সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে সাবিনারা থাকবেন না- এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই নতুন অধিনায়ক হিসেবে এগিয়ে ছিলো ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকার প্রান্তির নাম। ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারেরও এক নম্বর পছন্দ ছিল সাতক্ষীরার এই যুবতি।
Advertisement
তবে সফরের জন্য ২৩ সদস্যের দল ঘোষণার সময় তিনি অধিনায়ক হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করেননি। রোববার সকালে ব্রাদার্স মাঠে অনুশীলনের সময় নতুন অধিনায়ক হিসেবে আফঈদাকে অন্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন কোচ। বিকেলে বাফুফে ভবনে নতুন অধিনায়ককে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি।
আফঈদা এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এখন বড় দায়িত্ব বিকেএসপির সাবেক এই শিক্ষার্থীর কাঁধে।
আফঈদা এমন এক সময় জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন যখন দেশের নারী ফুটবলে টালমাটাল অবস্থা। একঝাঁক নতুন খেলোয়াড় নিয়ে সিনিয়র দলের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে এ সময়ে দেশের সেরা ডিফেন্ডারের।
Advertisement
দায়িত্ব, চাপ ও নতুন দল নিয়ে বাংলাদেশের কতটা ভালো করার সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাতীয় দলের নতুন এই অধিনায়ক।
জাগো নিউজ: প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের অধিনায়ক হলেন। কোনো চাপ অনুভব করছেন?
আফঈদা: আমি বয়সভিত্তিক দলে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। এখন জাতীয় দলের দায়িত্ব আসছে, চাপতো একটু লাগবেই।
জাগো নিউজ: চাপ কি এরকম যে, অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় নেই, একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে অধিনায়কত্ব পাওয়া। এমন কিছু?
Advertisement
আফঈদা: আসলে চাপটা সে রকম না। মাঠে গিয়ে দলকে আমি কিভাবে খেলাবো, দল কেমন খেলবে, আমি কিভাবে সাপোর্ট করতে পারবো সবাইকে; এই চাপটাই আছে। এ ছাড়া বাড়তি কোনো চাপ নেই।
জাগো নিউজ: আপনি আগে বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়ক ছিলেন। জাতীয় দলের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। সেটা কি আপনার সাথে কোনো আলোচনা করে?
আফঈদা: না। আলোচনা করে কিছু করা হয়নি। কোচ আমাকে বলেছেন, তুমি সংবাদ সম্মেলনে যাবা। তুমি অধিনায়ক। হয়তো বাকি কোচদের সাথে, টিম ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন তাদের সাথে আলোচনা করে আমাকে অধিনায়কত্ব দিয়েছেন।
জাগো নিউজ: আপানাকে যখন অধিনায়কত্ব দেওয়া হলো তখন এমন কিছু কি ছিল যে, যেমন আপনি বলেছেন- আমাকে দিয়েন না, অন্য কাউকে দিন?
আফঈদা: না। এমন কিছু ছিল না। কারণ, ফেডারেশন এবং কোচ যাকে অধিনায়ক করবেন তাকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা তো ফেডারেশনের অধীনে কাজ করি।
জাগো নিউজ: আপনি কখন জানলেন যে অধিনায়ক হয়েছেন?
আফঈদা: আজ (রোববার) সকালের অনুশীলনের সময় প্রধান কোচ পিটার বাটলার আমাকে বলেছেন। ব্রাদার্স মাঠে অনুশীলন শুরুর আগে তিনি সবার সামনে অধিনায়ক হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করেন।
জাগো নিউজ: কয়েকদিন ধরেই তো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছিল আপনি অধিনায়ক হচ্ছেন। আপনি কি আগে বুঝতে পেরেছিলেন?
আফঈদা: আসলে আমি সেটা জানি না। দেখিওনি। আমি এ নিয়ে ভাবিওনি।
জাগো নিউজ: অধিনায়ক ঘোষণার পর আপনার বাবা-মা এবং অন্যদের প্রতিক্রিয়া কি। তারা কি বললেন?
