ষা করেই ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। জেনে নিন এমন কিছু খাবারের আইডিয়া-
১. লেবুর শরবতশরবত ছাড়া ইফতারের কথা ভাবাই মুশকিল। লেবু রস করে বরফের ট্রে-তে করে ফ্রিজার বা ডিপ-ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা খুব সহজ। এভাবে রস তৈরি করে ঠান্ডা করা থাকলে প্রতিদিন শরবত বানানোর অনেকটা সময় বেঁচে যাবে। শুধু মানুষের সংখ্যা দেখে আইস কিউব বের করে নিলেই দুই মিনিটে শরবত তৈরি।
২. ফলের সালাদফলের সালাদ ইফতারের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং রিফ্রেশিং পদ। আপেল, আঙ্গুর, কমলা, ডালিম ইত্যাদি ফল কেটে মিশিয়ে লেবুর রস দিয়ে সংরক্ষণ করুন। এটিকে এয়ারটাইট বক্সে ফ্রিজে রাখুন। ইফতারের সময় সরাসরি পরিবেশন করুন।
Advertisement
সারাদিন রোজা রাখার পর ছোলা শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য একটি চমৎকার উৎস। পানিতে ভেজানো ছোলা মসলাসহ সেদ্ধ করে প্রতিদিনের জন্য ছোট ছোট বক্সে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। পরিবেশনের আগে হালকা তেলে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে। এই পদটি একসঙ্গে ৫-৭ দিনের জন্য রেডি করে রাখতে পারেন।
৪. ওটস খিচুড়িওটস ফাইবার, প্রোটিন এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের উৎস। এটি আগে থেকে রান্না করে ফ্রিজে রাখা যায়। ওটস খিচুড়ি বানানোর সময় সবজি, যেমন গাজর, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, যোগ করলে পুষ্টিগুণ বাড়ে। এটিকে এয়ারটাইট কন্টেইনারে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। গরম করার সময় সামান্য পানি যোগ করে মাইক্রোওয়েভ বা স্টোভে গরম করে নিন।
৫. স্যুপবাসায় বানানো সবজি অথবা মুরগির স্যুপ অল্প সময়ে তৈরির ব্যবস্থা করতে পারেন ব্রথ তৈরি করে রাখার মাধ্যমে। অবসর সময়ে পছন্দের সবজি অথবা মুরগি জাল দিয়ে ব্রথ তৈরি করে ছোট ছোট সিলিকন বা ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের পাত্রে ফ্রিজারে রেখে দিন। প্রতিবার স্যুপ খাবার জন্য একটি করে ব্রথের কিউবই যথেষ্ট।
৬. সবজিসবজি স্টিম করে কয়েকদিনের জন্য ফ্রিজে রাখা যায়।
Advertisement
ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস। মুগ ডাল বা মসুর ডাল ভিজিয়ে বেটে মসলা দিয়ে পাকোড়া বা কাটলেট বানিয়ে ফ্রিজে রাখা যায়। এগুলো সেহরির সময় গরম করে খাওয়া যাবে। এয়ারটাইট কন্টেইনারে রাখুন এবং ডিপ-ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
৮. ডিমের কোরমাডিমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ আছে। ডিম সিদ্ধ করে বা কুরমা বানিয়ে ফ্রিজে রাখা যায়। কুরমা বানানোর সময় টমেটো, পেঁয়াজ এবং মসলা দিয়ে রান্না করুন। ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। গরম করার সময় সামান্য তেল দিয়ে হালকা ভেজে নিন।
৯. সমুচা বা স্প্রিং রোলসমুচা বা স্প্রিং রোল ইফতারের জনপ্রিয় আইটেম। এগুলো আগে থেকে বানিয়ে ফ্রিজারে রাখা যায়। সবজি, চিকেন বা মটন দিয়ে ভর্তি করে বানানোর পর এয়ারটাইট কন্টেইনারে রাখুন। ইফতারের সময় হালকা তেলে ভেজে নিন।
১০. কাবাবযেকোনো মাংসের কাবাব আগে থেকে ম্যারিনেট করে ফ্রিজে রাখা যায়। ম্যারিনেট করার সময় দই, আদা-রসুনের পেস্ট এবং মসলা ব্যবহার করুন। এগুলো ফ্রিজারে সংরক্ষণ করুন এবং ইফতারের সময় গ্রিল বা ফ্রাই করে নিন।
দীর্ঘস্থায়ী খাবারের আইডিয়াকিছু খাবার আছে যা ১০-১৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং রমজানের সময় খুবই কাজে লাগে-
১. আচার ও চাটনিআচার এবং চাটনি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। আম, লেবু, টমেটো বা মরিচের আচার বানিয়ে রাখুন। এগুলো সেহরি বা ইফতারের সময় স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। এয়ারটাইট জারে সংরক্ষণ করুন এবং ঠান্ডা ও শুকনো জায়গায় রাখুন।
২. ড্রাই ফ্রুটস ও বাদাম মিক্সড্রাই ফ্রুটস এবং বাদাম পুষ্টিগুণে ভরপুর। কিসমিস, খেজুর, আখরোট, কাঠবাদাম ইত্যাদি মিশিয়ে এয়ারটাইট কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন। এগুলো সেহরি বা ইফতারের সময় খেতে পারেন।
৩. বাসায় তৈরি গ্রানোলা বারগ্রানোলা বার এনার্জির ভালো উৎস। ওটস, মধু, ড্রাই ফ্রুটস এবং বাদাম মিশিয়ে গ্রানোলা বার বানিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। হঠাৎ শক্তির অভাবে এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
সংরক্ষণ করার জন্য প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন। এতে করে সারাদিন শরীর সতেজ থাকবে এবং রোজা রাখা সহজ হবে। এছাড়া বক্সে খাবার সংরক্ষণ করার সময় তারিখ লিখে রাখুন। এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে খাবার কতদিন সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং কখন ব্যবহার করা উচিত। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে সরাসরি গরম করার আগে কিছুক্ষণ বাইরে রাখুন। মাইক্রোওয়েভ বা স্টোভে গরম করার সময় খাবারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন যাতে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
এই পদ্ধতিগুলো মাথায় রেখে এখন থেকেই কিছু খাবারের পদ তৈরি করে সংরক্ষণ করে রাখুন। এতে রোজার সময় আপনার সময় ও শক্তি উভয়ই বাঁচবে।
এএমপি/এমএস