জাতীয়

বার বার আকুতি জানালেও ৩৯৬ যাত্রীকে পানি দেয়নি ভারতের বিমানবন্দর

ভারতের নাগপুরে দুবাইগামী ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ ও যাত্রী ভোগান্তির অভিযোগ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তি এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

Advertisement

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-দুবাই রুটের নির্ধারিত ফ্লাইট বিজি ৩৪৭ ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৮টা ৪০ মিনিটে ৩৯৬ জন যাত্রী ও ২২ টন কার্গো নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটিতে ২ জন বৈমানিক, ১০ জন কেবিন ক্রু এবং ৩৯৬ জন যাত্রী ছিল।

যাত্রাপথে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের নাগপুর শহর পার হওয়ার সময় ক্যাপ্টেন পেছনের কার্গো কোম্পার্টমেন্ট থেকে ককপিটে ফায়ার সতর্কীকরণ সংকেত পান। এসময় যাত্রীদের নৈশভোজ পরিবেশন করা হচ্ছিল। তখন ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং উড়োজাহাজ পরিচালনার দিক নির্দেশানুযায়ী নিকটবর্তী ভারতের নাগপুরের ড. বাবা সাহেব আমবেদকা বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৭ মিনিটে নিরাপদে অবতরণ করেন।

বৈমানিক নাগপুরের বিমান অবতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরই সব যাত্রীকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাগপুরে অবতরণের সিদ্ধান্তটি ইন-ফ্লাইট ঘোষণার মাধ্যমে জানান। ফ্লাইটটি নাগপুরে অবতরণের পর সব যাত্রীকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়। ৩৯৬ জন যাত্রী এবং ১২ ক্রুসহ মোট ৪০৮ জনকে বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি বাসে করে উড়োজাহাজটি থেকে আনুমানিক আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন

৪০৮ যাত্রী-ক্রু নিয়ে ভারতে বাংলাদেশ বিমানের জরুরি অবতরণ বিমান টিকিটে দুর্বৃত্তপনা অনুসন্ধান করছি: স্বরাষ্ট্র সচিব

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বেশি সময় ওই ৪০৮ জনকে বিমানবন্দর টার্মিনালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। এসময় পানি ও টয়লেট সুবিধার জন্য যাত্রীরা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা অনুমতির আনুষ্ঠানিকতার প্রসঙ্গ তুলে তা দিতে বিরত থাকে। এতে করে বিশেষভাবে বৃদ্ধ ও নারী যাত্রীরা সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। পরবর্তীতে রাত ১টায় টার্মিনালে যাত্রীদের লাউঞ্জে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল এর মাধ্যমে যাত্রীদের সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং সেই সঙ্গে আশ্বস্ত করা হয় যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের সুবিধার্থে সব বিষয়ের যাবতীয় খরচাদি বহন করবে। নাগপুর কর্তৃপক্ষ অবহিত করে, এই বিপুল সংখ্যক খাবার প্রস্তুতের জন্য তাদের ৩-৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন।

বোয়িং ৭৭৭ এর মতো এত বড় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ এই বিমানবন্দরে নিয়মিত চলাচল করে না। বিমানের যাত্রীদের হোটেলে পাঠানের জন্য অনুরোধ করা হলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের অস্থায়ী ল্যান্ডিং পারমিট দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। এ কারণে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের টার্মিনালেই থাকতে হয়।

Advertisement

যাত্রীদের দেখাশোনা করার জন্য বিমানের দিল্লিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজারকে বলা হলে তিনি সেখানে ইনডিগো এয়ার-এ করে ৯টা ১৫ মিনিটে নাগপুরে পৌঁছান। আনুমানিক ভোর ৩টার দিকে যাত্রীদের পানি সরবরাহ করা হয়। সকাল ৭ টার দিকে পানি ও চা দেওয়া হয় এবং সকাল সাড়ে ১০টায় নাশতা পরিবেশন করা হয়। নাগপুর ক্যাটারিংয়ের সীমিত সক্ষমতা থাকার কারণে নাশতা দিতে সময় বেশি লেগেছে।

বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম উড়োজাহাজের সব কার্গো ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহৃত হওয়ায় উক্ত উড়োজাহাজ দ্বারা যাত্রীদের দুবাইতে পরিবহন সম্ভব নয়-এই মর্মে মতামত দেন।