আফঈদা: বাসা থেকে আগে কিছু বলেনি। আমার বাবা-মা অনেকের কাছ থেকে শুনেছেন যে, আমি অধিনায়ক হবো। তবে তারা আমাকে কিছু বলেননি। আজ আমি বাসায় কথা বলার পর তারা জানালেন, আমরা একটু শুনেছিলাম। শিউর না হওয়ায় তোমাকে কিছু বলিনি। তারা অনেক খুশি।
জাগো নিউজ: কখনো ভেবেছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক হবেন?
আফঈদা: এটা ভাবিনি যে, এত তাড়াতাড়ি অধিনায়ক হবো। যেহেতু অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলাম, তাই ভেবেছিলাম ভবিষ্যতে যদি হতে পারি। সত্যি কথা কি, আমি ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করে রেখেছিলাম। এখনই হবো সেটা ভাবিনি।
জাগো নিউজ: আপনি বলছিলেন যে, সেভাবে চাপ নিচ্ছেন না; কিন্তু সবাই তো এই সিরিজের দিকে তাকিয়ে থাকবে। প্রথম অধিনায়কত্ব। তারপর অভিষেক হতে যাচ্ছে বিদেশের মাটিতে। ভালো রেজাল্ট না করতে পারলে অনেকে অনেক কথা বলা শুরু করবে। তাই আপনার কি মনে হয় না যে, এখানে ভালো খেলতেই হবে। নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণের কোনো বিষয় আছে কি না?
আফঈদা: আসলে চাপ নিলেই চাপ মনে হবে। আর চাপ না নিলে চাপ মনে হবে না। এটাই হচ্ছে বিষয়। আমরা এতদিন ধরে অনুশীলন করছি এই দুই ম্যাচের জন্য। সকাল-বিকাল অনুশীলনের পাশাপাশি জিমও করছি। তাই আমরা আশা করি, ভালো কিছুই হবে।
জাগো নিউজ: এই দলে বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই আপনার জুনিয়র। অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেটা একটা স্বস্তি কিনা?
আফঈদা: এটা স্বস্তি বলতে পারেন। হয়তো দায়িত্ব পালন করাটা একটু সহজই হবে। ওরা আমার ছোট বলেই যা বলবো সেটা করবে। আর দলে সিনিয়র খেলোয়াড় থাকলে একটু ভয় কাজ করতো যে, আমি যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছি সেটা তারা মানবে কি মানবে না।
জাগো নিউজ: আপনাকে অধিনায়ক ঘোষণার পর সাবিনা খাতুন আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন?
আফঈদা: আপুর (সাবিনা) সাথে দেখা হয়নি। তাই তাকে জানানো হয়নি। কারণ, তিনি ক্যাম্পে এখন নেই। তাকে আমি বলবো। ফোন তো আমাদের হাতে সব সময় থাকে না। তাই তাকে ফোন দেওয়া হয়নি।
জাগো নিউজ: সিনিয়র যারা বাসায় গেছেন তারা কি আপনাদের বলে গেছেন?
আফঈদা: আসলে তাদের সাথে আমাদের দেখা কমই হয়েছে। কারণ, আমরা অনুশীলন শেষে রুমে ফিরে ঘুমাই বা বিশ্রাম নেই। পরের সেশন থাকে। তাই সেভাবে দেখা হয় না।
জাগো নিউজ: বিদ্রোহীদের সাথে আপনাদের দেখা কি একদমই হতো না?
আফঈদা: আমাদের খাওয়া-দাওয়া এক সাথেই হতো। সবাই মিলেই ডাইনিংয়ে খেতে যেতাম।
জাগো নিউজ: শুনেছি, বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলার আপনাকে খুব টার্গেট করেছিলেন তাদের দলে নিতে। আপনি কিভাবে অনুশীলনের পক্ষে থাকলেন। ওরা কি কোনো চাপ সৃষ্টি করতেন?
