‘দেশে শিল্পখাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে বিনিয়োগ কমবে, বাড়বে আমদানি নির্ভরতা। এতে চাপে পড়বে দেশের অর্থনীতি। আবার দেশের ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিল্পখাতকে টিকিয়ে রাখার কোনো চেষ্টা দৃশ্যমান নয়।’
Advertisement
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ও ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ।
তিনি বলেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জিং সময়ে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হলে উৎপাদনমুখী খাতে পণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। এতে করে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। নতুন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক খাতে নতুন করে আমদানি নির্ভরতা বাড়বে। এতে করে আর্থিক খাতের ওপর চাপ পড়বে। কারণ আমদানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রা বেশি লাগবে। আবার গ্যাসের দাম বাড়লে অনেক শিল্প বন্ধ হবে। সেটি হলে মন্দ ঋণ বাড়বে।
Advertisement
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (বিসিআই)-এর সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, সস্তা গ্যাসের কারণে দেশে শিল্পকারখানা হয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ব্যাংকে সুদের হার বেশি। এনবিআরেও অন্য সমস্যা আছে। এদিকে গ্যাসের দাম বাড়তি। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছে না সরকার।
তিনি বলেন, সরকার নতুন শিল্পের জন্য ১৫০ শতাংশ এবং সম্প্রসারণ শিল্পের জন্য ৫০ শতাংশ গ্যাস দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। আমরা আর কেউ শিল্প করতে চাই না। তবে বর্তমান শিল্পকে সহায়তা করবেন না এটা হতে পারে না। দেশের অর্থনীতি ধরে রাখতে হলে গ্যাসের দাম বর্তমানের চেয়ে কমানো দরকার।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গ্যাসের এখন যে দাম আছে সেটি কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। কমিশন খাওয়ায় জন্য স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনার জন্য অস্থির ছিলেন বিগত সরকারের লোকজন। তারা বিদেশে বসে এখনো কমিশন খাচ্ছে।
আরও পড়ুন ‘এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই’ কোম্পানি পর্যায়ে গ্যাস কেনাবেচা হবে মিটারে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের হতাশা যৌক্তিকতিনি বলেন, গ্যাসের দাম কমানো না গেলে শিল্প থাকবে না। আসলে আমরা ফেঁসে গেছি।
Advertisement
বিটিএমএ সভাপতি আরও বলেন, কিছু ব্যাংককে টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ ব্যাংকগুলো লুট হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে টাকা দেওয়া হলেও শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কোনো মনোযোগ নেই। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৮ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমাদের চলতি মূলধন অর্ধেক কমে গেছে।
তিনি বলেন, দেশে এতগুলো চিনিকল থাকতেও পাকিস্তান থেকে চিনি আমদানি হচ্ছে। এটা লজ্জাজনক। এতে কিন্তু আমাদের কর্মসংস্থান হবে না। প্রতিদিন একটু একটু করে বিপদ বাড়ছে।
ফরেন চেম্বারের সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবেন সেটি তারাই নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশে আসার জন্য কেউ বসে নেই। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাবনা সেটা দেখলে মনে হয় অর্থনীতি ও শিল্পকে কীভাবে মারা যায় তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গ্যাস নিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে।
ইউরোচেমের সভাপতি নুরিয়া লোপেজ বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবটি বৈষম্যমূলক। এটি হলে কেউ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসবে না। তাতে এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এনার্জি বাজার উন্মুক্ত করে দেন। ইউরোপীয় কোম্পানি বিনিয়োগ করতে এখানে আগ্রহী।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত দুই বছর আগে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর সংকট বেড়েছে। বর্তমানে শিল্পায়নে বড় সমস্যা গ্যাস সংকট। তিনি বলেন, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি যেন লোক দেখানো গণশুনানি না হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি রয়েছে, সেখানে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা চেষ্টা করছি গ্যাস-বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে।
সেমিনারে বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হোসাইনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এনএস/ইএ/জিকেএস