শেরপুরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কলা চাষের ব্যাপক ভাবে বেড়েছে। এখানকার পাহাড়ি ও উর্বর মাটি কলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এককালীন ফলন হলেও কৃষকেরা কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে শ্রীবরদী উপজেলায় কলা চাষ ব্যাপকহারে বেড়েছে।
Advertisement
উপজেলার কলাকান্দা চৌকিদার বাড়ি বাজারে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেচাকেনা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব কলা দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। যা এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বাজারে প্রতিদিনই পাইকারি ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। দেশের অন্তত ২০ জেলার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কলা নিয়ে যান। স্থানীয় ব্যবসায়ী রশিদ মিয়া বলেন, ‘শেরপুরের কলার চাহিদা অনেক বেশি। এখানকার কলার স্বাদ ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় পাইকারি ক্রেতারা নিয়মিত আসছেন।’
অন্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে। জমি তৈরির পর প্রথম দফায় চারা রোপণ করলেই কয়েক মাসের মধ্যে ফলন আসে। এরপর নিয়মিত পরিচর্যা করলে একই জমিতে একাধিকবার ফলন পাওয়া যায়। এ কারণেই ধান কিংবা অন্য শস্য বাদ দিয়ে সীমান্তের অনেক কৃষক এখন কলা চাষে মনোযোগ দিচ্ছেন।
Advertisement
স্থানীয় কৃষক পারভেজ বলেন, ‘আগে ধান চাষ করতাম কিন্তু এতে লাভ কম হতো। কলার ফলন দ্রুত আসে। বাজারও ভালো। তাই এখন পুরো জমিতেই কলার আবাদ করছি।’
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর শ্রীবরদী উপজেলায় প্রায় ৩২০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে এ অঞ্চলে কলা চাষ হয়েছিল প্রায় ১৭০ হেক্টর। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদন বাড়ার মূল কারণ হলো কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি, লাভজনক বাজার ব্যবস্থা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত পরামর্শ।
আরও পড়ুনরিপনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সবজি চাষে সফলতাব্রোকলি চাষে সফল মিরসরাইয়ের কৃষি উদ্যোক্তা মামুনউপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি একরে প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কলা গাছ লাগানো সম্ভব। যা থেকে গড়ে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ করা যায়। আধুনিক চাষপদ্ধতি ও ভালো পরিচর্যার মাধ্যমে একজন কৃষক একরপ্রতি ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আফরিন বলেন, ‘কলা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা ব্যাপক ভাবে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। যাতে উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়।’
Advertisement
সীমান্তবর্তী এসব অঞ্চলে কলা চাষ স্থানীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একদিকে কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে; অন্যদিকে বাজারকেন্দ্রিক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন, পাইকারি বেচাকেনা, শ্রমিকসহ বিভিন্ন খাতেও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তবে কলা চাষের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, রোগবালাই দমনের কার্যকর ব্যবস্থা এবং আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে কলা চাষ আরও প্রসারিত হবে।
স্থানীয়দের মতে, সরকারি সহায়তা ও উন্নত চাষ পদ্ধতি নিশ্চিত করা গেলে শেরপুরের সীমান্তবর্তী অঞ্চল দেশের অন্যতম প্রধান কলা উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
ইমরান হাসান রাব্বী/এসইউ/জেআইএম