আফঈদা: আসলে সঠিক আর ভুল কোনটা সেটা জানি না। আমার কাছে যেটা সঠিক মনে হয়েছে সেটাই করেছি। তারা কোনো চাপাচাপিও করেনি।
জাগো নিউজ: যারা ওদের দাবির পক্ষে না থেকে অনুশীলন করেছেন তাদের নাকি নানান কথা বলা হতো। বেঈমানও বলা হতো। ঠিক?
আফঈদা: আমাদের সামনে এমন কথা কেউ বলেননি। অন্তত আমার কানে এমন কিছু আসেনি।
জাগো নিউজ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ আরব আমিরাতের বিপক্ষে এই দুই ম্যাচ নিয়ে আপনি কি ভাবছেন? কি ধরণের রেজাল্ট করে ফিরলে অধিনায়ক হিসেবে আপনি খুশি হবেন?
আফঈদা: আমি মাথার মধ্যে একটা জিনিস সাজিয়েছি যে, আমাদের দল ভালো খেলবে। পেছন থেকে যতটা সাপোর্ট দেওয়ার আমি সেটা চেষ্টা করবো। আমাদের লক্ষ্য থাকবে গোল না খাওয়া। গোল না খেয়ে গোল দেওয়ার চেষ্টা থাকবে আমাদের।
জাগো নিউজ: কোচ বলেছেন, সিনিয়রদের জন্যও দরজা খোলা আছে। সিনিয়ররা ক্যাম্পে যোগ দিলে, জাতীয় দলে ফিরলে তাদের মধ্যে থেকে কাউকে অধিনায়কত্ব দিতে পারেন কোচ। নাও দিতে পারেন। দিলে কেমন লাগবে আপনার?
আফঈদা: এমন হলে আমার কাছে খারাপ লাগবে না। কারণ, তারা সিনিয়র। আমি মনে করি, তারা আমার চেয়ে বেশি যোগ্য হতে পারেন। যোগ্যও তারা। বেশিদিন তো হয়নি, আমি সিনিয়র দলে খেলছি। ওনারা নেই বলেই হয়তো আমার কাছে দায়িত্বটা এসেছে। তারা ফিরলে তাদের কারো কাছে যেতে পারে, সেটাই স্বাভাবিক।
জাগো নিউজ: সিনিয়র দলে অভিষেক হওয়ার পর থেকে তাদের সাথে খেলছেন। এক সাথে থাকছেন। মাঠে তাদের কি মিস করবেন?
আফঈদা: মিস করার কোনো কিছু নেই। আমি খেলতে পারলেই হলো। আমি এখানে খেলতে এসেছি। ফেডারেশন আমাকে যে দায়িত্ব দেবে পালন করবো।
জাগো নিউজ: আপনি স্টপার পজিশনে খেলেন। গোলও তো করেন মাঝেমধ্যে তাই না?
আফঈদা: হ্যাঁ। জাতীয় দলের জার্সিতে আমার ২টা গোল আছে। একটা করেছিলাম সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে, আরেকটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে।
জাগো নিউজ: আপনারা বাফুফের যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, সেই চুক্তিপত্র কি দেখে স্বাক্ষর করেছেন? কঠিন কোনো শর্ত দেওয়া হয়েছে আপনাদের?
আফঈদা: আমরা চুক্তিপত্র পুরোটা দেখে-বুঝে তারপর স্বাক্ষর করেছি। আর কঠিন শর্ত বলতে তেমন কিছু নেই। শৃঙ্খলার কথা বলা হয়েছে। আসলে ফেডারেশনের অধীনে থাকতে হলে ডিসিপ্লিনতো মানতেই হবে। ফেডারেশন এমন কোনো শর্ত দেয়নি যাতে আমাদের এখানে থাকতে কষ্ট হবে।
জাগো নিউজ: জাতীয় দলের সামনে বড় লক্ষ্য সাফে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়া। শেষ পর্যন্ত যদি সিনিয়রদের ফিরে আসা না হয় তাহলে এই দল নিয়ে আপনাকে সাফের নেতৃত্ব দিতে হবে। কোচতো বলেই দিয়েছেন, তিনি লম্বা সময়ের কথা চিন্তা করেই সব করছেন। আপনার কি মনে হয় এমন একটি দল নিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতা সম্ভব?
