দেশে ইন্টারনেটের খরচ অনেক বেশি। কারণ ইন্টারনেট ব্যয়ের সিংহভাগই চলে যায় সরকারকে কর দিতে গিয়ে। ফলে সরকার করহার না কমালে ইন্টারনেটের দাম কমবে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়বে না।
Advertisement
অন্যদিকে এসএমই উদ্যোক্তাদের সামনে আগানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে অর্থায়ন। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এসএমই অর্থায়ন করলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। এজন্য একটি আলাদা এসএমই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন আলোচকেরা।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ডিজিটাল রূপান্তর এবং এমএসএমই বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
Advertisement
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী বলেন, অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে ভোক্তাদের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছায়। প্রতিটি ধাপেই ভালো অঙ্কের অর্থ কেটে রাখা হয়। ইন্টারনেটের দাম না কমার পেছনে এটি অন্যতম বাধা।
আমরা নেটওয়ার্ক সিস্টেমের জটিলতা কমিয়ে তা সহজ করার কাজ করছি। আশা করছি, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে কিছু অগ্রগতি দেখা যাবে। এ ছাড়া স্টারলিংকের বিষয়ে বিটিআরসি কাজ করছে বলে জানান তিনি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর ও বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন। তারা দুজনেই টাস্কফোর্সের সদস্য।
ফাহিম মাশরুর বলেন, বাংলাদেশে একজন ব্যবহারকারী গড়ে সাড়ে ছয় গিগাবাইট (জিবি) মোবাইল ডেটা ব্যবহার করেন। যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গড়ে ১৫০ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এতে ধারণা করা যায় যে শহরের তুলনায় গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ অনেক কম। এর পেছনে তিনটি প্রধান কারণ হচ্ছে- ব্যবহারকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা, সরবরাহ শৃঙ্খলে অধিক ধাপ এবং ডেটা পরিবহনের উচ্চ ব্যয়।
Advertisement
ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা একদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি; অন্যদিকে, উচ্চ করারোপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল সুবিধা নেওয়া থেকে দূরে রাখছি। মুঠোফোনের ডেটা ও কলরেটে ৪০ শতাংশের বেশি কর নেয় সরকার। একটি সরাসরি ভোক্তাদের থেকে নেওয়া হয়। এভাবে বাড়তি শুল্ক থাকলে ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারতো কমাবেই।
শেয়ারট্রিপের প্রধান নির্বাহী সাদিয়া হক বলেন, বর্তমানে ব্যবসা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয়েছে। তাই এসএমই খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু আমরা এই বিনিয়োগ আসার মতো পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। এই পরিবেশ তৈরি করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে।
অন্যদিকে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য একটি আলাদা এসএমই ব্যাংক করার পরামর্শ দিয়েছেন মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, এসএমএস নীতিমালায় আলাদা এসএমই ব্যাংকের কথা বলা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এসএমি বিভাগ থাকলেও সেগুলো পুরোপুরি এসএমইবান্ধব না। অথচ দেশে এসএমএস খাতের পরিসর বাড়ছেই। এমন বাস্তবতায় আলাদা একটি এসএমই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
মনজুর হোসেন বলেন, আমার বিবেচনায় দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংককে এসএমই ব্যাংকে রূপান্তর করা যায়। কারণ এসএমইদের নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের।
এসআরএস/এমআইএইচএস