সেই মোতাবেক বিমান ঢাকা অপারেশনস কন্ট্রোল উদ্ধারকারী ফ্লাইটের পরিকল্পনা হাতে নেয়, যা ঢাকা থেকে বিজি১২৬ (দোহা-চট্টগ্রাম-ঢাকা) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে নামার পর সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে যাত্রার সময় পরিকল্পনা করা হয়।

ভারতের প্রয়োজনীয় অনুমতিপ্রাপ্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে নাগপুরে অবতরণ করে।

নাগপুর বিমানবন্দর রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অবগত হয়ে নাগপুরে অবতরণের পরপরই ওই যাত্রীদের উদ্ধারের ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেন অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বিমানে আসন গ্রহণ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীদের ব্যাগেজবহনকারী কনটেনারসমূহ উদ্ধারকারী ফ্লাইটে লোড করার নির্দেশনা দেন।

যাত্রীরা উড়োজাহাজে আসন গ্রহণ করলেও নাগপুর একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর হওয়ায় বৃহদকার উড়োজাহাজের ব্যাগেজ কন্টেনার লোড করার জন্য শুধুমাত্র একটি যন্ত্র এবং অপর্যাপ্ত কন্টেনার ট্রলির কারণে কল্পনাতীত সময়ক্ষেপণের পর কন্টেনার লোডিং সমাপ্ত হয়। এরই মধ্যে রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় CAAB কর্তৃক অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি নাগপুর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং নিরাপদে দুবাইতে অবতরণ করে। নাগপুর বিমানবন্দরে অপেক্ষাকালীন সময়ে যাত্রীদের দুপুরের খাবার উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে পরিবেশন করা হয়। উড্ডয়নের পর যাত্রীদের জন্য রাতের খাবারও পরিবেশিত হয়।

বিমানের বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রীদের দুর্ভোগের সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ভারতের নাগপুর একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের ধারণ ক্ষমতা সীমিত।

ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরাপত্তা অনুমতির দীর্ঘ সূত্রতার কারণে যাত্রীদের টার্মিনালে না নিয়ে বহু সময় বাসে অবস্থানের কারণে পানি এবং টয়লেটের ব্যবস্থা থেকে যাত্রীরা বঞ্চিত হন।

ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিমানের ওই যাত্রীদের অস্থায়ী অবতরণের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি। ফলে বাধ্য হয়েই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের হোটেলে না পাঠিয়ে টার্মিনালে অপেক্ষমাণ রাখতে বাধ্য হয়।

ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ৩৯৬ জন যাত্রীর খাদ্য প্রস্তুতে অন্যান্য বিমানবন্দর সমূহের তুলনায় বেশি সময় গ্রহণ করে। ভারতের নাগপুর বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট এর স্বল্পতার জন্য যাত্রীদের ব্যাগেজবাহী কন্টেনার লোডিং এ দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে। ফলে বিমানবন্দর বন্ধের পূর্বে উড্ডয়ন সম্ভব হয়নি। টার্মিনালের অভ্যন্তরে যাত্রী লাউঞ্জে বিমানের দিল্লির স্টেশন ম্যানেজার প্রবেশের পাশ ইস্যুতে নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করায় যাত্রীদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।

ভারতের স্থানীয় বিধিনিষেধ এবং নাগপুর বিমানবন্দরের সীমাবদ্ধতার কারণে উপরোল্লিখিত উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

স্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত প্রোপাগান্ডার বিষয়ে প্রতিবাদ প্রসঙ্গেএয়ারক্রাফটের ভেতরে ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ থাকার পরও নাগপুরের ওই উদ্ভূত পরিস্থিতি ব্যবহার করে বর্তমান সরকার এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে বিব্রত করার জন্য একজন নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী এই ফ্লাইটের ভেতরে যাত্রী সাধারণের প্রতি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে এবং ভিডিও ধারণ করে স্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচার করে। উক্ত যাত্রীদ্বয় ফ্লাইটে ক্রমাগত উসকানিমূলক বক্তব্য দিলেও অন্যান্য যাত্রীরা তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি এবং ধৈর্য নিয়ে ফ্লাইটে অবস্থান করে কর্মরত ক্রুদের সহযোগিতা করে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের ধৈর্য ধারণ এবং ফ্লাইটে ক্রুদের সহায়তা করার জন্য তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং সঙ্গে সঙ্গে উল্লিখিত প্রোপাগান্ডার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

সর্বোপরি নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত পরিস্থিতির কারণে যাত্রীদের সঙ্গে সংঘটিত হওয়া অসুবিধাসমূহের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।

এমএমএ/এমআইএইচএস