আফঈদা: চেষ্টা করলে সবই হয়। এখনো হাতে অনেক সময় আছে। আমরা চেষ্টা করবো যাতে শিরোপা ধরে রেখে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। সিনিয়র আপুরা ফিরলে আরো ভালো হয়। আমরা আরো খুশি হবো। আমিও চাই, আমরা এক সাথে আগের মতো খেলি। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব করে চাই যে, ওনারা আসুক। তারা তো দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।
জাগো নিউজ: বড় বোনের ট্রায়ালে সঙ্গী হয়ে গিয়ে নাটকীয়ভাবে আপনিই ফুটবলার হলেন। আপনার বোন ফুটবলার হতে পারলেন না। সেই ঘটনা যদি একটু বলেন।
আফঈদা: আমার বড় বোন বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য সাতক্ষীরায় ট্রায়াল দিয়েছিল। তাকে এক মাসের ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত করেছিল বিকেএসপি। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। পরের যখন সাভার বিকেএসপিতে সাত দিনের ফাইনাল ট্রায়াল হয় তখন বাবা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বড় বোন কোথায় থাকে, কোথায় ট্রায়াল দেয় সেসব দেখানোর জন্য।
আমিও বোনের সাথে ট্রায়াল দিয়েছিলাম তখন। সাতক্ষীরা থেকে ফিরে আসার এক সপ্তাহ পর বিকেএসপি রেজাল্ট দেয়। বিকেলে আমরা মাঠে প্র্যাকটিস করছিলাম। বাবার কাছে বিকেএসপির এক স্যার ফোন দিয়ে জানান- একটি সুখবর আছে, একটি দুঃখের খবর আছে। সুখের খবর হলো- আপনার ছোট মেয়েকে ভর্তি করাবো, বড় মেয়েকে করাতে পারবো না।
জাগো নিউজ: তখন আপনার বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল মনে আছে?
আফঈদা: বাবার কষ্ট লেগেছিল হয়তো। কারণ, বড় মেয়েকে ফুটবলার বানানোর জন্য বিকেএসপিতে ট্রায়াল দেয়ালেন, তার হলো না। আবার আমার সুযোগ হওয়ায় একটু ভালোও হয়তো লেগেছে।
জাগো নিউজ: বিকেএসপিতে ভর্তির পর শুরুর দিকের সময়গুলোর কথা যদি বলতেন।
আফঈদা: তারপর আমি বিকেএসপিতে গেলাম। তখন বড় বোন আবার চার মাসের ট্রায়ালের ক্যাম্পে আছে। বাবা-মা আমাকে রেখে আসলো বিকেএসপিতে। বোন ছিল বলে একটু সাহস পেয়েছিলাম। তার সাথে সকাল-বিকাল দেখা হতো। তখন সাতক্ষীরার কেউ ছিল না। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর ২০১৬ সালে বিকেএসপির হয়ে ভারতে যাই সুব্রত কাপ খেলতে। আমি পরপর চারবার সুব্রত কাপ খেলতে গিয়েছিলাম। ২০১৯ সালে আমি ৩২ দলের মধ্যে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলাম।
জাগো নিউজ: জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে কবে আপনার অভিষেক হয়েছিল?
আফঈদা: ওই বছরই। মানে ২০১৯ সালে সুব্রত কাপে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার বছরে। তখন অনূর্ধ্ব-১৫ দল দিয়ে লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার অভিষেক হয়। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে খেলছি। এ বছরই আমি শেষবার অনূর্ধ্ব-২০ দলে খেলতে পারবো।
জাগো নিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন?
