লাইফস্টাইল

যেভাবে শুরু করবেন আপনার বারান্দা বাগান

শহুরে জীবনে যান্ত্রিকতা আর ব্যস্ততার মাঝে একটু সবুজের সান্নিধ্যে কাটানোর সুযোগ পাওয়া কঠিন। অফিসের কাজ, ট্রাফিক জ্যাম, আর নাগরিক জীবনের চাপে আমরা প্রায় ভুলেই যাই, প্রকৃতির সান্নিধ্য কতটা জরুরি। চাইলেই তো আর গ্রামের বাড়িতে বাগান করার সুযোগ পান না সবাই। তাই বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ছোট্ট বারান্দাটাই হতে পারে আপনার ব্যক্তিগত বাগান। বারান্দা বাগান এমন একটা ট্রেন্ড, যা শহুরে জীবনে সবুজের পরশ বয়ে আনছে।

Advertisement

যেভাবে শুরু করবেন

বারান্দা বাগান করার কথা ভাবতেই হয়তো মনে করছেন ‘আমি তো বাগান করার কিছুই জানি না!’ চিন্তা করবেন না, বারান্দা বাগান শুরু করা খুব সহজ। শুধু একটু ইচ্ছা আর ধৈর্য থাকলেই চলবে। চলুন জেনে নিই কীভাবে শুরু করবেন আপনার বাড়ির সবুজ কোন।

১. জায়গা প্রথমেই আপনার ব্যালকনির জায়গাটা ভালো করে দেখে নিন। কতটা জায়গা আছে, সূর্যের আলো কতটা পড়ে, বাতাস চলাচল কেমন- এ বিষয়গুলো জানা জরুরি। সাধারণত ৪-৬ ঘণ্টা সূর্যের আলো পেলেই বেশিরভাগ গাছ ভালো থাকে।

২. গাছের টববারান্দা বাগানে পাত্র বা গাছের টব ঠিকমতো নির্বাচন করা খুব জরুরি, কেননা গাছের প্রকৃতি অনুযায়ী আলাদা ধরনের টব প্রয়োজন হতে পারে। প্লাস্টিক, টেরাকোটা, সিমেন্ট বা হ্যাংগিং পট, যে কোনো কিছু ব্যবহার করতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, পাত্রের নিচে যেন পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র থাকে।

Advertisement

৩. মাটি ও সারভালো মানের মাটি আর জৈব সার ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে নার্সারি থেকে প্রস্তুত মাটিও কিনতে পারেন।

৪. গাছ এবার আসে গাছ পছন্দ করার পালা। বারান্দায় সাধারণত ছোট গাছ বা হার্বস লাগানো ভালো। যেমন: টমেটো, মরিচ, ধনিয়া, পুদিনা, তুলসী, অ্যালোভেরা; আবার গাঁদা, গোলাপ, বাগানবিলাসের মতো ফুলের গাছও ভালো হয়। কেউ কেউ ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট, পথোস, পাতাবাহার-জাতীয় গাছ বেশি পছন্দ করেন। এগুলো মাঝেমধ্যে আপনি ঘরের ভেতরেও রাখতে পারবেন। এ ছাড়াও অর্কিড আপনার ঘরকে একটি প্রিমিয়াম লুক দিতে পারে।

৫. পানি দেওয়াগাছের প্রজাতি অনুযায়ী পানির পরিমাণ ঠিক করুন। বেশি পানি দিলে গাছের শেকড় পঁচে যেতে পারে, আবার কম দিলে শুকিয়ে যাবে। তাই নিয়মিত জল দেওয়ার অভ্যাস করুন। তবে আপনার কাজের রুটিন যদি অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়, সেক্ষেত্রে এমন গাছ নির্বাচন করতে পারেন, যেগুলোতে প্রতিদিন পানি না দিলেও চলে।

৬. যত্ন নিনগাছের বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত যত্ন নিন। মাঝে মাঝে গাছের ডালপালা ছাঁটুন, পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। একটু করে মাটি নিড়িয়ে দিন। অনলাইনে বাগান করা কমিউনিটিতে যুক্ত হোন। এতে নতুন আইডিয়া পাবেন।

Advertisement

আপনার থেরাপি কর্নার: বাগান করা শুধুই শখ নয়

বারান্দা বাগান শুধু শখের বিষয়ই নয়, এটা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী। গবেষণা বলছে, বাগান করা মানসিক চাপ কমাতে, মুড ভালো করতে এবং এমনকি ডিপ্রেশন দূর করতেও সাহায্য করে। অনেকটা যেন আপনার ব্যক্তিগত থেরাপিস্ট এই বাগান। পরিবেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জেনে নিন বাগান করার অন্যান্য উপকারীতা।

১. মানসিক চাপ কমায়২০১১ সালে নেদারল্যান্ডসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বাগান করেন, তাদের কর্টিসল লেভেল বা স্ট্রেস হরমোন কম থাকে। গাছের সঙ্গে সময় কাটালে মস্তিষ্ক রিল্যাক্স হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

২. মুড বুস্টারবাগান করার সময় আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মুড ভালো রাখে। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত ২-৩ ঘণ্টা বাগান করেন তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি লেভেল কম থাকে।

৩. শারীরিক সক্রিয়তাবাগান করার সময় আমাদের শরীরের নড়াচড়া হয়, যেমন: মাটি খোঁড়া, গাছে পানি দেওয়া, পাত্র সরানো ইত্যাদি। এগুলো আমাদের শরীরকে সক্রিয় রাখে।

৪. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোপ্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে আমাদের মন শান্ত হয়। বারান্দা বাগান আপনাকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যায়, যা শহুরে জীবনে একধরনের থেরাপির মতো কাজ করে।

বাগান করার উপকারিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানান গবেষণা হয়েছে। বারান্দা বাগানের ক্ষেত্রে এই গবেষণাগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ, শহুরে জীবনে আমরা প্রকৃতি থেকে দূরে থাকি। বারান্দা বাগান আমাদের সেই দূরত্ব কমাতে সাহায্য করে।

তাই বারান্দা বাগান শুধু একটি শখই নয়, এটা একটা লাইফস্টাইল। ছোট্ট জায়গায় সবুজের পরশ, গাছের সঙ্গে সময় কাটানো, আর নিজের হাতে ফল বা ফুল ফলানো, এগুলো আমাদের জীবনে একধরনের তৃপ্তি আনে।

তাই আর দেরি কেন? আজই শুরু করুন আপনার বারান্দা বাগানের যাত্রা। সবুজের ছোঁয়ায় আপনার জীবন হয়ে উঠুক আরও প্রাণবন্ত।

আরও পড়ুন: কাজের নেশায় জীবন হারাচ্ছেন না তো কাছের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন যেভাবে অবসর সময় কাটাবেন যে কারণে

এএমপি/আরএমডি/এএসএম