আফঈদা: এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইনি। ২৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা আছে। আরব আমিরাত গেলে তো পরীক্ষা দিতে পারবো না। বাফুফে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে আমাদের খেলতে যাওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয় যদি অন্য কোনো সুযোগ করে দেয় তাহলে ভালো।
জাগো নিউজ: নাটকীয়ভাবে আপনি বিকেএসপিতে ফুটবল বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন কি ছিলো?
আফঈদা: বাবার কাছে আমরা দুই বোন অনুশীলন করতাম। তার কাছেই খেলা শিখেছি। আমি ছোট ছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল বড় বোন ফুটবল খেলবে, আমি তার পেছনে পেছনে আসবো। তার খেলা দেখবো। বড় বোন ফুটবলে সুযোগ না পেয়ে বক্সিংয়ে চলে যাবে আর আমি ফুটবলার হবো সেটা অন্যরকম হয়ে গেলো।
জাগো নিউজ: আপনার বাবার তো স্বপ্ন ছিল দুই মেয়েকেই ফুটবলার বানানো। আপনি হয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে বাবাদের স্বপ্ন তো শেষ হওয়ার না। এখন আপনার লক্ষ্য কি?
আফঈদা: এখন আমার একটাই লক্ষ্য বাবার স্বপ্ন আমাকে পূরণ করতেই হবে। এখন আমার ওপর বড় দায়িত্ব পড়েছে। আমাকে পরিশ্রম বাড়াতে হবে। আমাকে আরো ভালো খেলতে হবে। আরো বড় ফুটবলার হতে হবে।
জাগো নিউজ: সাবিনা খাতুনের অধিনায়কত্ব দেখেছেন। সেখান থেকে আপনি কোন বিষয়টি নিজের দায়িত্বের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চান?
আফঈদা: সাবিনা আপু সবাইকে নিয়ে চলতেন। একটা দলকে এক সাথে করে রাখা। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এই দায়িত্বই সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করবো এবং যতদিন পারফরম্যান্স করতে পারবো থাকতে পারবো। পারফরম্যান্স করতে না পারলে থাকতেও পারবো না। তখন আমাকে কেউ পাত্তাই দেবে না। খেলতে পারলে সবাই পাত্তা দেবে সেটাই স্বাভাবিক। যতদিন খেলবো ভালো পারফরম্যান্সের চেষ্টা করবো। খেলতে না পারলে সম্মানজনক একটা বিদায় চাইবো।
জাগো নিউজ: বেশ কিছু নারী ফুটবলার আছেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সক্রিয় থাকেন। আপনাকে সেভাবে দেখা যায় না। আপনি কি এসব এড়িয়ে চলেন?
আফঈদা: আসলে আমি এসবে বেশি আগ্রহী নই। কারণ, ছবি তুলতে আমি বেশি পছন্দ করি না। আমার বাবাও সবসময় বলেন, ছবির পেছনে থাকি না কেন? আমাকে নাকি দেখা যায় না ছবিতে। আমি বাবাকে বলি, ছবি তুলতে আমার ভালো লাগে না। টিকটক, রিল- এসবও আমার পছন্দ না। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি সক্রিয় না। আমার ধ্যান-জ্ঞান খেলার মধ্যে এবং আল্লাহর এবাদত করা।
জাগো নিউজ: এই চারদিন তো আপনার ভালোই গেলো। একুশে পদক নিলেন, অধিনায়কত্ব পেলেন এবং আপনার মা খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।
আফঈদা: হ্যাঁ। তিনদিন আগে একুশে পদক নিয়েছি। আমরা মা খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরষ্কার পেয়েছেন আজ। আমি আজই অধিনায়কত্ব পেলাম। মা ও মেয়ে আমরা একদিনেই খুশির সংবাদ পেলাম। এটা আমার অনেক ভালো লাগছে। পরিবারের জন্যও অনেক সৌভাগ্যের।
জাগো নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।আফঈদা: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস